ধুনটের টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে
ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
🕐 ৮:৪১ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০১৯
ঈদকে সামনে রেখে বগুড়ার ধুনট উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই টুপি তৈরির ধুম পড়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করে টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের দরিদ্র পরিবারের হাজারো মহিলা ও স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েরা। তারা টুপি সেলাইয়ের কাজে এতটাই ব্যস্ত, কারও সঙ্গে কথা বলার সময়টুকুও নেই। গ্রামীণ মহিলাদের হাতে তৈরি করা এসব টুপি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে- সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে। কিন্তু তাদের নিপুণ হাতের তৈরি টুপি বিদেশে রপ্তানি হলেও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না এসব মহিলা কর্মীরা।
উপজেলার চৌকিবাড়ী গ্রামের গৃহবধূ নূরজাহান বেগম জানান, ছেলের বাবার একলার কামাই (রোজগার) দিয়া আগে খুব কষ্টে সংসার চালাতে হতো। কিন্তু এখন আর তেমন কষ্ট করতে হচ্ছে না। নূরজাহান বেগম ৬-৭ বছর আগে থেকে টুপি সেলাই শুরু করেছে। ঘর গৃহস্থের কাজ শেষে দিনের যেটুকু সময় পায় সেই সময়েই দৈনিক ৩-৪টা টুপি সেলাই করতে পারে। তিনি আরও জানান, টুপি বিক্রি করতে কোনো হাটবাজারে যেতে হয় না। বাড়ি থেকেই পাইকাররা এসে প্রতি সপ্তাহে টুপি কিনে নিয়ে যায়। সব খরচ বাদে তার প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়।
গৃহবধূ সোনিয়া খাতুন জানায়, আগে হাত খরচের জন্য ৫-১০ টাকা তার স্বামীর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হতো। অভাবের সংসারে তার স্বামী কোন কোনো দিন পাঁচ টাকাই দিতে পারত না। এখন টুপি সেলাই করার পর আমিও সংসারে সহযোগিতা করছি।
চালাপাড়া চৈতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী পিয়াসী আকতার ও নন্দিনী আকতার। তারা দুই বোনই লেখাপড়ার পাশাপাশি মায়ের কাছে টুপি সেলাই করার কাজ শিখেছে। তারা প্রতি মাসে ৩০টি টুপি সেলাই করতে পারে। এখন তাদের প্রতি মাসে ৬-৭শ টাকা আয় হয়। তাদের লেখাপড়ার খরচ দরিদ্র বাবা-মার কাছ থেকে আর নিতে হয় না।
শুধু নূরজাহান বেগম, সোনিয়া খাতুন, পিয়াসী ও নন্দিনী আকতারই নয়, তাদের মতো ফেরদৌসী খাতুন, রিক্তা খাতুন ও সাথী খাতুনসহ আরও অনেকেই টুপি সেলাই ও বিক্রি করে এখন বাড়তি আয় করছে।
চৌকিবাড়ী গ্রামের পাইকারি টুপি ব্যবসায়ী কামাল মিয়া জানান, প্রতি সপ্তাহে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সুতা ও ক্রুশকাটা সরবরাহ করা হয়। পরের সপ্তাহে মহিলাদের সেলাই করা টুপি কিনে আনা হয়। প্রতিটি টুপির দাম প্রকার ভেদে ২৫-১০০ টাকা পর্যন্ত।