রাজা ও চাকাভাতে বধ বাংলাদেশ
রাহুল রাজ
🕐 ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৭, ২০২২
বাজে ফিল্ডিং ও ধারহীন বোলিংয়ে ৯ বছর পরে জিম্বাবুরে কাছে সিরিজ হারল বাংলাদেশ। সিকান্দার রাজা ও রেজিস চাকাভার জোড়া সেঞ্চুরিতে ১৫ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটের জয় নেয় আফ্রিকার দলটি। তৃতীয় ম্যাচে আরো একবার জয় তুলে নিতে পারলে ধবল ধোলাই হবে বাংলাদেশ। রাজা ১১৫ বলে এবং চাকাভা মাত্র ৭৩ বলে নিজেদের শতক তুলে নেন।
অর্ধশতকের পর থেকে বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন দুজন, সফরকারী বোলারদের তুচ্ছ করে দলকে জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছেন তারা। ব্যক্তিগত ১০২ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তামিমের তালুবন্দি হয়ে চাকাভা ফিরলেও রাজা রাজ্য জয় করে ১১৭ রানে অপরাজিত থেকেই শিরোপা ঘরে তুলেছে। সেই সঙ্গে হয়েছেন টানা ম্যাচ সেরা। জিম্বাবুরের এই জয়কে সহজ করেছে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। হাতে পড়া সহজ ক্যাচগুলো ধরে রাখতে না পেরে আবারও প্রমাণ দিয়েছে ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। বাংলাদেশের পক্ষে হাসান মাহামুদ ও মেহেদী মিরাজ ২টি করে উইকেট তুলতে পেরেছিলেন।
এর আগে জিম্বাবুয়ের বোলারদের সমীহ করে ৩০০ বলের ১৪৯টি-ই ডট দিয়েছে সফরকারীরা। পঞ্চাশ ওভারের ইনিংসে ডট হয়েছে প্রায় ২৫ ওভার। অর্থাৎ নিজেরা ব্যাট থেকে রান তুলেছে ২৫ ওভারে। যেখানে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ২৯০ রানের সংগ্রহ পেয়েছে অধিনায়ক তামিম ইকবালের দল। এই রানের মধ্যে ২৯টি চার ও ৪ ছয়ে বাউন্ডারি থেকেই এসেছে ১৪০ রান। ব্যাটসম্যানদের এমন ধীরগতিসম্পন্ন ব্যাটিংয়ের কারণে স্কোর বোর্ডে বিশাল সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ দল।
আগের ম্যাচে একই ভেন্যুতে অর্থাৎ হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে যেখানে ৩০৪ রানের লক্ষ্য দিয়েও ২০-২৫ রান কম হওয়ার আক্ষেপে পুড়ে ম্যাচ হেরেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা, সেখানে এবার ২৯১ রানের টার্গেট দিয়ে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে নামে বাংলাদেশ। টস হেরে একাদশে ৩টি পরিবর্তন নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এ নিয়ে এবারের সফরে টানা ৫টি টসই হার বাংলাদেশের।
ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি নিজের ৫৫তম অর্ধশত তুলে নেন অধিনায়ক তামিম যেখানে ১০ চার ও ১ ছয়ে করেন ৪৪ রান। অধিনায়কের দেখানো পথে ধরে হাঁটতে চেয়েছিলেন আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয়। কিন্তু তামিম আউট হওয়ার পর দুর্ভাগ্যক্রমে ফিরে যেতে হয় তাকেও। নতুন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তর সোজাসুজি খেলা বল নন স্ট্রাইক প্রান্ত দিয়ে যেতেই সচেতন বোলার চিভাঙ্গা হাত ছুঁয়ে দেন, সরাসরি ভাঙে স্টাম্প।
ততক্ষণে নিজের জায়গা থেকে বেরিয়ে গেছেন বিজয়, আউট হন ৩ চারে ২৫ বলে ২০ রান করে। তামিম-বিজয় থাকা অবস্থায় তবুও রান উঠছিল স্কোর বোর্ডে। এরপর শান্ত আর মুশফিকুর রহিম সেটাকে টানার চেষ্টা করেন। তাদের তৃতীয় উইকেট জুটি থেকে আসে ৫০ রান। মুশফিক ১ চারে ৩১ বলে ২৫ রানে আউট হলে ভাঙে এই জোট। শুরুর এই তিন ব্যাটসম্যান ফিরে যাওয়ার পর নিজেদের ক্যারিয়ার বাঁচাতেই যেন ব্যস্ত শান্ত, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে দলের রান রেট কমিয়ে ৫৫ বলে ৩৮ রানে ফেরেন শান্ত।
যেখানে ইনিংসে এক সময় ৬-এর ওপর চড়েছিল রান রেট, সেখানে ৩০ ওভার শেষে ৫ গড়ে ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে সংগ্রহ মোটে ১৫১ রান। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ আটকে যান খোলসের মধ্যে, তবে অন্যপ্রান্তে হাত খুলে খেলে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন আফিফ হোসেন। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আগ্রাসী ব্যাটিংই কাল হয় তার। আউট হওয়ার আগে ১০০ স্ট্রাইক রেটে ৪১ বলে ৪১ রানের ইনিংসটি সাজান ৪টি চারের মারে।
ইনিংসের ৪৫ ওভার শেষের পরও খোলসে আটকা মাহমুদউল্লাহ। তার যাবতীয় ধ্যানজ্ঞান যেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক নিয়ে। সেটি আসলো ইনিংসের ৪৭তম ওভারে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ৬৯ বল খেলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। তার আগে আফিফের মতো রান বাড়াতে গিয়ে ১২ বলে ১৫ রান করে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজ।
শেষদিকে ফিফটির কোটা ছোঁয়ার পর কিছুটা দ্রুত রান এসেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। তার ৮৩ বলে ৮০ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ২৯০ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৫৬ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন অফ স্পিনার সিকান্দার রাজা।