ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শালীন পোশাক মুমিন নারীর গুণ

ধর্ম ডেস্ক
🕐 ১২:৫১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২২

শালীন পোশাক মুমিন নারীর গুণ

সভ্যতার বিকাশে শালীন পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষ একসময় বন্যপশুর মতোই দিগম্বর ছিল। লজ্জা-শরমের বিষয়টি অনুভূত হওয়ায় গাছের লতাপাতা, ছাল-বাকল, পশুপাখির চামড়া ও পালক পরিধান করে লজ্জা নিবারণ করতে শুরু করে মানুষ। সভ্যতার অগ্রযাত্রা তখন থেকেই শুরু। ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক অবস্থান অনেকটাই নির্ভর করে শালীন পোশাকের ওপর।

কিন্তু বর্তমান সমাজে ফ্যাশন নাম দিয়ে শুরু হয়েছে অর্ধ-উলঙ্গ ও অধিক মুনাফা হাতানোর ব্যবসা। বণিক-শ্রেণির সর্বগ্রাসী লোভের সবচেয়ে নির্মম শিকার নারীসমাজ। নারীদেরকে কত সূক্ষ্মভাবে যে প্রতারিত করা হচ্ছে অনেকে তা আঁচই করতে পারছে না। অথচ স্বাধীনতার নামে অশালীনতা সব দিক থেকে অকল্যাণকর। অনেকে যুক্তি দেখাতে পারেন- স্বাধীনতা মানে অশালীনতা নয়। কিন্তু সেই যুক্তিতে আদৌ মুক্তি নেই।

মূলত যে পোশাক শালীনতার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ, তা শরিয়তের দৃষ্টিতে পোশাকই নয়! শরীর ও শরীরের অবয়ব প্রকাশ পায়—এমন পাতলা কাপড় পরিধান করাও ইসলামে নিষেধ।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ, যে নিজেও পথভ্রষ্ট এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ পাঁচ শ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়।’ (মুয়াত্তা মালিক: ১৬৬১)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে নবী, স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব: ৫৯)

ইসলাম নারীদের সুন্দর ও রুচিশীল পোশাক পরিধান করতে বলে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ (সুরা আরাফ: ২৬)

এই আয়াতে সৌন্দর্য দান করার অর্থ হলো- সুন্দর, রুচিশীল ও আরামদায়ক পোশাক পরা। যে পোশাক আধুনিক ফ্যাশনের নামে আদিমতাকেই উসকে দেয় তা কোনোভাবে রুচিশীল বা মার্জিত পোশাক বলে বিবেচিত হতে পারে না। বিষয়টি সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।

মনে রাখতে হবে- পোশাক শুধু জীবনে নয়, মরণেও থাকবে। নবী কারিম (স.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইকে কাফন দেবে, সে যেন ভালো কাপড় দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করে। (মুসলিম: ২০৭৪)
পোশাকের সৌন্দর্য বাড়াতে কারুকাজ ও নকশা দিতেও ইসলাম বাধা দেয় না। কিন্তু অর্ধ উলঙ্গ কখনো সুন্দর ও শালীনতার বাহন নয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মেয়ে উম্মে কুলসুমের গায়ে হালকা নকশা করা রেশমি চাদর দেখেছেন।’ (সহিহ বুখারি: ৫৮৪২)

ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, নারী-পুরুষের পোশাক স্বতন্ত্র। রাসুল (স.) অভিসম্পাত করেছেন ওই পুরুষকে যে নারীর পোশাক পরে এবং ওই নারীকে যে পুরুষের পোশাক পরে। (আবু দাউদ: ৪০৯৮)

বিধর্মীদের অনুকরণে পোশাক পরিধান করাও ইসলামে নাজায়েজ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অমুসলিমদের পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (তাবারানি আওসাত: ৩৯২১)

মুমিন নারীরা শুধুমাত্র প্রসিদ্ধির জন্যও যা খুশি তা পরিধান করতে পারবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে।’ (আবু দাউদ: ৪০২৯)

পোশাক-পরিচ্ছদ শুধু লজ্জা নিবারণের জন্যে নয়, ইসলাম নারীকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে। বসিয়েছে সম্মানের আসনে। তাই শালীনতা মুমিন নারীর গুণ। হাদিসে ঘোষণা করা হয়েছে, সন্তানের জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে। একজন সভ্য ও শিক্ষিত মায়ের দীক্ষায় সুপথের দিশা পায় পুরো পরিবার, পুরো জাতি। অশালীন জীবনাচার সাময়িক; কোনো সমাজেই এর চূড়ান্ত গ্রহণযোগ্যতা নেই।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল নারীকে শালীন পোশাকের মর্যাদা উপলব্ধি করার এবং স্বাধীনতার নামে অশালীনতার পথ পরিহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 
Electronic Paper