ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ছাত্রলীগে অসন্তোষ

বাদ পড়ছেন বিতর্কিতরা

হানিফের বক্তব্যের প্রতিবাদ বিদ্রোহীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪১ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০১৯

ছাত্রলীগের সদ্যঘোষিত ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া বিতর্কিতরা বাদ পড়ছেন। কমিটি নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষ থামাতে বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ছাত্র সংগঠনটির অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কালের ইতিহাসে এবার রেকর্ড পরিমাণ বিবাহিতদের পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও সংগঠনটির গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাবেন না। তবে এ ধারাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অন্তত ছয়জন বিবাহিতকে সহসভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী পরিবারের অন্তত ১৩ জন ঠাঁই পেয়েছেন কমিটিতে। অস্ত্র নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েও সহসভাপতির পদ পেয়েছেন একজন। সম্মেলনের এক বছর পর গত সোমবার (১৩ মে) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই গত কমিটির উপ-মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক এবং নতুন কমিটিতে উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা পদ পাওয়া আল মামুন পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বর থেকে পদবঞ্চিত ছাত্রনেতাদের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিনের সামনে গেলে নতুন কমিটির পদপ্রাপ্তরা তাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশা, ডাকসুর ক্যাফেটরিয়া সম্পাদক লিপি আক্তারসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।

সৃষ্ট পরিস্থিতির আলোকে গতকাল বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ডেকে এ নির্দেশ দেন। এবং ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে একান্তে আলাপ করেন।
এ সময় উপদফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়–য়া এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

হানিফের বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন বঞ্চিতদের
ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিতদের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে পদবঞ্চিত ও পদোন্নতি না পাওয়া নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে হানিফের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান নেতাকর্মীরা।

সোমবার ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিত ও পদ নিয়ে অসন্তুষ্টরা মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়। পদ পাওয়া নেতাদের মারপিটে ছয় নারীনেত্রীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এটা অত্যন্ত সামান্য ঘটনা। এটা নিয়ে আমার মনে হয় যে, খুব বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করার কিছু নেই। হানিফের এ বক্তব্যে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এর প্রতিবাদ জানতেই জড়ো হন কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানানো নেতারা।

ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিক্ষুব্ধদের ওপর হামলাকে ‘অত্যন্ত সামান্য ঘটনা’ বলার সমালোচনা করে ছাত্রলীগ নেত্রী নিপু ইসলাম তন্বী প্রশ্ন করেন, নারীনেত্রীরা আর কতটা লাঞ্ছিত হলে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে তা বড় ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।

শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তন্বী সংগঠনের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক হয়েছেন। তবে এই পদ নিয়ে অসন্তুষ্ট জানিয়ে কমিটি পুনঃগঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি।

মানববন্ধনে তন্বী বলেন, ঘটনাটি কোন পর্যায়ে গেলে তারা এটাকে বিশাল আকারের ঘটনা বলবেন? আর কতটা লাঞ্ছিত হলে আমরা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে বিবৃতি পাব যে, ছাত্রলীগের নারীনেত্রীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন। তাহলে কী আমরা মারা যাওয়ার পর প্রকাশ হবে, এটা একটা বড় ঘটনা ছিল?

মারপিটের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতৃত্ব তদন্ত কমিটি করার নামে তাদের সঙ্গে প্রহসন করেছে বলেও অভিযোগ করেন সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ এই নেত্রী।

রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও নবগঠিত ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার বলেন, যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের ২২ জনের আগে ছাত্রলীগের কোনো পদ ছিল না। অথচ তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ছোট পদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা পদ না পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। বরং কমিটিতে মাদক মামলার আসামি, বিবাহিত, অছাত্র, ছাত্রদল, রাজাকারের সন্তানদের পদ দেওয়া হয়েছে তার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের আগের কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফ বাবু, দফতর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর, ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 
Electronic Paper