একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
অপেক্ষা ভোট উৎসবের
সুলতান মাহমুদ
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। সরগরম দলীয় কার্যালয়। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কেন্দ্র থেকে ক্ষণে ক্ষণে নানা ধরনের নির্দেশনা যাচ্ছে তৃণমূলে। সে অনুযায়ী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
নোনয়ন ফরম বিক্রি, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার, দলীয়, শরিক ও মিত্র দলগুলোর মনোনয়ন এবং আসন ভাগাভাগির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে যেসব প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা মনোনয়ন ফিরে পেতে ইসিতে আপিল করেছেন সেই আপিলের শুনানি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট আগামী ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশে উৎসবের আমেজ শুরু হলেও আসল উৎসব শুরু হবে ১০ ডিসেম্বর। কেননা এদিন প্রার্থীদের মধ্যে প্রাতীক বরাদ্দ করবে নির্বাচন কমিশন। প্রতীক পেয়েই এদিন প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি জোট নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ নেওয়ায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর হবে বলে আশা সবার।
এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এক জোটে আবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এক জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট তফসিল ঘোষণার আগেও নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে একত্র হয়ে তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি জোট। দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নির্বাচন বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। ২০০৮ সালের পর নতুন ভোটার হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখের বেশি। তরুণ ভোটাররা আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪১ হাজার ১৯৯টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪০টি। আর এই মহাকর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিয়োজিত থাকবেন ৭ লাখেরও বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। অন্য বছরের মতো এবারও সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনের ১৫ দিন আগে সেনাবাহিনী মাঠে নামবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা কাজ করবেন বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ২৮ নভেম্বর, বাছাই ২ ডিসেম্বর-যা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাছাইয়ের পর রিটার্নিং কর্মকর্তারা ৭৮৬ জনের মনোনয়ন বাতিল করেন। যাদের মনোনয়ন রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেন তাদের মধ্যে ৫৪৩ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসিতে আপিল আবেদন করেন। গত ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা আপিল আবেদন করেন।
আর গতকাল থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়, চলবে কাল ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পরে ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা প্রচারণায় মাঠে নামবেন। মানুষ অপেক্ষা করছেন ১০ ডিসেম্বরের। গত ১০ বছর পরই এবারই সব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ জন্য মাঠে নির্বাচনী ভোটের হাওয়া বিরাজ করছে। নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এ বছর মাত্র ১৭ দিনের মতো প্রচারণা চালানোর সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। বাংলাদেশের বেশিরভাগ সংসদীয় আসনই দুই বা তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। একেকটি সংসদীয় এলাকায় ১৫ থেকে ২৫টির মতো ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সে হিসাবে একজন প্রার্থী এই সীমিত সময়ে একটি ইউনিয়নে এক দিন করেও প্রচারণা চালানোর সময় পাচ্ছেন না।
মানুষ তাদের নেতাদের বেশিরভাগ সময়ই কাছে পান না। কিন্তু নির্বাচনের এই সময়টিতে তারা নেতাদের কাছে পান, জানাতে পারেন সুখ-দুঃখের কথা এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া। এ জন্য এই দিনগুলোর অপেক্ষা করছেন তারা। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপিসহ সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি ১৪ দলের এক বৈঠকে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য। জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই বিজয়ী হবে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, যে যেই অবস্থানে থাকুক না কেন, প্রার্থীকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে হবে। সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দিতে হবে। আইনগতভাবে কেউ যেন বঞ্চিত না হন, আবার কেউ যেন বাড়তি সুবিধা না পান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে নির্বাচনে টিকে থাকাটা ইসি ও সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে। নির্বাচনী উৎসবের যে গন্ধ তারা পাচ্ছেন, সেটা থাকবে কি না তাও নির্ভর করছে সরকারের ওপর।