‘ডায়াবেটিস রোধ হলে বছরে ৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব’
প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ২:৫৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২২
দেশে মারাত্মক হারে বেড়ে চলেছে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রায় ৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিস ও প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। প্রতি বছর এই রোগের চিকিৎসায় ১ লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। বিপুল অংকের এই টাকা দিয়ে বছরে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোধ করা সম্ভব। প্রাণীর শরীরের আইপি এনজাইম কম হলে ডায়াবেটিস হয়। মানুষের এই আইপি এনজাইম স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজ পরীক্ষার মাধ্যমে বের করা যাবে। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রিভেনশন অফ ডায়াবেটিস মেলাইটাস (ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ) নিয়ে অনুষ্ঠিত সিম্পোজিয়ামে তারা এসব তথ্য জানান।
দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩ কোটি মানুষ : সিম্পোজিয়ামে উঠে আসে, ডায়াবেটিস একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। প্রায় ৪৬ কোটির বেশি লোক এ রোগে ভুগেন। আরও প্রায় ৪৬ কোটি লোক প্রি ডাইবেটিস রোগে ভুগছেন। বিশ্বে ২০০ মিলিয়ন লোক অর্থাৎ ২০ কোটি লোক এখনো আনডায়াগনোজড হিসেবে রয়ে গেছেন। বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্ত ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ। এছাড়া প্রি ডায়াবেটিসে ভুগছেন ৭০ লাখ মানুষ। অর্থাৎ ৩ কোটি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
চিকিৎসায় ব্যয় হয় ১ লাখ কোটি টাকার বেশি : বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবার ডায়াবেটিসের পিছনে ৮৬২ ডলার খরচ করে। প্রতি বছর ১ কোটি ৩১ লক্ষ লোকের জন্য ১ লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। ডায়াবেটিস রোধ করা গেলে এ টাকা দিয়ে প্রতি বছর দেশে ৪ টি পদ্মা সেতু তৈরি করা যাবে।
স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজ টেস্টের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব : সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় যদি স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজ টেস্টের মাধ্যমে দেশের মানুষের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে পারে তবে দেশে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে। এ পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষের ডায়াবেটিসের আগাম ও পরবর্তী পর্যায় যদি প্রকাশ করা যায় তবে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। প্রতি বছর দেশে ১ কোটি ৩১ লাখ লোকের জন্য ১ লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। ডায়াবেটিস রোধ করা গেলে এ টাকা দিয়ে প্রতি বছর দেশে ৪টি পদ্মা সেতু তৈরি করা যাবে।
পরীক্ষার মাধ্যমে যেভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব : বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের অনারারি প্রফেসর ডা. মধু এস মালো মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে তিনি বলেন, তখন আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছিলাম। আমি কিছু মাউস বা ইদুর মডেল নিয়ে কাজ করেছি। যে মাউস মডেলগুলোতে একটি এনজাইম কম ছিল। এর নাম ইন্টেস্টাইনাল এলকালাইন ফসফেটেজ। ইন্টেসটিনাল এলকালাইন ফসফেটজের কাজ হচ্ছে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াল টক্সিনকে ধ্বংস করা। এই টক্সিনগুলো যদি রক্তে যায় তবে প্রদাহ সৃষ্টি করে। প্রদাহ যদি প্যানক্রিয়াসের বিটাসেলে আক্রান্ত হয় এটি টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস। আর প্রদাহ যদি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় তবে তা হচ্ছে টাইপ টু ডায়াবেটিস।
তিনি আরো বলেন, আমি যে মাউসগুলোর কথা বলছিলাম তাদের ইন্টেসটিনাল এলকালাইল ফসফেটস ছিল না। তখন আমার থিউরি হলো এই মাউসগুলো টক্সিনকে ধ্বংস করতে পারবে না। এদের ডায়াবেটিস হওয়া উচিত। এদের পরীক্ষা করে দেখতে পেলাম এদের ডায়াবেটিস আছে। এদের কোলেস্টেরল লেভেল হাই, ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল হাই, এইছডিএল লো, এলডিএল লেভেল হাই। এদের লিবার ডেমেজও হয়ে গেছে।
অধ্যাপক ডা. মধু এস মালো আরো বলেন, এনিমাল স্টাডির পর হার্ভার্ড থেকে চলে আসি। এখানে হিউম্যান স্টাডি শুরু করি। হিউম্যান স্টাডিতে যাবার আগে আমার মনে হলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ইদুরে যদি ইনজামইম কম তবে ডায়বেটিস আক্রান্ত মানুষেরও এই এনজাইম কম থাকে। পরীক্ষা করে এর সত্যতা পেলাম। যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত তাদের ওই এনজাইমও প্রায় ৫০% কম। এ তথ্য পাবার পর আমার থিউরি হলো, যে এই আইপি এনজাইম ডিফিসিয়েন্সি সম্ভবত ডায়াবেটিস তৈরি করছে। এটিই ডায়াবেটিস রোগের কারণ। তখন আমি দুটো গ্রুপকে নিলাম।
এক গ্রুপের আইপি এনজাইম বেশী এবং অন্য গ্রুপে আইপি এনজাইম কম। এদের আমি পাঁচ বছর পর্যবেক্ষণ করি। পর্যবেক্ষণে দেখলাম যাদের আইপি এনজাইম কম তাদের ১৪ গুণ বেশি ডায়াবেটিস হচ্ছে। তিনি বলেন, এই আবিষ্কারের ভিত্তিতে টেস্ট ডেভলভ করেছি। যার নাম স্টুল এলকালাইন ফসফেট টেস্ট। এই এনজাইমটা স্টুলে পাওয়া যায়। এই এনজাইম স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজের পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস বের করতে পারি। যাদের স্টুলে স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজ কম থাকলে তাদের ডায়াবেটিস বেশী।
তিনি আরো বলেন, ৩০-৬০ বছর বয়সী মানুষদের ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং করতে হবে। তাদের মধ্যে আইপি এনজাইম কম থাকলে স্বাস্থ্য শিক্ষা দিতে হবে। এর মাধ্যমে আমার মতে বিশ্ব থেকে ডায়াবেটিস দূর হবে।