ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আ.লীগে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার আজ

কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য গত শুক্রবার থেকে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শেষ দিন গত সোমবার পর্যন্ত দলের ৪ হাজার ২৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বলে জানানো হয়েছে দলের তরফ থেকে। এত প্রার্থীর ভিড়ে কার ভাগ্যে মনোনয়নের শিকে ছিঁড়বে এখনই বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে আজ তার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, আজ বুধবার শুরু হচ্ছে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার পর্ব। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডেকেছে। মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার পর্বে সভাপতিত্ব করবেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রধান বিরোধীপক্ষ বিএনপিভিত্তিক দুই জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট এবারের নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেওয়ার পর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ মনোনয়নপ্রত্যাশীর জনপ্রিয়তা ও নির্বাচনে জেতার সম্ভাব্যতার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার জানিয়েছিলেন, তারা ‘উইনেবল’ প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেবেন। এ জন্য দলের ভেতরের    মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আগে থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল-নিজ নিজ এলাকায় কাজ করে নিজেদের পক্ষে নেতাকর্মী ও ভোটারদের সমর্থন আদায়ের। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও দলের বিভিন্ন কমিটি দিয়ে কয়েক স্তরের জরিপও পরিচালনা করা হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও মনোনয়নে আগ্রহী নেতাদের ওপর। সেসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মাস কয়েক আগে থেকেই প্রায় দেড়শ প্রার্থী তালিকার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে। কিন্তু শুক্রবার থেকে সোমবার দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির যে চিত্র দেখা গেছে তাতে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। চার দিনে ৮টি বিভাগ থেকে ৩০০ আসনের জন্য ৪ হাজার ২৩ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। কয়েকটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা অর্ধশত ছুঁয়েছে। দলের আলোচিত, পরিচিত প্রার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আলোচিত ব্যক্তি-আমলা, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও রুপালি জগতের অনেক তারকা নৌকা মার্কার মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। প্রত্যেকেই আশাবাদী তারা দলের মনোনয়ন পাবেন। তবে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে কাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। আজ ও আগামীকাল দুদিন ধরেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার চলবে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
সূত্র জানায়, আজ বেলা ১১টা থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে বিভাগওয়ারী। তার আগে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতিটি আসন থেকে যে কোনো একজনকে দলীয় প্রার্থী ঠিক করার আহ্বান জানাবেন। তারা ব্যর্থ হলে প্রধানমন্ত্রীই প্রার্থী ঘোষণার দায়িত্ব নেবেন। ৩০০ আসনে প্রথমে দলের প্রার্থী ঠিক করা হলেও পরে জোটের শরিক ও মিত্রদের জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। এ জন্য দলের প্রত্যেক প্রার্থীকেই প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে পুরনো ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোট ছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নতুন করে ভিড়ে নির্বাচন করছে ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী নেতৃত্বাধীন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোট। আওয়ামী লীগ আগে থেকেই বলেছিল, বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করবে। সে অনুযায়ী ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবার নির্বাচনে অবতীর্ণ হচ্ছে। এ ছাড়া মিত্র হিসেবে বামপন্থী জোটসহ আরে কয়েকটি দলকে ভাবছে আওয়ামী লীগ।
আসন বণ্টনে শরিক ও মিত্রদের জন্য অন্তত ১০০ থেকে ১২০ আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে আওয়ামী লীগকে। যদিও আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, কোনোক্রমেই শরিক ও মিত্রদের জন্য ১০০ আসনের বেশি ভাবছে না আওয়ামী লীগ। কারণ দলের অভ্যন্তরেই যোগ্য, গ্রহণযোগ্য এবং ‘উইনেবল’ প্রার্থীর সংখ্যা প্রচুর। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ এবার ক্রীড়া, সংগীত ও রুপালি জগতের কিছু তারকাকে মনোনয়ন দিতে পারে। তাদের জন্যও কিছু আসন বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ দল এককভাবে যে কোনো নির্বাচন মোকাবেলা করতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক জোট বা ঐক্য নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে লড়ছে সে জোটের প্রতিটি দলকেই সন্তুষ্ট রাখতে চায় তারা। এ জন্য শরিক ও মিত্রদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া ব্যাপারে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আগে থেকেই প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন শেখ হাসিনা।
নিজেদের ২০০ আসনে কারা মনোনীত হচ্ছেন আর কারাই বা ১০০ আসন থেকে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তা দেখতে সর্বত্রই আগ্রহ ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অবশ্য সব সিদ্ধান্ত দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। দল এবং জোটের স্বার্থে এবং টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে তিনি যাকে যে আসন থেকে প্রার্থী ঘোষণা করবেন সে আসন জিতিয়ে আনার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। এ নিয়ে কোনো ধরনের দ্বিধা বিভক্তি, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিদ্রোহ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। দলের পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছে, যদি কেউ কৌশলগত কারণে মনোনয়ন নাও পান, ক্ষমতায় গেলে তাকে শেখ হাসিনা নিজেই মূল্যায়ন করবেন।

 
Electronic Paper