ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উখিয়া-টেকনাফের দৃশ্যপটে ছন্দপতন

ছাইফুল ইসলাম মাছুম
🕐 ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৯, ২০১৯

বাংলাদেশের অন্য দশটি জনপদের মতো সবুজ আর প্রাণ-প্রকৃতিতে ভরপুর ছিল কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের জনপদ। মানুষের পুকুর ভরা মাছ ছিল, গোলা ভরা ধান ছিল, স্থানীয় মানুষের মনে ছিল সুখ। নয়নাভিরাম এই জনপদে বার্মা থেকে রোহিঙ্গাদের আগমনের মধ্যদিয়ে সেই দৃশ্যপট যেন ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকে।

১৯৭৮ সালে থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। এরপর ধাপে ধাপে এলেও, লাখ লাখ রোহিঙ্গার বড় স্রোত আসে ২০১৭ সালে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী উখিয়া টেকনাফে অবস্থিত ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ।

প্লাবনের মতো এ রোহিঙ্গা স্রোতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উপকূলীয় জনপদ টেকনাফ উখিয়া। সরেজমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এলাকার বিপর্যয় চিত্রই চোখে পড়েছে। সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে তারা বসতি গড়ে তুলেছে। নষ্ট করেছে ফসলি জমি, সমতল ও পাহাড়। এত মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে ক্যাম্পগুলোতে হাজার হাজার টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। এতে পানির লেভেল অনেক নিচে নেমে গেছে, শুকাতে শুরু করেছে খাল বিল জলাশয়। এছাড়া কম মজুরিতে শ্রম দিয়ে স্থানীয় শ্রমবাজারও দখল করে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। এতে স্থানীয় মানুষ পড়েছে বিপাকে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী খোলা কাগজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের চাপে বনাঞ্চল উজাড় হয়েছে, বাতাসে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, ধুলাবালি বেড়ে গেছে। আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। পানির লেভেল নিচে নেমে যাওয়ায় আমরা খাওয়ার পানি পাচ্ছি না। স্থানীয় শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে না, অর্ধেক মজুরিতে স্থানীয় শ্রমবাজার বাগিয়ে নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা এনজিওর কাছ থেকে ত্রাণ পাচ্ছে রেশন পাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় দরিদ্র মানুষ তা পাচ্ছে না। স্থানীয় মানুষ কাজ হারিয়েছে, জমি হারিয়েছে, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ভুগছে রোগে-শোকে।

তিনি বলেন, মানবতার কথা বলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এখন স্থানীয়রাই মানবতের জীবন যাপন করছে।

অন্যদিকে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছেন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি এনজিও। এতে আরো নানান সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে উখিয়া টেকনাফবাসীকে। এনজিও ওয়ালাদের বিলাসী গাড়ির দীর্ঘ সারিতে সকাল বিকাল তিন ঘণ্টা করে তৈরি হচ্ছে যানজট। ভারী যানবাহনে কাহিল হচ্ছে রাস্তা, ধূলিময় হয়ে উঠছে পুরো জনপদ।
রোহিঙ্গা আর এনজিওর চাপে ওই এলাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে অনেক। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের হয়ে কাজ করেন এমবিবিএস ডা. জান্নাতুল আন্দালিব মুশফি। তিনি খোলা কাগজকে জানান, ঢাকায় যে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতেন, এখানেও তেমন ভাড়া দিয়ে থাকছেন তিনি। তিনি বলেন, ঢাকার চেয়ে কুতুপালং এলাকায় নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ বেশি।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ৮টি ইউএন সংস্থা, ৪০টি আইএনজিও এবং ১০৫টি এনজিও কর্মরত রয়েছে। এছাড়া ১৫টি বিদেশি এনজিও এবং ১০টি অনিবন্ধিত এনজিও বিভিন্ন নিবন্ধিত সংস্থার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।

এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের শিক্ষাব্যবস্থায়ও। কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী খোলা কাগজকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটে কক্সবাজারের শিক্ষাব্যবস্থাও চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা এনজিওগুলোর টাকার প্রলোভনে পড়ে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে ক্যাম্পে কাজ করছে। ফলে সম্প্রতি পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে রেজাল্ট অর্ধেকে নেমে এসেছে।’

এছাড়া অপরাধপ্রবণ রোহিঙ্গাদের উৎপাতে স্থানীয়দের শান্তি বিনষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাদের গণহারে চর্মরোগ ও মরণব্যাধি এইডস স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

 

 
Electronic Paper