চৌগাছায় নান্দনিক সাজসজ্জার দূর্গাপূজা শুরু
শামীম রেজা, চৌগাছা
🕐 ৯:২১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০২, ২০২২
মহাষষ্ঠির মধ্য দিয়ে যশোরের চৌগাছায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদিয় দূর্গাপুজা উৎসব মূখর পরিবেশে শুরু হয়েছে। রবিবার ষষ্ঠি তিথিতে অশ্বমেথ বৃক্ষের পূজার মাধ্যমে আবাহন করা হয় দেবী দূর্গার। খুব সকাল থেকেই মন্ডবে মন্ডবে বিহিত পুজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পুজার আনুষ্ঠানিকতা। এ বছর উপজেলাতে মোট ৫০টি মন্ডবে পুজা উদযাপন হচ্ছে বলে উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি জানিয়েছে।
এবারের দূর্গা পূজায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভিন্ন কমিটিতে পূজার নিরাপত্তা ও স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে অর্ন্তভূক্ত করার কারনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। অন্যান্ন বারের তুলনায় পূজা মন্ডব এলাকায় নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে চৌগাছা পৌরসভায় ৬টি মন্ডবসহ গোটা উপজেলাতে ৫০টি মন্ডবে শারদীয় দূর্গাপুজা হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বিদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে শারদীয় দূর্গাপুজা। সে কারনে প্রতিবছর এই সময় এলে হিন্দু সম্প্রদায়দের মাঝে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। অন্য বছরের মত এবছরও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি।
শনিবার পৌরসভার তারনিবাস-কংশারীপুর শ্রীশ্রী পৌর কালি মন্দির, আদিবাসি মহাশশ্মান শ্রীশ্রী সার্বজনিন মন্দির, উপজেলার টেংগুরপুর গ্রামের টেংগুরপুর দূর্গা মন্দিরসহ বেশ কিছু মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, চন্ডিপাঠ, বিহিত পুজার মধ্য দিয়ে মহাষষ্ঠির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বর্গ থেকে দেবীদুর্গার আগম ঘটেছে, মন্ডবে মন্ডবে। বেড়েছে ভক্তদের আগমন, ভক্তরা দেবির পায়ে প্রসাদ দেন, প্রনাম করেন মূলত এই সব কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে দূর্গা উৎসবের আনুষ্ঠিকতা শুরু হয়েছে বলে জানান মন্ডবের পুরোহীতগণ।
টেংগুরপুর দূর্গা মন্দিরের পুরোহীত সুবাষ চক্রবর্তী বলেন, মহাষষ্ঠির মধ্য দিয়ে দূর্গাউৎসবের আনুষ্ঠিনকতা শুরু হয়ে গেছে, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের ইতি ঘটবে। মা দূর্গা শান্তির বাণি নিয়ে এসেছেন, সকাল থেকেই মন্ডবে ভক্তদের ভিড় বেড়েছে। এদিকে দূর্গা উৎসবে বাঁধ সেজেছে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, এমনটিই বলছেন মন্ডবে আসা অসংখ্য ভক্তরা।
উপজেলার পুড়াপাড়া থেকে আদিবাসি মহাশশ্মান শ্রীশ্রী সার্বজনিন মন্দিরের আসা ভক্ত সুখিবালা, ভক্তি রানী, ভগবতি রানী বলেন, এবছর সব কিছুরই দাম অনেক বেশি, যার কারনে ইচ্ছা থাকা সত্বেও উৎসবে সেভাবে আনন্দ হচ্ছেনা। পরিবারে বড়রা নতুন কিছু কিনতে না পারলেও ছোটদের জন্য কিনেছি, কিন্তু অন্য বছর গুলোতে পরিবারের সকলের জন্যই নতুন পোষাকসহ অনেক কিছুই কেনা হতো।
সুমন সরকার বলেন, দূর্গাউৎসব মানেই অফুরান্ত আনন্দ, কিন্তু আমাদের মত খেটে খাওয়া মানুষেরা এবারের উৎসবে বেশ কষ্টে আছি। তারপরও ধার দেনা করে সব কিছুই সচল রাখার চেষ্টায় আছি। তবে এবারের দূর্গা পূজায় প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গকে অন্তভুক্ত করায় পূজা মন্ডবে শান্তি শৃঙ্খলা পরিবেশ লক্ষ্যনীয়।
এ ছাড়া প্রতিটি মন্ডব সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। থানা পুলিশের সহযোগীতায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষনের জন্য প্রতিটি মন্ডবে একজন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে নিরাপত্তার সাথে ধর্মীয় উৎসব পালন করছে স্থানীয়রা।
উপজেলায় দূর্গা পুজা উদযাপন বিষয়ে পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক অভীজিৎ রায় বলেন, উপজেলায় ৫০টি মন্ডবে পুজা উৎযাপন হচ্ছে। ইতোমধ্যে মন্ডবে মন্ডবে সরকারী অনুদান পৌছে দেয়া হয়েছে। সকলের সহযোগীতায় বিসার্জনের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। নিরাপত্তাও সন্তষজনক।
ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, কয়েকটি নিরাপত্তা বলয়ে পূজা মন্ডবে পূজা হচ্ছে। দূর্গা পূজাকে কেন্দ্রকরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে কোনো গোষ্ঠী বা সন্ত্রাসী পূজাকে কেন্দ্রকরে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটাতে চেষ্টা করলে তাৎক্ষনিক ভাবে দমন করা হবে। পুলিশ সার্বক্ষনিক তৎপরতার সাথে আছে।