ফাগুন এবং প্রিয়জন
জেলী আক্তার
🕐 ৪:০২ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০১৯
অদৃশ্য শব্দটার সঙ্গে চোখের জলের কেমন জানি একটা যোগাযোগ আছে। নিস্তব্ধ রুমে ঘুটঘুটে অন্ধকার বাইরে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। সেদিন পহেলা ফাগুনের রাত একটা ফাউন্টেন পেন আর একটা ডায়েরি নিয়ে বসেছি, অনুভূতির অনুবাদ করতে। ফোনে মাত্র পাঁচ পার্সেন্ট চার্জ হয়তো কয়েক মিনিট কথা বলা যাবে। রঙ তুলির ছোঁয়ায় ইশির নামটা খুব সুন্দরভাবে ক্যানভাসে সাজিয়েছিলাম নামের পাশে দুজনের একটা ছবি, সাত দিন থেকে চেষ্টা চলছে, প্রচণ্ড খাটাখাটুনির পর রাত বারটার দিকে ছবিটা প্রস্তুত। খাবার টেবিলে যাওয়ার আগে হাত মুখ ধোয়ার উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমে গেলাম, বাইরে প্রচ- ঝড় বইছে, জানালাটা খোলা ছিল খেয়াল করিনি। আধাঘণ্টা পর রুমে এলাম একী! এত কষ্টে সাজানো ক্যানভাসটা বৃষ্টির পানিতে রং এলোমেলো অস্পষ্ট। ইশির অভিমান ভাঙাতেই ক্যানভাসটা তৈরি করা সেটাও আর হলো না।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগলো ইশি আর আমার একটা ছবি ফ্রেমে বাঁধানো ছিল দমকা হাওয়ায় সেটাও ছিটকে পড়ে গেছে। ছবিটা দেখে খুব আশ্চর্য হলাম কারণ এমনভাবে গ্লাসটা ভেঙেছে যে কেউ দেখলে অবাক হতো। দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাসছিলাম ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা ব্রিজের রেলিং আর ধানক্ষেত ঠিক মাঝামাঝি গ্লাসটা ফেটে গেছে দুই টুকরো দুই দিকে, বলতে গেলে এখন একটা ফ্রেম দুইভাবে ভাগ। সুপারগ্লু দিয়ে আবার আটকে দিলাম। তবুও কেমন জানি একটা বিশ্রী দাগ চোখ মেলে আছে।
কিছু না বলে চুপচাপ ফোনটার দিকে হাত বাড়াচ্ছিলাম এমন সময় একটা অপিরিচিত নাম্বার টাচস্ক্রিনজুড়ে। রিসিভ করলাম-
হ্যালো কে বলছেন?
-ভালো আছেন?
ইশির সঙ্গে একদিন অভিমান করে থাকলে এসএমএস ওমন করে লিখতো নয়তো ফোন করে বলতো। দশদিন থেকে দুজন কথা বলি না মনে হয় দশ যুগ হয়ে গেছে। ফোনের কথাটা শুনতেই গা শিউরে উঠলো কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগলো। চিনতে পারছি না আর পরিচিত ও কণ্ঠস্বর মনে হচ্ছে। ঝড় বৃষ্টি থাকলেও সেদিন নেটওয়ার্ক ভালো ছিল।
তবুও বাহানা করে বারবার বলছিলাম হ্যালো কে বলছেন? কারণ একটাই কণ্ঠটা স্পষ্টভাবে শোনার কেন জানি ইশির কথা মনে পড়ছিল। ওপাশ থেকে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করছে সাত পাঁচ না ভেবে প্রচ- আবেগের সুরে বলে দিলাম ইশি!!
-ওপাশ থেকে হাসির শব্দ খালামণি চিনতে পেরেছেন। মধ্যরাতে কাঁদছেন নাকি?
-খালামণি ডাক শুনে একটু থমকে গিয়েছিলাম কারণ ইশি তো খালামণি বলে না তারপর বুঝতে বাকি রইলো না বললাম না রে আম্মু মাত্র খেয়ে আসলাম। তরকারিতে প্রচণ্ড ঝাল আর অন্ধকার চোখে একটা মরিচ পোকাও পড়েছে।
আসলে ইশি হলো আমার বোনের মেয়ে, কিন্তু আমি ভেবেছিলাম প্রিয় বান্ধবী ইশি। যার সঙ্গে বন্ধুত্বটা সাত বছরের পূর্ণ হয়েও হলো না। সাত বছর আগে ফাগুন মাসেই ওর সঙ্গে পরিচয় আর সাত বছর পরের ফাগুনটা ঠিক এলো অথচ ইশির সঙ্গে কোনো রকমের যোগাযোগ নেই।
এখন ফাগুনের কথা মনে পড়লে প্রিয়জন বিয়োগের কথা মনে পড়ে।
আহ্বায়ক
এগারজন, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228