ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘ছেলের আত্মা এবার যদি একটু শান্তি পায়’

বরগুনা প্রতিনিধি
🕐 ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০২, ২০১৯

বরগুনা প্রকাশ্য দিবালোকে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার শিকার রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ। তিনি জানিয়েছেন, আমার ছেলেকে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবর শুনে আমার খুব ভালো লাগছে।

এ সময় তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত দিনের পরিশ্রম আজ সার্থক হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, যার নির্দেশে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরই প্রশাসন তৎপর হয়েছে। তারা রাত-দিন কাজ করে আসামিদের ধরেছে। গত রাতে নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, এতে আমার ছেলের আত্মা যদি একটু শান্তি পায়।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ আরো বলেন, মিডিয়া কর্মীদের আমি ধন্যবাদ জানাই। তাদের প্রচার আসামিদের ধরতে সহায়তা করেছে। এই আসামিরা কারা, তারা কাদের ছত্রছায়ায় চলে এটা গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্ত করে বের করে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে বরগুনার পুরাকাটা এলাকায় মঙ্গলবার ভোররাতে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

নিহত নয়ন বন্ড বরগুনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কলেজ রোড এলাকার মৃত মো. আবুবক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি।

পুলিশ জানায়, ভোররাতে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করতে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়নের পুরাকাটা নামক এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। পরে পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়।

গোলাগুলির এক পর্যায়ে নয়ন বন্ড বাহিনী পিছু হঁটলে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি শর্টগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নয়নের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা রিফাতকে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়। এ সময় বারবার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

এক পর্যায়ে গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিফাত মারা যান।

এ ঘটনায় পরের দিন ১২ জন আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা করেন তার বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ। মামলায় পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন (২৫) (বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন)। বাকি আসামিরা হলেন- মো. রিফাত ফরাজী (২৩), মো. রিশান ফরাজী (২০), চন্দন (২১), মো. মুসা, মো. রাব্বি আকন (১৯), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রায়হান (১৯), মো. হাসান (১৯), রিফাত (২০), অলি (২২) ও টিকটক হৃদয় (২১)।

এরই মধ্যে মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দন, ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান, ১১ নম্বর আসামি অলি ও ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তানভীর, নাজমুল হাসান, মো. সাগর ও কামরুর হাসান সাইমুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।

 
Electronic Paper