১০ টাকার অ্যাকাউন্টে ৩০৮ কোটি ঋণ বিতরণ
উদ্যোক্তা হচ্ছে প্রান্তিকজন
জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৮
কৃষককে দেওয়া সরকারের ভর্তুকি ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর এসব অ্যাকাউন্ট সচল রাখা, অ্যাকাউন্টের বহুমুখী ব্যবহার, প্রান্তিক মানুষকে ব্যাংকমুখী করা ও সঞ্চয়ে মনোযোগী হতে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩০৮ কোটি টাকা স্বল্প সুদে ঋণ পেয়েছে প্রান্তিক মানুষ। অনেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ টাকা, ৫০ টাকা ও ১০০ টাকায় খোলা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৬টি। এর মধ্যে ১০ টাকায় কৃষকের খোলা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৬টি। বাকি অ্যাকাউন্ট ৫০ ও ১০০ টাকায় খোলা। এসব অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষকের জমা ২৯৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচির আওতায় অতিদরিদ্র মানুষের জমা ৩২৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, মুক্তিযোদ্ধাদের ২১৪ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগী মানুষ জমা করেছেন ৫১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং গার্মেন্টস শ্রমিকরা জমা করেছেন ১৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাক। জমার তালিকায় পথশিশু, পরিছন্নকর্মীসহ প্রান্তিক মানুষ রয়েছে।
শুরুতে এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরকারের দেওয়া ভর্তুকির টাকা দেওয়া হতো। এখন ভর্তুকি দেওয়ার পাশাপাশি এসব অ্যাকাউন্টে যেমন মানুষ সঞ্চয় করছে, তেমনি বিদেশ থেকে আত্মীয়স্বজনের টাকা গ্রহণের কাজে ব্যবহার ও কম সুদে ঋণও গ্রহণ করছে। এসব মানুষের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসব প্রান্তিক মানুষকে ঋণ দিচ্ছে। ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ এবং কোনো জমানত ছাড়াই একজন জিম্মাদারের মাধ্যমে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব মানুষ এক সময় ব্যাংকের কথা শুনলেই ভয় করত। সেই মানুষই টাকা জমা রাখার জন্য ব্যাংকের কাছে যাচ্ছে, দেনদেন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বশর খোলা কাগজকে বলেন, দেশের কৃষক ও ছোট ছোট উদ্যোক্তাকে অর্থ সরবারহ, মহাজন ও এনজিওর খপ্পর থেকে এসব প্রান্তিক মানুষকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এজন্য ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে। এ তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণ করে অনেকে ছোট ছোট উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০ হাজার ৫৫৫ জন অ্যাকাউন্টধারী ৩০৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কৃষকরা নিয়েছেন ৯১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং মুক্তিযোদ্ধারা নিয়েছেন ১৯০ কোটি টাকা।
১০ বা ৫০ টাকার এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রামে বসে প্রবাসী পরিজনের রোজগারের অর্থও পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৭ হাজার ৩৫২টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠানো ৮৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা গ্রহণ করা হয়েছে।