ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সঙ্গ-অনুসঙ্গে আত্ম-উন্নয়ন

সব্যসাচী নিলয়, সিকৃবি
🕐 ২:৪৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২

সঙ্গ-অনুসঙ্গে আত্ম-উন্নয়ন

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম বর্ষে ঢের মানুষের সাথে পরিচিতি হয়। এরপর নানান জনের সঙ্গ-অনুসঙ্গে কাটে পরের দিনগুলো। তবে একটা সময় পর গুটি কয়েক বন্ধুই পথচলায় পাশে থাকে; তারাই পরিণত হয় কাছের মানুষে। এ সময় একজন শিক্ষার্থীর জীবনে সেই বন্ধুদের প্রভাব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি থাকে। কথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা জলে ভাসে। এর মর্মার্থই যেন ফুটে উঠেছে রুহাদ, সাইফ, আরিফ আর কৃষ্ণের ‘সঙ্গ-অনুসঙ্গে আত্ম-উন্নয়ন’- এর গল্পে।

বর্তমানে এই চার বন্ধু সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের গল্পটার শুরু সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া হলের ১০৫ নম্বর কক্ষ থেকে। প্রথম বর্ষে চার বন্ধু একসাথে এই কক্ষে চলে আসেন। এরপর আত্ম-উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড নিয়ে ভাবতে থাকেন তারা। কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী হওয়ায় গবেষণা ও প্রযুক্তিগত দিকগুলোর প্রতি তাদের ঝোঁক একটু বেশি।

তারা চিন্তা করেন লেখাপড়ার পাশাপাশি এমন কোনো কাজ শিখবেন যা পরবর্তীতে তাদের কাজে আসবে। ব্যস! যেই ভাবা, সেই কাজ। চার বন্ধু নিজেদের প্রচেষ্টায় নতুন কিছু শিখতে শুরু করেন। মাঝখানে করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের কাজে ভাটা পড়ে নি, যেমনটা পড়ে নি তাদের বন্ধুত্বে।

আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা আছে। সেখানে তাদের চারজনকে নিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে চায়ের ব্যবস্থাও হয়ে গেল। চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে চার বন্ধুর গল্প শুনতে লাগলাম। আবাসিক হলে একই কক্ষে তাদের থাকা হয়, একই বিষয়ে লেখাপড়াও হচ্ছে তাদের। তবে তাদের সবার আত্ম-উন্নয়নমূলক কিছু করার তীব্র ইচ্ছা সম্ভবত তাদের বন্ধুত্বে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। ফাহিম মাহফুজ রুহাদ পড়ালেখা করতে চট্রগ্রাম থেকে সিলেট এসেছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করছেন।

জানালেন, তার ইচ্ছা কৃষিতে মেশিন লার্নিং ও ডীপ লার্নিং প্রয়োগ করা। তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন বাংলাদেশের কৃষি আধুনিক পৃথিবীর সাথে পাল্লা দিয়া এগিয়ে যাবে এবং আমরা প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট কৃষিতে প্রবেশ করবো। সাইফ ইজলালের তার পরিবারসহ ঢাকায় থাকা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রাপ্তির খাতায় নতুন করে পেয়েছেন ওয়েব ডেভেলপমেন্টে আয়ত্ত। জানালেন, একজন কৃষি প্রকৌশলী হিসেবে কৃষকদের জন্য সহায়ক বিভিন্ন ওয়েব এপ্লিকেশন বানাতে চান।

আশরাফুজ্জামান আরিফের নিবাস কুমিল্লায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে তার মাথায় সৃজনশীল বিষয়ের প্রতি আগ্রহ ভর করে। সেই থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। তার ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে তিনি বললেন, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং-এর মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রের নকশা, পরিকল্পনা ও অন্যান্য তথ্য পৌঁছে দিতে চাই, যাতে কৃষি প্রযুক্তিকে কৃষকদের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করা যায়। কৃষ্ণ চন্দ্রের বাড়ি টাংগাইল জেলায়।

বাকি তিনজনের মত সফটওয়্যার ব্যবহারে পারদর্শিতা না থাকলেও, তার আছে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কাজের অভিজ্ঞতা। মূলত মাঠ পর্যায়ে গবেষণা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে তার। জানালেন, বর্তমানে তিনি অল্প সংখ্যক গবেষণার কাজ করছেন এবং ভবিষ্যতে কৃষিক্ষেত্রে আরও গবেষণা করতে চান।

চার বন্ধুর কাছে তাদের গল্প শোনার শেষের দিকে আকাশের সূর্য পশ্চিমে হেলতে শুরু করলো। শরতের বিকেল সাক্ষী হয়ে রইলো একটা দারুণ গল্পের। গল্পটা সঙ্গ-অনুসঙ্গে আত্ম-উন্নয়নের। তার থেকেও বড় গল্পটা তাদের চারজনের মাঝে অটুট এক বন্ধনের।

 
Electronic Paper