ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কবিতা ছাপার আগে

শফিক হাসান
🕐 ৩:২৬ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০১৯

দৈনিক টালটিবালটির সম্পাদক মিজানুল ইসলামের মেজাজ চরমে। সমস্যাটা গিলতে পারছেন না, বলতেও পারছেন না। দ্বিমুখী সংকট মোকাবেলার পন্থাও অধরা। ঘাপলাটা লাগল অফিসের কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে। নিয়োগ দেওয়ার সময় কেউই নিজেদের কবি পরিচয় জানাননি। ধীরে ধীরে স্বরূপে আবির্ভূত হতে লাগলেন জাত চেনানোর মাধ্যমে। অবশ্য আগে জানলেও এটাকে ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করা যেত না।

ঈদুল ফিতরের আগে এসব কর্মী-কবি হুমড়ি খেয়ে পড়েন ঈদ সংখ্যায় কবিতা ছাপতে হবে! সাহিত্য সম্পাদকের ভাবগতিক সুবিধার মনে না হলে সরাসরি সম্পাদকের দ্বারস্থ হন। হাতে-পায়ে কবিতা গছিয়ে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন অমুক সাহেবের সঙ্গে সাহিত্য সম্পাদকের আলগা খাতির! যে কারণে এক মাসে তার কবিতা ছাপা হয় তিনবার। অন্যদিকে তিনি নিজে সৎ মানুষ বলে কবিতা ছাপা দূরের কথা, সাহিত্য সম্পাদক পোঁছেও না!

সবার সমস্যাই কান পেতে শোনেন তিনি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সাহিত্য সম্পাদকের কাজের শর্ত ছিল অহেতুক খবরদারি করা যাবে না। সেটা তিনি করেনও না। তাই বলে অধস্তন কর্মীদের কবিতা ছাপা হওয়া, না হওয়ার মতো তুচ্ছ বিষয়েও দেনদরবার! মোটামুটি পাঁচজন কর্মী বেশি যন্ত্রণাদায়ক। এদের মধ্যে রহিম রহিমুল সবচেয়ে আগ্রাসী। প্রত্যেক সম্পাহেই নিজের কবিতা ছাপানোর পাঁয়তারা করেন। ছাপা না হলে সম্পাদকের ছোট-খাটো ভুলকে হিমালয় বানিয়ে প্রচ্ছন্ন খোঁচায় ফেসবুকে কবিতা লেখেন। তার সাংসারিক কলহ পৌঁছেছে অফিস পর্যন্ত।

গতকাল সকালে কল দিয়ে রহিম রহিমুলের স্ত্রী অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন, এ দম্পতির একটি মাত্র পুত্রসন্তান। অথচ ঈদ কেনাকাটায় কবি কিনেছেন মেয়েদের পোশাক। জানতে চাইলে স্ত্রীকে দিয়েছেন উল্টো ঝাড়ি কবি মানুষ, এমন ভুল হতেই পারে। তার কাছে ছেলেমেয়ে ভেদাভেদ নেই!

পারিবারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা সমীচীন মনে করেন না তিনি। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহে সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি কবিতা ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। রহিম রহিমুল কবিতায় লিখেছেন মাছের মতো ভালোবাসবো তোমাকে/ মৎস্যকন্যার প্রতিমা রূপে...! এ কবিতার শেষে তিনি মুম্বাইয়ের নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাইয়ের প্রসঙ্গও টেনেছেন।

পাঠক প্রতিক্রিয়ায় যুগপৎ প্রশংসা ও নিন্দার ঝড় ফেসবুকে। একপক্ষ বলছে মাইরি, এত্ত ভালো কবিতা আর হয় না! অন্যপক্ষ ছ্যা ছ্যা রব তুলে পত্রিকার সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদকের নামে যা তা বলছে। তৃতীয়পক্ষ আপত্তি জানিয়ে বলেছে বাংলাদেশে কি সুন্দরী নায়িকার অভাব পড়েছে যে কবিকে ভারতের নায়িকা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হবে! বিজাতীয় সংস্কৃতির টানার মধ্য দিয়ে তিনি নিজের ভারত-প্রেমকেই প্রতিষ্ঠা করলেন!

মিজানুল ইসলামের কানেও এসব খবরেরও অল্পবিস্তর এসেছে। পরদিন পঞ্চপা-বের অন্যতম রহিম রহিমুল অফিসে প্রবেশ করেন ক্রেস্ট ও সম্মাননা হাতে। বিগলিত হেসে তা দেখিয়ে সম্পাদককে বলেন, যারা আমাকে চিনত না, ‘বিতর্কিত’ কবিতা লেখার পরই সবাই নাম জেনে গেছে! এই দেখুন, ক্রেস্টে আমার পদসহ কাগজের নামও আছে!
এতে গললেন না সম্পাদক। উল্টো সার্কুলার জারি করলেন এখন থেকে অফিসের কেউই সাহিত্য সম্পাদককে সরাসরি কবিতা দিতে পারবেন না। সম্পাদক বরাবর দিলে তিনিই ছাপানোর ব্যবস্থা করবেন।

পঞ্চপা-বের কবিতা নিয়ে কবির ছদ্মনাম দিয়ে পাঁচ জায়গা থেকে সাহিত্য সম্পাদক বরাবর কুরিয়ার করালেন। কবিদের হয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে জানতে চাইলেন, কবিতা পৌঁছেছে কি না, ছাপা হবে কবে!

রহিম রহিমুলের হয়ে দ্বিতীয়বার কল করলেন মিজানুল ইসলাম। সাহিত্য সম্পাদক আজ খুব ক্ষ্যাপা। বললেন, ‘চুতরাপাতার নিচে আকাশ হাসে’ এমন কবিতা আমরা ছাপি না। কবিতা লেখাটা শেখেন আগে, তারপর পাঠান! প্রক্সি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ইতোমধ্যে তার ১৩টা কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে, সবকটিই জনপ্রিয়!

সাহিত্য সম্পাদক বললেন, ‘১৩ কেন, টাকার জোরে ১৩ শত কবিতার বইও ছাপা যায়; তাতে আবহমানকালের বাংলা কবিতার কী যায়-আসে!’

পঞ্চপা-বের কবিতা তাহলে ‘পদের জোরে’ই ছাপা হতো এদ্দিন! সম্পাদক মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললেন। অফিসে সাধারণ সভার ডাক দিলেন আগামী বুধবারে!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper