ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে একদিন

অনিক আহমেদ
🕐 ২:০৭ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০১৯

সেদিন ছিল সেমিস্টার ফাইনালের শেষ পরীক্ষা। দীর্ঘ এক মাসের পরীক্ষার ক্লান্তিতে অবসাদগ্রস্ত মনের মাঝে সতেজতা ফিরিয়ে আনতে একটা ট্যুর দরকার ছিল। তাই পরীক্ষা শেষ করে বাসায় ফেরার পথে কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেই কোথাও ঘুরতে যাবো। তড়িৎ সিদ্ধান্তে স্থান নির্ধারণ করলাম মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। যেই ভাবা সেই কাজ, তড়িঘড়ি করে বন্ধুর প্রাইভেটকার যোগে আমরা সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন বের হয়ে পড়লাম জমিদার বাড়ির উদ্দেশে।

 

সাভার থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কালামপুর বাইপাস দিয়ে মির্জাপুর রোডে এগিয়ে চললাম। আঁকাবাঁকা রাস্তার দুপাশে বিশাল বিশাল গাছের সারির অপরূপ সৌন্দর্য বিমোহিত করছিল। কিছুদূর যেতেই আমরা সম্পূর্ণ এক গ্রাম্য আবহ পেলাম, যার নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছিল কল্পনাতীত।

উনিশ শতকের এক অপূর্ব নিদর্শন বালিয়াটি জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা গোবিন্দ রাম সাহা। পুরো জমিদার বাড়িটি ৫.৮৮ একর জমির ওপর বিস্তৃত। ভেতরে দায়িত্বরত একজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, গোবিন্দ রাম সাহা ছিলেন তখনকার সময় একজন বড় মাপের লবণ ব্যবসায়ী। তার চার পুত্র দধী রাম, পন্ডিত রাম, আনন্দ রাম ও গোলাপ রামই সম্ভবত নির্মাণ করেন বালিয়াটি প্রাসাদ।

প্রাচীর দিয়ে ঘেরা পুরো জমিদার বাড়িতে রয়েছে বিভিন্ন পরিমাপ ও আকৃতির দুশতাধিক কোঠা। উত্তর দিকে রয়েছে শান বাঁধানো ছয়ঘাট বিশিষ্ট বিশাল একটি পুকুর। এছাড়া ভেতরে রয়েছে সাতটি খণ্ডে বিভক্ত বিভিন্ন স্থাপনা, স্নানাগার, প্রক্ষালন কক্ষ প্রভৃতি। স্থাপনাগুলোর আকর্ষণীয় দিক হলো সারিবদ্ধ বিশাল আকৃতির করিনথিয়াম থাম, লোহার বিম, ঢালাই লোহার পেঁচানো সিঁড়ি, জানালায় রঙিন কাচ, কক্ষের অভ্যন্তরে বিশাল আকৃতির বেলজিয়াম আয়না, কারুকার্যখচিত দেয়াল ও মেঝে, ঝাড়বাতি ইত্যাদি। প্রাসাদটি বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর কর্তৃক ১৯৬৮ সালের এন্টিকুইটি অ্যাক্টের ১৪নং ধারার আওতায় সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত হচ্ছে।

প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ছয় বন্ধু মিলে জমিদার বাড়ির সব স্থান ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জানলাম। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে বিশেষ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করলাম। রওনা করার আগে সবারই একটা ইচ্ছা ছিল জমিদার বাড়ির বিশাল পুকুরে অবগাহনের মাধ্যমে মনের খোরাক জোগাবো। কিন্তু বিকালের হালকা রোদকে বিদায় করে যখন গোধূলি লগ্ন হাজির হলো তখন আমাদের আর কিছু করার ছিল না।

 
Electronic Paper