ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বাদে মানে এখনো বিখ্যাত কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
🕐 ৯:৩২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২

স্বাদে মানে এখনো বিখ্যাত কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই

ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সাম্রাজ্যের হাত ধরেই দুই বাংলায় কুলফি মালাইয়ের আগমন ঘটে। বাংলাদেশের অন্তর্গত কুষ্টিয়ার বিখ্যাত কুলফি মালাইয়ের স্বাদ সব জায়গার থেকে ভিন্ন। যে স্বাদ পূরণ করেছে স্বয়ং রবি ঠাকুরের রসনার বাসনা। রসনাবিলাসি অনেক বাঙালির কাছে এখনো ‘কুলফি মালাই’ পছন্দের একটি খাবার।

কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের একটি বিখ্যাত খাবার। এ মালাই তৈরি করতে দুধ, কিসমিস, ডিম, কলা, বাদাম, বরফ প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। স্বাদের কারণে এটি সারা দেশের মধ্যে বিখ্যাত। কুষ্টিয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটক এই মালাই খুব পছন্দ করেন।

জানা যায়, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া এবং শিলাইদহ ইউনিয়নের দুটি গ্রাম বিখ্যাত ‘কুলফি মালাইয়ের গ্রাম’ নামেই। কুলফি মালাই প্রস্তুত ও বিক্রয়, এই প্রাচীন জনপদের বহু পুরনো পেশা। আইসক্রিমের মতো কুলফিকে বাক্সে তৈরি করা হয় না। লালসালু কাপড়ে মোড়ানো বড় সিলভারের পাতিলে বরফের আড়ালে রাখা হয় সুস্বাদু কুষ্টিয়ার কুলফি। যার ফলে গ্রীষ্মে বাংলাদেশের আইসক্রিম ও মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে কুমারখালী এক অন্যতম আকর্ষণ।

অসাধারণ স্বাদ ও সুঘ্রাণের জন্য এখানকার কুলফির সুখ্যাতি করেছে সারা বাংলাদেশে জুড়ে। কুষ্টিয়ার কয়া ইউনিয়নের কুলফি প্রস্ততকারক ও বিক্রেতা আজিজুল হক বলেন, প্রায় ৩৪বছর ধরে কুলফি মালাই তৈরি ও বিক্রি করছি। আমাদের এলাকার কুলফির সুখ্যাতি রয়েছে সারা দেশে জুড়ে।

তিনি আরও বলেন, কুলফি বানাতে প্রথমে দুধকে ফুটিয়ে তা ঘন করা হয়। তারপর ঘন দুধের সঙ্গে চিনি, এলাচ, বাদাম, কিশমিশ ও গরম মসলার সিক্রেট রেসিপির মেশানো হয়। এরপর তা বরফের মাঝে রাখা হয়। ২০ কেজি ঘন দুধ থেকে বরফ প্রস্তুত করা হয় ১০০ থেকে ১৫০ পিস কুলফি। কিছু জায়গায় জাফরান ও পেস্তা ব্যবহার করা হয়।

কুলফি বিক্রেতা আজগর আলী বলেন, কুলফি মালাই প্রচলিত আইসক্রিমের মতো শক্ত হয় না। এটি ঘন ও হিমায়িত মিষ্টি হয়। তাই এই ঘনত্বের কারণেই কুলফি আইসক্রিমের চেয়ে গলে যেতে আরও বেশি সময় নেয়।

কুষ্টিয়ার সাগরখলী আদর্শ ডিগ্রি কলেজর প্রভাষক মশিউর রহমান সুমন বলেন, বহু আগে থেকেই কুষ্টিয়ার কুমারখালির কুলফি মালায়ের সুখ্যাতি রয়েছে। কালের পরিক্রমায় এখনো এর স্বাদগন্ধ একই আছে।

তিনি আরও বলেন, প্রায় সব বয়সের মানুষ এখনো কুলফি পছন্দ করেন। আগে টিনের কৌটা থেকে বের করে কলা পাতার উপর মালাই দেয়া হতো। এখন অবশ্য পলিথিনে দেয়া হয়। তবে কলাপাতার উপর কুলফির স্বাদ এখনো ঠোঁটে লেগে আছে। কুলফি জড়িয়ে আছে বাঙালির ছোটবেলায় আবেগের সঙ্গে। বিভিন্ন নামী দামী কম্পানির রকমারি ফ্লেভারের আইসক্রিমের মাঝে আজও বাঙালির মনের অনেকটা জায়গা দখল করে আছে পছন্দের মালাই কুলফি।

কুষ্টিয়ার কুলফির সঙ্গেই জড়িয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের নাম। স্থানীয় ইতিহাস প্রেমীদের মতে, পদ্মা-গড়াইয়ের মধ্যবর্তী স্থান ছিল ঠাকুর পরিবারের জমিদারীর অন্তর্গত। ১৮৯১ সাল থেকে শুরু করে ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনার জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহ গ্রামেই থাকতেন। এখানকার মনোমুগ্ধকর পরিবেশে কবি অগণিত প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প রচনা করেছেন। লোকমুখে প্রচলিত, এই সময়েই সম্ভবত কুষ্টিয়ার কুলফির প্রতি আকৃষ্ট হন স্বয়ং কবিগুরু।

 

 

 
Electronic Paper