থাকছে ঐক্যফ্রন্ট, হাঁটবে নিয়মতান্ত্রিক পথে
হাসান ওয়ালী
🕐 ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০১৯
গত দুই মেয়াদ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ক্ষমতায় যাওয়ার আশা দেখিয়েছিল নেতাকর্মীদের। কিন্তু নির্বাচনে ‘শোচনীয়’ হারে সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এর ফলে টানা তৃতীয় মেয়াদ ক্ষমতার বাইরে থাকতে হচ্ছে বিএনপিকে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির তৃণমূলে ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। তবে আপাতত তৃণমূলের প্রশ্নকে ঐক্যফ্রন্ট সঙ্গেই থাকছে বিএনপি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃভোটের দাবি জানালেও এখনই হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কোনো কর্মসূচি দিতে চায় না বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। এর বাইরে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে পুনঃভোটের দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকতে চায় তারা।
কঠোর কর্মসূচিতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলছেন, গত ১০ বছরে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মামলার বিষয়টি মাথায় রেখেই কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না। এ মুহূর্তে নেতাকর্মীদের মামলা নিষ্পত্তি নিয়েই বেশি ভাবছেন তারা। ইতিমধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে গ্রেফতার ও মামলায় জড়িত নেতাকর্মীদের খোঁজ নেওয়া ও তাদের সহযোগিতা করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচির তালিকায় রয়েছে-নির্বাচন ইস্যুতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সংলাপ, নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব আসনের নির্বাচনের অনিয়মের বিষয় উপস্থাপন করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা এবং নির্বাচনের দিন ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাক্ষাৎ। ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য শীর্ষনেতার উপস্থিতিতে সম্প্রতি এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঐক্যফ্রন্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন ইস্যুতে নাগরিক সমাজকে নিয়ে জাতীয় সংলাপে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন বয়কট করা দুই বিপরীত মতাদর্শের রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা জোটটির। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সরকারবিরোধী বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার স্বপ্নও দেখছে গত বছরের ১৩ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এ প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষনেতা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী খোলা কাগজকে বলেন, আমরা অহিংস, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণভাবে যা যা করণীয় তাই করছি; আমরা তো এখন যুদ্ধে নামতে পারি না। মানুষ গভীর হতাশার মধ্যে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, দিনের ভোট রাতে দিয়ে দিয়েছে সরকারি দল। শুধু সরকারি দল না, এর সঙ্গে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও জড়িত। ভোট দিতে না পারায় মানুষের যে ক্ষোভের তৈরি হয়েছে আমরা এটাকে কাজে লাগিয়েই সবাইকে নিয়ে এগোতে চাই।’
এদিকে বিএনপির তৃণমূলের একটি অংশ মনে করছেন, কঠোর কর্মসূচি দিয়ে চাপে ফেলতে না পারলে তৃতীয় মেয়াদও পূর্ণ করবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। সেক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও অধরা থেকে যাবে বিএনপির। তৃণমূলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাব জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু খোলা কাগজকে বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে দল বিচার-বিশ্লেষণ করছে। আমরা প্রার্থীদের সঙ্গে বসেছি। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তো এখনো আনুষ্ঠানিক বসি নাই, যখন বসা হবে তখন তাদের বক্তব্য দল বিশ্লেষণ করবে।