ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জলবায়ু পরিবর্তনে স্বাস্থ্যঝুঁকি

মোতাহার হোসেন
🕐 ৯:৩৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ০১, ২০১৯

বাংলাদেশ ছয়ঋতুর দেশ হলেও বাস্তবে এখন আর ছয়ঋতু অনুভব করা যায় না। শীত ঋতুতে বেশির ভাগ দিনেই রোদের তীব্রতা থাকে গ্রীষ্মকালীন মাত্রায়। ঠিক একইভাবে গ্রীষ্মে কখনো কখনো তুমুল বৃষ্টি এসে ধুয়ে দেয় পথঘাট। আবার কখনো শিলা বৃষ্টি, প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় এলোমেলো করে দেয় সব কিছু। আবার কখনো কখনো প্রকৃতি রুদ্রমূর্তি ধারণ করে।

অবশ্য অন্যান্য ঋতুতেও দেখা দিচ্ছে নানান সমস্যা। মূলত প্রাকৃতিক ঋতুচক্রের ভারসাম্য ব্যাহত হওয়ার মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। আর জলবায়ুর এই পরিবর্তন মোটেও আমাদের জন্য সুখকর নয়। ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে পৃথিবীজুড়ে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়, দায়ী বিশ্বের শিল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহ। অথচ এ কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এলোমেলো আচরণ করছে প্রকৃতি। সে প্রভাবের সরাসরি ক্ষতির কারণে দেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রকম নিত্য-নতুন রোগে। এ কারণে দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা-উপজেলার নারী, শিশু, বৃদ্ধরা বেশি হারে রোগাক্রান্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনিসেপ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের ১ কোটি ৯০ লাখ শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এর মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা-উপজেলার শিশুরা। একই কারণে খুব সহজেই নানা রকম ক্ষতিকারক উপাদান প্রবেশ করছে ফসল ও খাদ্যে। আবার এরও কুফল ভয়ঙ্কর আকারে দেখা দিচ্ছে মানুষের শরীরে। অল্প বয়সেই বাড়ছে অসুস্থতা। কোনো ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যাধি সঙ্গে নিয়ে জন্ম নিচ্ছে নবজাতক। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধানত দুভাবে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানুষের শরীরে। প্রথমত, সরাসরি আবহাওয়ার প্রভাব। দ্বিতীয়ত, খাবারের পুষ্টিগুণ হ্রাস ও ক্ষতিকর উপাদানের প্রবেশ ঘটছে।

অধিক মাত্রায় কার্বন নির্গমণের ফলে উত্তপ্ত হচ্ছে বায়ুমণ্ডল। এ কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। সঙ্গে বেড়ে চলছে কাবর্ন ডাই অক্সসাইড আর নাইট্রাস অক্সসাইডের পরিমাণ। আর কমছে অক্সিজেনের পরিমাণও। শুধু তাই নয় বাতাসে অতিমাত্রায় কার্বন নির্গমনের কারণে হিমালয়সহ অন্যন্য বরফ বৃষ্টিত পাহাড়ের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, বাড়ছে সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা।

আবার জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের অন্যান্য কয়েকটি দেশের শহরের মতো ঢাকার বাতাসকে দূষিত করছে প্রতিনিয়ত। তাই শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে নিয়মিত এলোমেলো হচ্ছে এই অনুপাত। যা শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, চোখ জ্বালা পোড়া, গ্যাস্ট্রিক, আলসারজনিত নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের হার। হ্রাস পাচ্ছে মৌসুমি বৃষ্টিপাত। বৃদ্ধি পাচ্ছে অসময়ে ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতা। এতে কোনো সংকেত ছাড়াই মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ভাইরাস ও ছোঁয়াচে রোগে। অনেক ক্ষেত্রে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণের প্রভাব পড়ে পানি ও মাটিতে। যা মানুষ বা যে কোনো প্রাণীর জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা ডেকে আনতে পারে।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত হওয়ার সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে মাটির লবণাক্ততা। এই প্রভাব সরাসরি ফসলে পড়ছে। মাটির গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার কারণে কমে যাচ্ছে ফল, শাক-সবজির পুষ্টিগুণ। অনেক সময় এসব খাবারে যুক্ত হচ্ছে ক্ষতিকর উপাদান। যার কুফল আকারে মানুষের শরীরে জন্ম নিচ্ছে রোগব্যাধি। এমন কি সৃষ্টি হতে পারে ডায়াবেটিসের মতো অসুখও। আর হ্রাস পাচ্ছে মানুষের শারীরিক ক্ষমতা। সবমিলিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগব্যাধির জন্ম হচ্ছে বাংলাদেশে।
শ্বাসকষ্ট, হিটস্ট্রোকের মতো রোগও এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ আমাদের এই অঞ্চলে সমুদ্র উপকূলের মানুষ নদীভাঙনের মুখে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। তার কারণে এসব মানুষের মধ্যে দেখা দিচ্ছে হতাশাজনিত নানা মানসিক ব্যাধি, মাস সাইকোসিস ইলনেস। উপকূলীয় এলাকায় বেশ আগে থেকেই রয়েছে চর্মরোগের উৎপাত। রয়েছে রক্তশূন্যতা, ডায়রিয়া, কলেরার মতো পরিচিত রোগও।

পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা। নবজাতক জন্ম নিচ্ছে রাগব্যাধি সঙ্গে নিয়ে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত আবিষ্কার হচ্ছে মশা, পশুপাখিবাহিত মারাত্মক রোগব্যাধি।

এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে কার্যকর এবং উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে দেশের মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জনসচেতনতা মূলক নিয়মিত কর্মসূচি চালিয়ে মানুষকে কিছুটা হলেও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে লাগব করতে পারে।

মোতাহার হোসেন : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ
ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম (বিসিজেএফ)

 
Electronic Paper