ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব

শাহজাহান আলম সাজু

ওয়ালিয়ার রহমান
🕐 ৯:২১ অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০১৯

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব হিসেবে টানা চতুর্থ মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। তিনি স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকও। শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি, অবসর সুবিধা, কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন খোলা কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়ালিয়ার রহমান

টানা চতুর্থ মেয়াদে কল্যাণ ট্রাস্টে নিয়োগ পেলেন...
নিঃসন্দেহে এটা আনন্দ ও গর্বের। তবে কাজটি যেহেতু চ্যালেঞ্জিং তাই দায়িত্বও অনেক বেশি। পরিশ্রমও অনেক বেশি করতে হবে। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

শিক্ষক নেতা হিসেবে শিক্ষক সমাজের কাছে আস্থার বিষয়টা জরুরি। আপনার কী মনে হয়?
আমি এদেশের শিক্ষার জন্য, শিক্ষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছি। ফলে শিক্ষক সমাজের অকৃত্রিম ভালোবাসাও পেয়েছি। এটাই আমার এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের জন্য আমি প্রাণাধিক চেষ্টা করেছি এবং করছি। শিক্ষাবান্ধব শেখ হাসিনা সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তির ফলে বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি, ৫% ইনক্রিমেন্ট, ২০% মহার্ঘ ভাতা প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ এবং আমার বিশেষ ভূমিকা ছিল। এসব কারণে শিক্ষক সমাজ আমাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। আমাকে তারা ‘শিক্ষক বন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাঁদার হার চার শতাংশ বাড়িয়েছে...
বেসরকারি শিক্ষকরা সারা জীবন শিক্ষকতা করে অবসর গ্রহণের সময় শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতেন। তাদের পেনশনের কোনো সুবিধা ছিল না। জীবনের শেষপ্রান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তাদের হাতে তসবি, লাঠি, জায়নামাজ, ছাতা তুলে দেওয়া হতো। এখন আর মানুষ গড়ার কারিগরদের শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয় না। মোটা অংকের টাকা নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বাড়ি ফেরেন।

শিক্ষকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ড চালু করা হয়েছে। বেতনের একটি অংশ প্রতিমাসে তাদের কল্যাণ ও অবসর ফান্ডে জমা রাখা হয়। নিয়মানুযায়ী অবসর গ্রহণের পর এই দুই সংস্থা থেকে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়। কল্যাণ এবং অবসর ফান্ডের জন্য যে পরিমাণ চাঁদা বেতন থেকে কেটে রাখা হয় তার প্রায় ১৫/১৬ গুণ বেশি তারা পেয়ে থাকেন। এই অতিরিক্ত টাকা জোগান দিতে সরকারের দারস্থ হতে হয়। জাতীয় বেতন স্কেলে শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্ধিত এই স্কেলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের পাওনা পরিশোধ অসম্ভব হয়ে পড়ে। টাকার অভাবে প্রায় পঁচাত্তর হাজার আবেদন পড়ে থাকে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের প্রতি দয়াশীল হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সরকার থেকে ১৬২৭ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং স্থায়ীভাবে এই সংকট নিরসনের লক্ষ্যে চাঁদার পরিমাণ কল্যাণ ট্রাস্টে ২% এবং অবসর বোর্ডে ২% বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়। কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের সভায় শিক্ষক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। একই সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীদের বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট ও ২০% মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এর ফলে প্রতি বছরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ৫% হারে বাড়তেই থাকবে এবং এই বর্ধিত বেতনের হারে তারা কল্যাণ ও অবসর সুবিধা পাবেন। ফলে তাদের আর্থিক সুবিধা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা পেতে বিলম্ব হয়, এর কারণ কী?
কল্যাণ এবং অবসর সুবিধা বাবদ একজন শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিমাসে যে পরিমাণ চাঁদা প্রদান করেন তাদের পাওনা পরিশোধ করতে এর দ্বিগুণ টাকার প্রয়োজন হয়। এই অতিরিক্ত টাকা জোগানের ব্যবস্থা না থাকায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ ও অবসর সুবিধা পেতে বিলম্ব হয়। এই সংকট সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী গত তিন অর্থবছরে কল্যাণ ও অবসর বোর্ডে ১৬২৭ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ায় প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের আবেদন নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। তবে এটা সাময়িক ব্যবস্থা। আর্থিক সংকট নিরসনের জন্য অতিরিক্ত ৪% চাঁদা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীদের বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট প্রদান করায় আর্থিক সংকট রয়েই গেল।

কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম সম্পর্কে বলুন।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ব্যবস্থা প্রচলনের পাশাপাশি কল্যাণ সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সে উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রক্ষিতে ১৯৯০ সালে কল্যাণ ট্রাস্ট চালু করা হয়। কিন্তু মাত্র ছয় মাস চালু থাকার পর ১৯৯১ সালে কল্যাণ ট্রাস্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বিএনপি যতদিন ক্ষমতায় ছিল কল্যাণ ট্রাস্ট আর চালু করা হয়নি। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় কল্যাণ ট্রাস্ট চালু করেন।

বর্তমানে কল্যাণ ট্রাস্টের আর্থিক সংকটের অন্যতম কারণ হলো বিএনপি সরকারের সময়ে (৯১-৯৬) কল্যাণ ট্রাস্ট বন্ধ রাখা। ফলে ওই বছর কল্যাণ ফান্ডে শিক্ষকদের চাঁদার টাকা জমা হয়নি। গত ১৭ বছরে বিপুল পরিমাণ টাকা থেকে বঞ্চিত হয় ট্রাস্ট। এছাড়াও কল্যাণ ট্রাস্টের আইন অনুযায়ী সর্বশেষ স্কেল অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধা প্রদান করতে হয়। জাতীয় পে-স্কেল পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বেতন ১০০% বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পরবর্তীতে বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট প্রদান করায় নতুন স্কেলে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করতে গিয়ে কল্যাণ ট্রাস্টকে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়।

তবে এখন আর বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জীবন শেষে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয় না। একজন কলেজ, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ৫০ লাখ এবং হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রায় ৩০-৩২ লাখ টাকা পাচ্ছেন। আগামী ১০ বছর পর যারা অবসরে যাবেন তারা বর্তমান সুবিধার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সুবিধা পাবেন।

শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কোনো পরিকল্পনা...
মর্যাদার বিষয়টির সঙ্গে বেতনের বিষয়টিও জড়িত। দেশে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান ছিল তা এখন অনেকটা কমে এসেছে। বিশেষ করে জাতীয় বেতন স্কেলে বেসরকারি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং সর্বশেষ বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষকরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হয়েছেন।

এখন বাড়ি ভাড়া, উৎসব ভাতা, মেডিকেল ভাতার যে বৈষম্য তাও আস্তে আস্তে কমে আসবে। শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। সরকারও এ ব্যাপারে নমনীয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাতেই শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ হবে এ প্রত্যাশা সবার। সেটা হলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটির অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি, শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসান ঘটবে।

কল্যাণ ট্রাস্ট নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
কল্যাণ ট্রাস্টের সেবাকে আরও গতিশীল করা এবং ফান্ড নিরসনের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে আয়বর্ধক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে যাওয়ার ৩-৪ মাসের মধ্যেই যাতে অনলাইন ব্যবস্থায় নিজ বাড়িতে বসেই কল্যাণ সুবিধার টাকা পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বিশেষ করে নতুন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কল্যাণ ট্রাস্টে কোনো ধরনের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা বরদাশত করা হয় না। এটি এখন সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত ১০০% সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে ১৮ বছরে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে মাত্র ২৭৯ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১০ বছরে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
খোলা কাগজ পরিবারের জন্য শুভকামনা

 

 
Electronic Paper