ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সমাজের শুদ্ধতার জন্য সংগীত অপরিহার্য

তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ১:১৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯

গজল শিল্পী আমীন বাদল দেশের শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চা ও সমাজজীবনে সংগীতের প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতি কেন আকৃষ্ট হলেন?
শাস্ত্রীয় সংগীতে আকৃষ্ট হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ ছোটবেলা থেকেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম সংগীতের মূল ভিত্তি হলো শাস্ত্রীয় সংগীত। যে যে গানই করুক একটা সময় তার প্রধান ভিত্তি হল শাস্ত্রীয় সংগীত। শাস্ত্রীয় সংগীত ছাড়া কোন প্রকার গানই পরিস্ফুটন লাভ করে না। এ অনুধাবন যার মধ্যে থাকবে, তারাই এ অঙ্গনে অনেক ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস এবং করেছেও তাই। যত বড় বড় গুণীজন, গায়ক, শিল্পী শাস্ত্রীয় সংগীত সাধনার মাধ্যমে পূর্ণতার প্রকাশ পেয়েছেন। এর বাইরে সাধারণভাবে এটি সম্ভব না। আমার মধ্যে এ অনুধাবনটা যখন এসেছে, তারপরই আমি বোধ করেছি আমার শাস্ত্রীয় সংগীত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন খুব জরুরি। জ্ঞান অর্জন বলতে কণ্ঠে ধারণটাও আমি বোঝাচ্ছি, সেটা খুব জরুরি। সেখান থেকেই আমার অনুধাবন।

আমাদের দেশে শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বলুন...
শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চা কোন অবস্থানে আছে সেটা বিচার করার আগে আমি যে গানবাজনা করি আমার দায়িত্বটা কি সেটা বোঝা দরকার। রেডিও টেলিভিশন তো আমাকে এ বিষয়ে তালিম দিবে না। তারা তাদের প্রোগ্রাম শিডিউলে শাস্ত্রীয় সংগীতের জন্য সময় বরাদ্দ রেখেছে। কিন্তু আমাকে শিখে তৈরি হয়ে সেখানে যেতে হবে এবং আমাকেই প্রচার করতে হবে। শাস্ত্রীয় সংগীত রেডিও-টেলিভিশন আমাকে কখনো শেখায়নি এবং শেখাবেও না। এটি শিখতে হবে শিল্পীর নিজস্ব তাড়নায় ও নিজস্ব বিবেক-বুদ্ধিতে, কোথায় কীভাবে কার কাছে তালিম নিবে সেটা বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ।

সেভাবেই তাকে শিখতে হবে। রেডিও-টেলিভিশন প্রচারের কাজ করবে। কেউ ভালো গাচ্ছে, তার গান গাওয়াটা প্রচারযোগ্য সেটা তারা অবশ্যই তাদের নীতিমালার মধ্যে থেকেই প্রচার করবে। এটা হল রেডিও-টেলিভিশনের ভূমিকা। কিন্তু ভূমিকাটা আসতে হবে নিজের তরফ থেকে, অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে নিজের দায় এড়িয়ে যাওয়াটা মোটেও প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত না।

এখানে অনেকেই চেষ্টা করছে। কেউ হয়তো সে উচ্চতায় যেতে পারে, আবার কেউ সে উচ্চতায় যেতে পারে না। কিন্তু আমার মনে হয়, যদি সত্যি সত্যি সাধনার মন থাকে এবং সাধনালব্ধ জ্ঞান নিয়ে সাধনা করে এবং ধৈর্যসহ সাধনা করে তাহলে অবশ্যই সে একটা পর্যায়ে যেতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

ক্ল্যাসিকাল সংগীতে কণ্ঠ চর্চা আর যন্ত্রসংগীত চর্চার সম্পর্ক নিয়ে আপনার মন্তব্য?
রাগ সংগীত চর্চার ক্ষেত্রে কণ্ঠ বা যন্ত্র যে মাধ্যমেই করুক না কেন সর্বোৎকৃষ্টতা কিন্তু একটি পর্যায়ে চলে আসে। আবেশটা একই, সেটা কণ্ঠে ধারণ করলেও যা হবে যন্ত্রে ধারণ করলেও তাই হবে।

প্রযুক্তি ব্যবহারের এ যুগে খালি গলায় গান সাধনার বিষয়টি কি কমে যাচ্ছে?
গানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের যন্ত্রের ব্যবহার হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে পরিমিতি বোধের বিষয়টি জরুরি। কোথায় কীভাবে বাঁশি, সেতার, তবলা ব্যবহার করবো সেটা বিবেচনা করতে হবে।

আর এখন একটু গান শিখে, সুর করে সবাই শিল্পী হতে চায়। এখন রেডিও, টেলিভিশন ছাড়াও নিজেকে এক্সপোজ করার অনেক মাধ্যম তৈরি হয়ে গেছে। এটার ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। ভালো দিকটা হল সহজে মানুষের কাছে যাওয়া যেতে পারে, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মানুষ এখন এত সহজ জিনিসটা সহজভাবে নেয় না।

মানুষ এখন বোঝে যে, এটা সস্তা জিনিস। সহজভাবে মানুষ গ্রহণ করবে, কিন্তু সস্তা জিনিসটা নিবে না। সহজভাবে পেয়ে যাওয়ায় মানুষ কিন্তু এখন কোয়ালিটি সম্পন্ন জিনিসটা নেয়।

এটা একটা মজার ব্যাপার বটে। মানুষের কাছে যত সহজে বিষয়টা যায়, মানুষ কিন্তু সস্তা জিনিসটা এখন গ্রহণ করে না।

অতএব, আপনাকে মিউজিকের কোয়ালিটি বজায় রাখতেই হবে। মিউজিকের ক্ষেত্রে সাধনা ও কোয়ালিটি রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

আমাদের জীবনে সংগীতের প্রভাব নিয়ে বলুন...
আমরা সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংগীতের সঙ্গে জড়িত। আমাদের হৃদস্পন্দন, চোখের পাতা পড়া, কথা বলার স্টাইল সবকিছু কিন্তু রিদমের সঙ্গেই করি।

আমরা কথা বলি সেটাও কিন্তু একটা সুরে কথা বলি। আমরা কিন্তু একটা মাত্রা বজায় রেখে কথা বলি।

সংগীত মানুষকে অনেক খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে।

সমাজের শুদ্ধতার জন্য সংগীত অপরিহার্য একটি বিষয়।

সংগীত অনেক কিছু দিতে পারে, মানবতাবোধ ডেভেলপ করতে পারে, সংগীত আপনার মনের ক্ষুধা মেটাতে পারে, যে কোনো সংকটে আমরা সংগীতের কাছে যেতে পারি।

সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

 
Electronic Paper