ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফের ধর্মঘটে পাটকল শ্রমিকরা

খুলনা ব্যুরো
🕐 ১০:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০১৯

বকেয়া বেতন এবং মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না করায় খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা আবারও ধর্মঘট-অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছেন। পাটকল শ্রমিক লীগ সিবিএ নন-সিবিএ পরিষদের ডাকে গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে এসব পাটকলে টানা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়। একই সঙ্গে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করা হয়।

মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ নয় দফা দাবিতে এর আগে গত ২ এপিল থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা পাটকলের উৎপাদন বন্ধ রেখে আন্দোলন করেছিলেন শ্রমিকরা।

জানা যায়, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা জোনে মোট ২৬টি পাটকল রয়েছে। তার মধ্যে চট্টগ্রাম জোনে রয়েছে নয়টি বড় পাটকল।

শ্রমিকরা বলছেন, বিজেএমসির আওতাধীন জুটমিলগুলোতে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া আছে। এ ছাড়াও ২০১৫ সালে ঘোষিত মজুরি কমিশন এখনো চালু করা হয়নি।

শ্রমিক নেতারা জানান, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত খালিশপুর, দৌলতপুর, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, ইস্টার্ন, আলীম, জেজেআই ও কার্পেটিংসহ মোট নয়টি জুট মিলের প্রায় ৩৩ হাজার শ্রমিক রয়েছে। তাদের ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে তাদের নিয়মিত মজুরি প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে মিলগুলোতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উৎপাদিত পাটজাত পণ্য অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

এদিকে শ্রমিকদের দাবি মানা না পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট জুটমিলের সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন। বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন জানান, ৯৬ ঘণ্টার এ কর্মসূচির পর বিরতি দিয়ে আগামী ২৫ এপ্রিল তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন। এছাড়া ২৭ এপ্রিল থেকে আবার ৭২ ঘণ্টার পাটকল ধর্মঘটসহ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ছয় ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে ধর্মঘটের কারণে গতকাল ভোর ৬টা থেকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। খুলনার রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বেলা ১২টার পর পর্যায়ক্রমে ট্রেন গুলো ছাড়া হবে। খালিশপুর থানার ওসি সরদার মোশাররফ হোসেন জানান, আন্দেলনরত শ্রমিকরা খুলনা-যশোর মহাসড়কের নতুনরাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করে। ফলে খুলনার সাথে সড়ক ও রেলপথে দেশের যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

বিজেএমসির কর্তৃপক্ষ জানায়, খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলের শ্রমিকদের ৪২ কোটি টাকার মজুরি এবং কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আরও ১০ কোটি টাকার বেতন বকেয়া রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৫২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫-এর সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের প্রভিডেন্ড ফান্ড-গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া প্রদান, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট কেনার বরাদ্দ বাড়ানো ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ নয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকরা।

 
Electronic Paper