ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সৌন্দর্য হারাচ্ছে শিবপুর

নির্বিচারে কাটা হচ্ছে টিলা, নীরব প্রশাসন

মিল্টন দাস, নরসিংদী
🕐 ১০:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০১৯

আড়াই হাজারের প্রাচীন দুর্গ নগরী উয়ারী-বটেশ্বরের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। আর এ প্রত্ন অঞ্চল বিস্তৃত নরসিংদীর বেলাব, শিবপুর ও রায়পুরা উপজেলায়। প্রত্নতত্ত্বের সঙ্গে এ অঞ্চলের ছোট ছোট পাহাড় সদৃশ্য টিলার সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিন দিন পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ছে। সম্প্রতি সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাহাড়ে মাটি খেকোদের দৃষ্টি পড়েছে। শিবপুরে রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে পাহাড়ের লাল মাটি। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল পাহাড়ের লাল মাটি বিক্রি করছে বিভিন্ন সিরামিক কারখানায়। একের পর এক পাহাড় কাটা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানা যায়, শিবপুর উপজেলায় পাহাড় সদৃশ্য টিলা আছে এক হাজারেরও বেশি। বাঘাব, জয়নগর, চক্রধা ও যশোর এ চারটি ইউনিয়নে ছোট-বড় এসব পাহাড়ের অবস্থান। এগুলোর অধিকাংশের উচ্চতা ২৫-৩৫ ফুটের মধ্যে। বাঘাব ইউনিয়নে পাহাড় আছে প্রায় ২৫০টি। গত এক বছরে শুধু বাঘাব ইউনিয়নেই কাটা হয়েছে পাঁচটি পাহাড়।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, খনন যন্ত্রের সাহায্যে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এসব পাহাড় কাটা হচ্ছে। বিভিন্ন সিরামিক কারখানার পাশাপাশি কিছু মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে নিচু এলাকা ভরাটের কাজে। প্রশাসনের লোকজন এসব দেখেও দেখে না।

টাকার লোভে স্থানীয় লোকজন নিজেদের ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় কাটতে শুরু করেছেন। একটা পাহাড়ে কয়েক হাজার ট্রাক লাল মাটি পাওয়া যায়। ভেকু ও ট্রাক ভাড়া বাদে ট্রাকপ্রতি লাল মাটি বিক্রি হয় ৭০০-৮০০ টাকায়, আর ড্রাম ট্রাকপ্রতি তিন হাজার ৫০০ টাকায়। টিলার মালিক পান ট্রাকপ্রতি এক হাজার টাকা, আর ড্রাম ট্রাকপ্রতি ৫০০ টাকা। একটি টিলা কাটা হলে পাশেরটিও ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।

সরেজমিন দেখা গেছে, শিবপুর-বাঘাব আঞ্চলিক সড়কের টেকপাড়ায় সড়ক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে গত বছর কাটা একটি পাহাড়ের অর্ধেক অংশ। এর গা ঘেঁষা গলি ধরে ৫০ ফুট এগোলেই মোল্লা পরিবারের প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার ব্যক্তিগত পাহাড়। যার দুই-তৃতীয়াংশ এরই মধ্যে কাটা হয়েছে। তার মালিক খোকন মোল্লা। ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রির দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল কবির ওরফে রনি। পাশেই প্রায় ১৫ বিঘা আয়তনের ২৫-৩০ ফুট উচ্চতার একটি পাহাড়ের বেশিরভাগ অংশই কেটে ফেলা হয়েছে। পাহাড়ের যে অংশ এখনো কাটা হয়নি, তাতে বর্তমানে ১৭টি ঘর আছে।

টিলা কাটার তদারক করেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দুই মাস আগে থেকে টিলার লাল মাটি কাটা শুরু হয়েছে। তবে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির কারণে আপাতত বন্ধ আছে। রূপগঞ্জের একটি সিরামিক কারখানায় মাটি যাচ্ছে।

জানতে চাইলে রেজাউল কবির বলেন, ‘পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রির ব্যবসা আমি করছি না, করেছে কাদির মিয়া নামের আমার এক পরিচিতজন।’ নরসিংদী পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন কাজে পাহাড়-টিলা কাটার কোনো সুযোগ নেই। এটি অবশ্যই দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, পাহাড় সদৃশ্য টিলাগুলো শিবপুরের প্রাকৃতিক সম্পদ। এগুলো রক্ষায় জনসচেতনতা জরুরি। আমরা পাহাড় কাটার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কয়েকদিন আগে টিলার মাটি বহনের অপরাধে একজনকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

 
Electronic Paper