ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার

বাজেটে হতাশ বিনিয়োগকারীরা

সাজেদুর রহমান
🕐 ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, জুন ০৯, ২০১৮

আক্ষরিক অর্থেই বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় গত এক মাসে প্রায় পৌনে ৫০০ পয়েন্ট সূচক কমেছে। তবে বাজেটের আগে বিভিন্ন খাতে কর কমানোসহ সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিল সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতি আমলে নেয়নি সরকার। দেয়নি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রণোদনা, যা বিনিয়োগকারীদের চরম হতাশ করেছে।

প্রতিবছর বাজেট এলেই আশায় বুক বাঁধেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাজেট ছাড়া বছরটি নির্বাচনের হওয়ায় প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল সংশ্লিষ্টদের। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেখা যায়নি, যা বিনিয়োগকারীদের চরম হতাশ করেছে। প্রাক-বাজেট আলোচনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশের পুঁজিবাজারের অংশীজনরা এবারের জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তা হয়নি।
অথচ নতুন বাজেট ঘোষণার আগেও বিভিন্ন খাতে কর কমানোসহ সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিল সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই আমলে নেয়নি সরকার। উল্টো এবারের বাজেটে করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা যেমন বাড়েনি, তেমনি কমানো হয়নি লভ্যাংশ করের হারও। পুঁজিবাজারে লেনদেনের ওপর কর কমানোর জোর দাবি থাকলেও সেসব বিষয়ও বাজেট প্রস্তাবনায় আসেনি।  
আর এ কারণে যেদিন বাজেট পেশ করছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বাজার পতন হয়েছে ৩২ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সা¤প্রতিক সময়ে শুধু বাজেটের জুজুর ভয়ে সূচক কমতে কমতে ৫ হাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গত ৫ মাসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে মোট ৯৩৭ পয়েন্ট। এরমধ্যে টানা পতন শুরু হয় এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে। ২৬ এপ্রিল থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছে প্রায় ৪৬৭ পয়েন্ট।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের বাজেটে ব্যাংক-বীমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হ্রাস ও রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির আয়করে ব্যবধান টানার ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে শক্তিশালী করতে গত বাজেটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আয়কে কর অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও এবার এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। মার্চেন্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন ইন্টারমিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্যও কোনো সুবিধা ঘোষণা করা হয়নি।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। এরমধ্যে রয়েছে ডিএসইর বর্তমান ক্রমহ্রাসমান হারে কর অব্যাহতির পরিবর্তে তিন বছরের জন্য পূর্ণ কর অব্যাহতি প্রদান, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে লেনদেনের ওপর আদায়কৃত করের হার ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ নির্ধারণ, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুসারে এক্সচেঞ্জের বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের ৬০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিপরীতে প্রাপ্ত মূলধনী মুনাফার ওপর কর অব্যাহতি প্রদান, লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকায় উন্নীত করা, লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর্তনকৃত করকে চূড়ান্ত করদায় পরিশোধ হিসেবে বিবেচনা করা, ডিম্যাটেরিয়ালাইজড শেয়ার ও ডিবেঞ্চার হস্তান্তরের ওপর স্ট্যাম্প ডিউটি প্রত্যাহার, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়কর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) কোম্পানির তালিকাভুক্তির পরবর্তী তিন বছর শতভাগ কর অব্যাহতি প্রদান করা।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাজেটে সরাসরি পুঁজিবাজারের জন্য কোনো ঘোষণা নেই। তবে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হ্রাস হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এর সুফল পাবেন, যার পরোক্ষ প্রভাব দেখা যাবে পুঁজিবাজারেও।
ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে আমাদের বেশ কিছু সুপারিশ ছিল, যেগুলোর বাস্তবায়ন এ বাজারের ভিত শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। আমরা একটি বিশ্বমানের স্টক এক্সচেঞ্জ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এ অবস্থায় এসব সমর্থন দরকার। অর্থমন্ত্রী বাজেটের পর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করছি, চূড়ান্ত বাজেট পাসের আগে আমাদের দাবিগুলো বিবেচনা করা হবে।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাবির অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশার। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন শেয়ারবাজারকে মজবুত অবস্থায় প্রতিস্থাপন করবেন, এটার কেন্দ্রবিন্দু হবে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি আহরণের জন্য। আমরা আশা করেছিলাম করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কোনো ক্ষেত্রে উনি কমিয়ে দেবেন, যাতে করে কোনো ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার একটু উৎসাহ পায়। অথচ তেমন কিছুই আমি দেখছি না। বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে অন্তত আড়াই শতাংশ বা দুই শতাংশ ট্যাক্স কমিয়ে দিলে ভালো কোম্পানিগুলো ট্যাক্স সুবিধা নেওয়ার জন্য নিশ্চই আসত।
আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজার এখন যে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে, সেটাকে উনার (অর্থমন্ত্রীর) সঠিক জায়গায় কিভাবে স্থাপন করা যায়, এ ব্যাপারে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত ছিল। তিনি আগে বলেছিলেন, করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স বেশি। কিন্তু সে অনুযায়ী বাজেটে কোনো প্রতিফলন আমি দেখলাম না। ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোকে আড়াই শতাংশ কমিয়েছেন, এখানে যারা শক্তিশালী লবিস্ট তারা হয়তো তাদের সুবিধা বুঝে নিয়েছেন। কিন্তু অন্য কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শেয়ারবাজারে যেখানে হাজার হাজার মানুষের এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ জড়িত সেদিকে নজর দেননি।
বাজেট ছাড়া বছরটি নির্বাচনেরও উল্লেখ করে ডিএসইর সাবেক পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাজেটে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে বুঝাতে হবে, সরকার এ খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাবেন।

 
Electronic Paper