মুক্তির প্রতীক আলা সালাহ
তামান্না আক্তার
🕐 ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
৩০ বছর ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার পর সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের একনায়কতান্ত্রিক সরকার। গত কয়েক বছর ধরে চলা মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সুদানের অর্থনীতি প্রচণ্ড চাপে পড়ে। এতে তেল রপ্তানি থেকে আয় দিন দিন কমতে থাকে। ২০১৭ সালে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান বিচ্ছিন্ন-স্বাধীন হয়ে গেলে অধিকাংশ তেলক্ষেত্র হারায় সুদান।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বেশ কিছু ব্যয় সঙ্কোচনের কর্মসূচি ঘোষণা করে সরকার। অনেক ভর্তুকি কমানো হয় বা প্রত্যাহার করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য সুদানের মুদ্রার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করা হয়। দীর্ঘ ৩০ বছরের একনায়ক শাসনের অবসান কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়নি। বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছে সুদানিজ প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন (এসপিএ) নামে একটি পেশাজীবী সংগঠন। প্রধানত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং আইনজীবীরা মিলে এই সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন। বলা হচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের ৭০ শতাংশই নারী। এই বিদ্রোহ ও বিক্ষোভের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে সময়ের এক শক্তহাত। যার নাম আলা সালেহ। যিনি নিজের নাম ছাপিয়ে আজকে ‘কানদাকা’ বা ‘নুবিয়ান কুইন’। সুদানিজদের মুক্তির প্রতীক।
‘নুবিয়ান কুইন’ বলেন, ‘এই দেশের সব বিপ্লবেই সুদানি নারীরা অংশ নিয়েছেন। আপনি যদি ইতিহাস ঘাঁটেন, দেখবেন আমাদের দেশকে বহুবার আমাদের নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ।’ যদিও এ বিক্ষোভে সমাজের সব অংশ থেকেই নারীরা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন। রাস্তায় যেমন তারা সোচ্চার, সোশ্যাল মিডিয়াতেও একইভাবে তৎপর।
এই নারীদের বিরাট একটি অংশ যে শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন চাইছেন তা নয়, সুদানে শরিয়া আইনের বদল দাবি করছেন তারা। সুদানের রক্ষণশীল সমাজে নারীদের বিরুদ্ধে নানা বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে স্লোগান তুলছেন তারা। সামাজিক সংস্কারের দাবিতে আজকে সুদানের গণবিক্ষোভের প্রতীক হয়ে ওঠা নুবিয়ান কুইনের স্লোগানের ভিডিও টুইটারে এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ বার শেয়ার হয়েছে। যদিও বিক্ষোভকারীদের সিংহ ভাগই তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী। তবে বিভিন্ন বয়সের লোকজনও অংশ নিয়েছে। বিক্ষোভকারী লাখো মানুষের মাঝে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কারের ওপরে দাঁড়িয়ে আছেন অভিজাত পোশাক পরিহিত নারী আলা সালাহ বা নুবিয়ান কুইন। উচ্চস্বরে স্লোগান দিয়ে উজ্জীবিত করছেন আন্দোলনকারীদের। সেটি যেন সুদানে দীর্ঘ ৩০ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের ইঙ্গিত।
অবশেষে সত্যিই লাখো সুদানির আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেছে। পর পর দুদিনে দুদফা সরকার এবং সামরিক বাহিনীর পতনের বিরল কৃতিত্ব দেখিয়েছে তারা। আর এতে সরব অংশগ্রহণ করেছে আলা সালাহর মতো হাজার হাজার সুদানি নারী।