ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জেলে পল্লীতে ভাঙন আতঙ্ক

শমিত জামান, ঈশ্বরদী (পাবনা)
🕐 ৩:১৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২২

জেলে পল্লীতে ভাঙন আতঙ্ক

ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর তীরে ৫নং সাঁড়া ঘাট। ব্রিটিশ শাসনামলে দেশের অন্যতম সাড়া নৌবন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। সময়ের বিবর্তনে এখানে নৌবন্দরের কোন স্মৃতি চিহ্ন না থাকলেও ঐতিহ্য ও বন্দরের নাম ডাক এখানে রয়ে গেছে। হার্ডিঞ্জব্রীজ ও লালন শাহ সেতু থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এ সাঁড়া ঘাট এখন ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীনের পথে।

ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের আরামবাড়িয়া থেকে পাকশী ইউনিয়নের হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার নদীর তীরে হার্ডিঞ্জব্রীজ গাইড ব্যাংক বাঁধ, লালনশাহ ব্রীজ নদী শাসন বাঁধ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ রয়েছে। শুধুমাত্র মাঝের সাড়া ৫নং ঘাট এলাকার প্রায় ১ কিলোমিটার নদীর তীরে বাঁধ নেই। প্রতিবছর নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হলেই এখানকার মানুষের মাঝে ভাঙ্গন আতংক শুরু হয়। গত বছর এ ঘাটের প্রায় ৫০ ফুট এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

সরকারিভাবে নির্মিত সাড়া মৎস্য সমিতির ঘরটি যে কোন সময় নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। ঘরটির নিচের এক তৃতীয়াংশ মাটি সরে গেছে এখন শুধুমাত্র নদীতে ভেঙ্গে পড়ার অপেক্ষা আশে-পাশের দোকানপাট যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে এবং নদী পাড়ের কাঁচা রাস্তাটি বিলীন হয়ে যাবে। নদী থেকে বসতবাড়ির দুরত্ব মাত্র ১০ ফুট। যে কোন সময় নদীতে বাড়িঘর বিলিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাঁড়া ঘাট এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা আবুল কাশেম জানান, ৫নং সাঁড়া ঘাটের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে প্রায় ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদী রক্ষা বাঁধ রয়েছে। বর্ষাকাল এলেই আমাদের মাঝে ভাঙ্গনে আতংক শুরু হয়। এবার অবস্থাতা খুবই ভয়াবহ। নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বসতবাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। এবার ভাঙ্গনে নদীতে বসতবাড়ি বিলিন হয়ে যেতে পারে। আমরা খুবই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছি।

ব্যবসায়ী মিলন জানান, এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এটি মূলতঃ জেলে পল¬ী হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা খুব আতংকের মধ্যে রয়েছে। বাপ-দাদার বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেলে পথে বসতে হবে। সবাই এখন নিঘুম রাত কাটাচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধি ও পাউবোর কর্মকর্তাদের কাছে আমরা গিয়েছি। পাশাপাশি মানববন্ধন করেছি কিন্তু কেউ বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি।

জেলে হালদার আক্ষেপ করে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা প্রায়ই এসে ভাঙন দেখে যায়। কিন্তু ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার উদ্যোগটা কেউ নেয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আসে মাপামাপি করে চলে যায়। আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর কি তারা বাঁধ দিবে? দুই পাশেই বাঁধ অথচ আমাদের মতো গরীবদের বসতি এলাকায় শুধু বাধ নেই। আমরা কার কাছে আমাদের কষ্টের কথা বলবো কে শুনবে আমাদের কথা?

ইউপি সদস্য (মেম্বার) মোঃ রফিক জানান, সাঁড়ার ৫নং ঘাট এলাকার মানুষজন খুবই আতংকে রয়েছে। এখানে ভাঙ্গন শুরু হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাবে। এখান থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ও লালন শাহ সেতু, পূর্বপাশে ঈশ্বরদী ইপিজেড। এসব স্থাপনাও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। এলাকার লোকজনের চোখে মুখে আতংকের ছাপ। পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি তারা ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমাদের কি করণীয় আছে?

সাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার জানান, সাঁড়ার ৫নং ঘাটের বসতবাড়ি, দোকানপাট এখন হুমকির মুখে। যে কোন সময় বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। সাঁড়ার ৫নং ঘাটের দুই পাশে প্রায় ৭ কিলোমিটার নদী রক্ষা বাঁধ রয়েছে। অথচ শুধুমাত্র মাঝের ৫নং ঘাট এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ নেই। এখানে পাউবো। কর্তৃপক্ষ কেন বাঁধ নির্মাণ করছেনা তা আমার বোধগম্য নয়।

বারবার ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীকে এ বিষয়টি অবহিত করেছি। পাউবোর কর্তৃপক্ষ এসে বাঁধ নির্মাণের জন্য নদীর তীর পরিমাপ করেছে কিন্তু বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ভাঙ্গন শুরু হলে এখানকার প্রায় তিন হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, সাঁড়ার ৫নং ঘাট এলাকা আমি নিজে গিয়েছিলাম। গত বছর নদী ভাঙন শুরু হলে সেখানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। এখানে বাঁধ নির্মাণের বিষয়টিও নখদর্পনে রয়েছে। এবিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছি।

ইউএনও ঈশ্বরদী বলেন, আমরা বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তপক্ষকে জানিয়েছি আশাকরি তারা দ্রুত ব্যববস্থা নিবেন।

 
Electronic Paper