ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ববি উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হকের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ কিন্তু তিনি বলছেন অন্যকথা...

কলকাঠি নাড়াচ্ছেন স্থানীয় রাজনীতিকরা: ড. এসএম ইমামুল হক

ড. কাজল রশীদ শাহীন
🕐 ১০:৫৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০১৯

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ কী অবস্থা?

যা শুনলাম, আজকেও নাকি তারা রাস্তা অবরোধ করেছে।

ওই দিনের ঘটনাটা কি একটু বলবেন? আসলে কী ঘটেছিল?
ঘটনা ২৬ মার্চের। স্বাধীনতা দিবস। আগের দিন অনুষ্ঠান ছিল, তার আগে ১৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনেও অনুষ্ঠান ছিল। প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানেই ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী-সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়। ২৬ তারিখ বিকালে একটি অনুষ্ঠান করি। চা-চক্রের সেই অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের স্পাউজ, কর্মকর্তার স্পাউজ, শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক-সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়। ওইদিন সকালে কিন্তু আমরা সবাই মিলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি, হলের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আহারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে?
হ্যাঁ। এটা প্রতিবছরই করা হয়। তো বিকালের যে অনুষ্ঠানের কথা বলছিলাম, সেটা চলছিল, এমন সময় হঠাৎ হইহই-রইরই করে শিক্ষার্থীরা চলে এলো। তারা বলল, এই অনুষ্ঠান করা যাবে না, যদি করতে হয় তাহলে আমাদের যোগদানের অনুমতি দিতে হবে। আমি বললাম, তোমরা তো সব অনুষ্ঠানেই থাকো, এটা তো একটা বিশেষ অনুষ্ঠান। কিন্তু তারা তাদের কথা থেকে সরল না। সঙ্গে সঙ্গে তারা তিনটা দাবি দিল, সবগুলোই অগ্রহণযোগ্য। আমি বললাম, আজকের মতো অনুষ্ঠানটা করতে দাও, আগামী বছর থেকে এই অনুষ্ঠান এখানে আর হবে না। কিন্তু কেউ কারো কথা শোনে না। তারা স্লোগন দিচ্ছে, যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। ওইদিন আবার ডিবেটিং সোসাইটির একটা অনুষ্ঠান ছিল। সে অনুষ্ঠানে যাব না ভেবেও পরে গেলাম। বক্তৃতায় বললাম, আমার মন খারাপ। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান যারা ভণ্ডুল করে, তাদের আমি কীভাবে চিহ্নিত করি? তারা কি স্বাধীনতার পক্ষের নাকি রাজাকারদের পক্ষের? দিস ইজ হোয়াট আই সেড।

ওই অনুষ্ঠানে কি তারা ছিল?
যারা আন্দোলন করেছে, তাদের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ ছিল, সেটা আমি জানি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে চত্বরটা দিয়ে আমার অফিসে ঢুকতে হয় সেখানে আন্দোলনকারীরা বসে ছিল। আমি যখন বেরুচ্ছি, তখন দেখলাম, তারা ওখানে বসে গান গাচ্ছে। যাই হোক, বিকালে তারা সেই অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। অনুষ্ঠানে তারা কাউকেই ঢুকতে দেয়নি।

ওই সময় আবার আমাদের এক সার্ভার রুমে আগুন লেগে যায়। এত কিছু হওয়ার পর আমি কী করব? পরের দিন ২৭ তারিখ সকাল থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো গেট বন্ধ করে দিল। শিক্ষকরা আসছেন, তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের বাস এসেছে, তাও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কারও কারও গায়ে হাত তুলেছে তারা। রাত নয়টা পর্যন্ত শিক্ষকদের আটকে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তখন পুরো একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ। তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে, অন্তত সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করলাম।
পরে সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে সবকিছু অবহিত করেছি। একটা বিবৃতি দিয়ে বলেছি, ‘আমি ঢালাওভাবে কাউকে কিছু বলিনি। যারা স্বাধীনতাবিরোধী কাজ করেছে, আমি তাদের বিরুদ্ধে বলেছিলাম। এরপরও যদি সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকে, তাহলে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

কিন্তু বিষয়টা তো আসলে তা না। বিষয়টা হচ্ছে, আমার মেয়াদকাল প্রায় শেষ। আমি যাতে দ্বিতীয়বার আসতে না পারি, তার জন্য একটা মহল আগে থেকেই পাঁয়তারা করছিল, তারা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। এই দাবি না ওই দাবি করতে করতে পরে তারা আমার পদত্যাগের দাবি করছে। এই হচ্ছে ঘটনা।

ওরা যে বলছে আপনি তাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন...
আমার কথাকে তারা অপভ্রংশ করে বলেছে। হয়তো ওখানে কেউ ছিল, যে এসে বলেছে, তোমাদের রাজাকারের বাচ্চা বলা হয়েছে। আমরা ১৯ মার্চ যে বিবৃতি দিয়ে বলেছি, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ওই কর্মসূচিতে নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’ ২৫ তারিখ বিকাল সাড়ে চারটায় আমরা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছি। রাতের বেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বলন করেছি। ২৬ তারিখ সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেছি, গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়েছে। সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। এই সবগুলোতেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল। বিকালে যেটা হয়েছিল, সেটা আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য। এরপরও তাদের যোগদানের ইচ্ছার কথা যদি আগের দিন বলতো তাহলেও বিষয়টা যৌক্তিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আমাকে ধমক দিল, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না। আমি স্বাধীনতার পক্ষের লোক, সেই আমলের মানুষ, যুদ্ধ করা, যুদ্ধ দেখা মানুষ। ১৯৭৩ সাল থেকে শিক্ষকতা করছি, সারাজীবন ধরে তো ফাইট করেই আসছি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই ফাইট করছি আমরা। তাই এখন এটা তো সহ্য করা যায় না।

যারা আন্দোলন করছে, ওরা কি চিহ্নিত?
আমি তো নামও জানি। এদের মধ্যে সিফাত নামে একটা ছেলে আছে, যার বাবা হচ্ছে বরিশাল বিএনপির সহ-সভাপতি।

আন্দোলনে কি ছাত্রলীগ আছে কিংবা তারা কি ইন্ধন দিচ্ছে?
না, তেমনটা নয়। ওই যে বললাম, কোনো এক কোয়ার্টার থেকে বলা হয়েছে, তাই এমন আন্দোলন। বরিশালের সিনারিওটা আসলে ভিন্ন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুটাই হয়েছে গোলমালের মাধ্যমে। আগের ভাইস চ্যান্সেলর ইচ্ছামত তার আত্মীয়-স্বজনকে চাকরি দিয়েছেন। তার ৪০ জন আত্মীয়কে চাকরি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের চিঠিও আছে আমার কাছে। এই আত্মীয়দের মধ্যে বিএনপিপন্থী, জামায়াতপন্থী, শিবিরের লোক সবাই আছে। নিজের স্বার্থসিদ্ধির তিনি লোকাল লিডারদের তদবিরে অনেককে চাকরি দিয়েছেন। আমি যেহেতু সেগুলো বন্ধ করেছি তাই অনেকের ভালো লাগছে না। তাদের ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল-কলেজের মতো চলবে। লোকাল লিডারশিপের ধারণা, তাদের কথামতো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চলতে হবে। আমি বলেছি, আমার পক্ষে সেটা সম্ভব না, আমি করতে পারব না। আই উইল নট ডু দিস। এটা তাদের একটা গোস্যার কারণ।

বিস্তারিত আগামীকালের পত্রিকায়

 
Electronic Paper