ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খেলাপি ঋণে ৯৯ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড

জাফর আহমদ
🕐 ১০:২০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮

নির্বাচন এলে খেলাপি ঋণ ফেরত ও পুনঃতফসিলি বাড়ে। ফলে খেলাপি ঋণের হার কিছুটা কমে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ঘটেছে উল্টো। চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে নতুন করে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আর এক বছরে ব্যবধানে বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

সব মিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে স্মরণকালের রেকর্ড ৯৯ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিক শেষে ৫৭টি ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। সে সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৯ হাজার পাঁচশ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আবার ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৮০ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছর ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
চলতি বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত বছরের জুনে যার পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। গত মার্চ মাস শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। উল্লিখিত সময় ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২২ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এ বিষয়ে বিশ^ব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে করে পুনঃতফসিলিকরণের হার বাড়ে। এতে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে। কিন্তু তা কিছুদিন পরই আবার বৃদ্ধি পায়। এবারও তাই হবে। নির্বাচনকে সামনে করে যে পুনঃতফসিলিকরণ করা হয়েছে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদনে পুরোপুরি আসেনি, হয়তো ডিসেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদনে আসবে। তবে এটা খেলাপি ঋণ কমানোর সত্যিকার প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নয়। খেলাপি ঋণ কমাতে হলে অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইনি ব্যবস্থা কার্যকর ও ব্যাংক পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের দায়িত্বশীল হবে।’
তথ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এক-চতুর্থাংশ ঋণ প্রায় খেলাপি। সেপ্টেম্বর শেষে ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৩ শতাংশ। এ সময়ে মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৬ সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য মোট খেলাপির অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ সময় ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। জুন থেকে সেপ্টেম্বরে এসে হার কমলেও খেলাপি ঋণ দেড়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ ছিলো ৪৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ সময় তাদের মোট ঋণ ২৪ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে এই হারে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি।
অন্যদিকে, খেলাপি ঋণ বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। জুন শেষে ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের মোট ঋণের স্থিতি ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৩৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ০১ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যার ৪৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পরেছে। যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
দেশে পরিচালিত ৯টি বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশ। যা আগের প্রান্তিক থেকে এক শতাংশ বেশি। এ সময় বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যার ২ হাজার ৩শ কোটি টাকা খেলাপি। জুন শেষে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। জুন শেষে তাদের মোট ঋণ ৩৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, খেলাপি ঋণের উচ্চ পরিমাণ ও হারের কারণ ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের ঘাটতি। এ ঘাটতি এক সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ছিল। বেসরকারি ব্যাংকগুলো তার মূলধন ঘাটতির ভয়ে ঋণ বিতরণে সতর্ক থাকত। কিন্তু বর্তমানে সেটিও নেই। ফলে সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ কমাতে তদারকি এবং পদক্ষেপে ঘাটতি রয়েছে।

 
Electronic Paper