পরমা ও প্রকৃতি
মাসুদ খান
🕐 ৪:০৫ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০১৯
তোমাকেই নিগড়িত করবার সমস্ত কৌশল
ভানুমতি ভোজবাজি সব রপ্ত করেছে মানুষ।
আর মেয়ে, নিগড়কে তুমিও নূপুর ভেবে
মাঝে মাঝে পরে ফেলছ পায়ে।
বলো মেয়ে, মন খুলে আজ বলে যাও সব
চুপচাপ শুনে যাব, প্রতিবাক্য করব না কোনো।
আমি কথা বলব মুদ্রণপ্রমাদে-ভরা খরখরে গদ্য-জবানে
প্রত্যুত্তরে তুমি বলে যাবে অনর্গল
বরফ-গলানো এক পরিস্রুত প্রকৃতি-ভাষায়
সরলসার, সুললিত চারুপদ্যে
‘নারীরূপে আসতে যদি ভবে
বুঝতে তুমি দুঃখজ্বালা তবে।
বলতে পার কোথায় তোমার থেকে
পিছিয়ে ছিলাম কখন এবং কবে?
হাজার বছর ধরে
জঞ্জাল সাফ করে
গড়েছি এই মানব সমাজ তবে।
দিনে দিনে করেছ তা জটাজটিল কাঁটাবহুল আগাছা-সংকুল।
তাই তো দিতে হচ্ছে এখন নিত্যনতুন ভুলের মাসুল
আরও অধিক ভুল।
উজিয়ে এলাম হাজার বাধা, হাজার দমন দলন
আবার বাধা, আবার দমন, আবার পদস্খলন
এমন করেই এগিয়ে গেছি, আজও আগুয়ান
ধারণ-সহন-প্রাণশক্তি প্রকৃতির সমান।
প্রকৃতি যা, এক অর্থে পরমা-ও তো তা-ই
বিভেদ ছেড়ে আমরাই এই অভেদটা শেখাই।
প্রাণকে ফোটাই। স্তন্য দিয়ে, অন্ন দিয়ে করি বিকশিত
তাপ ছায়া আর মায়া মেখে, জীবন ঘষে করি উজ্জীবিত।
একাধারে প্রজায়িনী, প্রাণপালিনী, এবং প্রশিক্ষক
অন্নদা ও স্তন্যদায়ী, প্রাণশক্তি-আয়ুর উদ্বোধক।
স্নেহশাসন, প্রীতিবাঁধন, পালনপোষণ...সবই অবিরত
সাধন করি। সর্বোপরি পালন করি ব্যবস্থাপন-ব্রত।
পরমাকুল আমর্মমূল নিজেই তো প্রকৃতি।
প্রকৃতিকেই শেখাচ্ছ আজ স্বভাব, সংস্কৃতি?
দায়িত্বজ্ঞান, রীতিনীতি, প্রেম, প্রজ্ঞা, প্রীতি?
কালে কালে ঘোর সংকট ঘুরেফিরে আসে
আজ ফের সেই দুঃসংকেত ভঙ্গুর সমাজে।
মর্দানি-ভাব দমিয়ে রেখে জাগাও নারীভাব
ভেতর-বাহির বোধন ঘটাও প্রকৃতি-স্বভাব।
জেনে রেখ, চিড়-ধরা এ সমাজ-সারাই কাজে
হন্যে হয়ে ফিরবে শেষে নারীভাবের কাছে।’
এ-নিস্তারহীন ক্রুর কাঠফাটা কঠোর রোদ্দুরে
এক মহাচ্ছায় গাছের গোড়ায় ঠেস দিয়ে
কিছুটা থতমত খেয়ে, হতভম্ব হয়ে
চুপচাপ অনুভব করে যাব প্রকৃতির এই কণ্ঠস্বর
এই পরিস্রুত ভাষার আগুন।