ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রতিবাদের বিশ্ব ‘সেলিব্রেটি’

বুশকে জুতা মেরে নায়ক জায়েদি

বিবিধ ডেস্ক
🕐 ১২:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০১৯

১৪ ডিসেম্বর ২০১৮। বাগদাদে ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। ২৯ বছরের তরুণ মুনতাজার আল জায়েদি তখন ইরাকের আল বাগদাদিয়া টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। জায়েদি তার দুই পায়ের জুতা খুলে প্রেসিডেন্ট বুশ বরাবর নিক্ষেপ করেছিলেন। বুশ ঝট করে চেহারা সরিয়ে নেওয়ায় জুতা তার মুখে লাগেনি। দু’বারই একই অবস্থা। জুতা মারার সময় জায়েদি আরবিতে বলেছিলেন, ‘কুকুর! তোমার বিদায়ী চুমু। এটা ইরাকি বিধবা ও এতিমদের পক্ষ থেকে।’

এই ঘটনার সংবাদ ও ভিডিও বিদ্যুৎ গতিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঘটনার পরপরই জায়েদিকে নিরাপত্তারক্ষীরা গ্রেফতার এবং মারধর করে। পুলিশের মারে তার দাঁত পড়ে যায়; পাঁজরের হাড় ভাঙে, পায়ে ডাণ্ডার বাড়িতে যখম হয়ে যায়। জায়েদি ও কালো রঙের মোকাসিন জুতা বীর ও বীরগাথায় পরিণত হয়।

ইরাক আক্রমণের আগে প্রেসিডেন্ট বুশ বলতেন, ইরাকে ডব্লিউএমডি বা ওয়েপন অব মাস ডেসট্রাকশন, মানে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। তখন বিশ্বের কেউ এ কথা বিশ্বাস করেনি। শুধু তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এর আগুনে তেল ঢেলেছিলেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করা থেকে সাদ্দামের ফাঁসি কার্যকর করা পর্যন্ত এমন কোনো অস্ত্রের সন্ধানই পাননি। কিন্তু পেয়েছিলেন তার চেয়েও ভয়ঙ্কর অস্ত্রের সন্ধান, ইরাকি যুবকের জুতা। এ অস্ত্র সিকিউরিটি স্ক্যানিংয়ে বা রাডারে ধরা পড়ে না।

অস্ত্রটি পরপর দু’বার নিক্ষেপ করেন জায়েদি। যা ছিল যে কোনো মারণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী। জায়েদি এমন অস্ত্র নিক্ষেপ করে প্রমাণ করলেন, প্রেসিডেন্ট বুশ আসলে কত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি এবং তার বক্তব্য কতটা সঠিক! তিনি পাদুকা ‘অস্ত্র’ সম্পর্কে সজাগ ছিলেন বলে আক্রান্ত হননি। এর আরো একটি কারণ রয়েছে। ষাটের দশকে তৎকালীন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ জাতিসংঘে এ অস্ত্র প্রয়োগ করে ধিকৃত হয়েছিলেন।

বাগদাদের সে ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বুশ অবসর নিয়েছিলেন। ওই সময় ওভাল অফিস থেকে জানানো হয়েছিল, ইরাকে থাকা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট বুশ আর কোনো প্রেস কনফারেন্স করবেন না। তবে জরুরি কোনো কারণ ঘটলে মসজিদের ভেতর বক্তব্য রাখতে পারেন। আমরা সবাই জানি, মসজিদে যারা ঢোকেন তাদের পা খালি থাকে।

বীর সাংবাদিক জায়েদির ওই জুতার দাম ১০ মিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। ইরাকি ফুটবল টিমের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর আদনান হামাদ জুতার দাম তুলেছিলেন এক লাখ ডলারে। এক ইরাকি তেল ব্যবসায়ী জানান, যে কোনো মূল্য হোক না কেন, তিনি ওই জুতা কিনবেন। এর মধ্যে ৬০ বছরের এক সৌদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক মিডিয়ায় বলেছিলেন, জুতা জোড়া না হলেও অন্তত এক পাটি জুতা ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কেনা দরকার। জুতার প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড নাম পরিবর্তন করে রেখেছে ‘সাংবাদিকের জুতা’। আরেক সিরিজের নাম রেখেছে ‘মুনতাজা সু’। হু হু করে ইরাকজুড়ে এ জুতার কদর বেড়ে যায়।

কোম্পানির জুতা ব্যবসা আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর লিবিয়ার তৎকালীন নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফির মেয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আল জায়েদিকে লিবিয়ার সাহসিকতার জাতীয় খেতাব দেওয়া হবে। ২০০ জন আইনজীবী ঘোষণা দেন, তারা সম্মিলিতভাবে আদালতে জায়েদির পক্ষে লড়বেন। আল বাগদাদিয়া টিভি চ্যানেল জায়েদিকে মুক্ত করার জন্য ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নূরী আল মালিকিকে সম্বোধন করে বারবার ঘোষণা প্রচার করেছিল।

তারা দাবি জানান, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ইরাকে কাজ করবে বলে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে। তাই জায়েদিকে আবদ্ধ রাখার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। প্রেসিডেন্ট বুশের মাথা নিচু করার ছবি দিয়ে মিসরে প্রচুর টি-শার্ট বিক্রি হয়েছে।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper