ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কাজের আশায় সকাল-সন্ধ্যা পার করে তোফাজ্জলরা

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
🕐 ৪:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২২

কাজের আশায় সকাল-সন্ধ্যা পার করে তোফাজ্জলরা

ভর দুপুর সূর্যটা তখন গনগন করে জ্বলছে মাথার আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম চায়ের দোকানে হন্তদন্ত হয়ে দোকানে ঢুকলো চারপাঁচ জনের একটা পাউরুটি আর চায়ের অর্ডার দিতে না দিতেই হঠাৎ একটা কন্ঠস্বর বলে চল ডাল দিয়ে কয়টা ভাত খাই সকাল থেকেই কিছু খাওয়া হয়নি। পরক্ষণেই আবার ছুটে চললো পাশের ভাতের হোটেলে। লোভ সামলাতে না পেরে পিছু নিলাম দলটির।

তোফাজ্জল, হালিম, আবদুল করিম,জাকারিয়া ও মাসুদ সহ পাঁচ জনের দলটি এসেছে চাপাই থেকে। কিন্তু চাপাই থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দুরুত্ব অনেক বেশি তাই কৌতূহল বেড়ে গেল। তাদের খাওয়ার সময় গল্প শুরু হলো। তাদের নিজস্ব টুকটাক জমি আছে। সেখানকার কাজ শেষ এখন ভাসমান শ্রমিক হিসেবে এসেছে পাট কাটতে অথবা যেকোন কাজ পেলেই হয়। অথচ গত দুদিন কাজ না পেয়ে দিশেহারা তারা। চোখেমুখে উদভ্রান্তের ছায়া।

কথা হচ্ছিল তোফাজ্জল হোসেনের সাথে। ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে অভাবের সংসার তার। জীবিকার টানে বছরের প্রায় ছয় মাস এ অঞ্চল সে অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান কাজের সন্ধানে। তোফাজ্জলের মতই আরো অনেকেই গ্রাম থেকে দিনমজুর কাজের খোঁজে আসে শহরে। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় মানুষ বেচাকেনা। মাঝে মাঝে সারাদিন অপেক্ষার পরও যেদিন কাজ হয় না সেদিন ঠাই হয় রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে অথবা কোন মসজিদের বারান্দায় মানুষরূপী এসব পণ্যের।

আবদুল করিম বলেন এলাকায় তার পক্ষে কাজ করা সম্ভব না। নিজের অল্প একটু জমি আছে কিন্তু সেটা দিয়ে তার ছয়জনের পেট ভরে না। একটা ছেলে কলেজে পড়ে। হঠাৎ সব কিছুর মুল্য বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন। কিভাবে চলবে সংসার আর ছেলে মেয়ের পড়াশোনাই বা কিভাবে হবে। সাতপাঁচ না ভেবেই চলে এসেছেন। তিনি বলেন আগে বেচে থাকতে হবে ছোট ছেলেমেয়েদের ক্ষুধার কান্ন বড় ছেলেটার পড়ার খরচ শুধু এটুকু হলেই বাঁচি। বাবা গরীব মাইনসের বেচে থাকাটাই কষ্টকর।

একটা সময় ছিল যখন সমাজে দাস হিসেবে মানুষকে বিক্রি করা হতো। কালক্রমে সেই প্রথা উঠে গেলেও আধুনিক যুগে মানুষ এখনও পণ্য হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র নামটিই হয়েছে পরিবর্তন। অভাবের সংসারে দুই বেলা ভাতের জন্য এসব মানুষ পণ্য হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েন রাস্তায়। শীতের কুয়াশা ঢাকা ভোরে চাদর মুড়িয়ে রাস্তার পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে অনিশ্চিত কাজের আঁশায়। আর দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অল্প টাকায় এসব শ্রমিককে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ।

গোয়ালন্দ রেলস্টেশন চত্বরে ভোর হতেই প্রতিদিন দেখা মেলে একদল মানুষের। এসব মানুষ শ্রমিকের বেশে পণ্য হয়ে আসে শহরের রাস্তায়। বিভিন্ন নাম থাকলেও এসব মানুষ সবার কাছে শ্রমিক নামেই পরিচিত বেশী। গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ আসেন এখানে কাজের খোঁজে। নানা পেশার মানুষের এ যেন এক মিলনমেলা। শ্রম বিক্রির এই বাজারে অনেকেই কিনতে আসে দিনমজুর শ্রমিক। এসব মানুষের প্রতিদিনই মেলে না কাজের নিদিষ্ট খোঁজ।

এখানে শ্রম বিক্রি করতে আসা হালিম, জাকারিয়া বলেন, বাড়ি থেকে এখানে কাজ করে বাড়তি কিছু বেশী টাকা পাওয়া যায় তাই আমারা শ্রমিক হয়েই আসি। আমার মতো গ্রামের অনেকেই আসে শ্রম বিক্রি করতে। এখানে চুক্তি মোতাবেক একজন শ্রমিককে তিনবেলা খাওয়া ও থাকতে দিতে হয়। সাধারণত প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ টাকা পাই আমরা। তবে কম বয়সী শ্রমিকদের চাহিদা বেশি। বয়স্কদের সেভাবে নিতে চায়না। তবে যে বাড়িতে আমরা কাজ করি সেখানেই থাকতে হয় বলে অনেক সময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়।

গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজের অধ্যাপক আওয়াল আনোয়ার খোলা কাগজ কে বলেন দিনমজুর মানুষের প্রতিদিনের চাহিদা খুবই কম। সামান্য কিছু টাকার জন্য সারাদিন কাজ করতে চাই এসব মানুষ। তবে কষ্ট হলেও সত্যি এসব মানুষকে সমাজের এক শ্রেণির শিক্ষিত মানুষ পণ্য হিসেবে মনে করে। যারা মানুষকে মানুষ না ভেবে পণ্য ভেবে থাকে তাদের সমাজের শিক্ষিত অসুস্থ মানসিকতার কীটপতঙ্গ বলে মনে করেন তিনি।

 

 
Electronic Paper