ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চরফ্যাশনে কামার পল্লীতে নেই কর্মব্যস্ততা

রুবেল আশরাফুল, চরফ্যাশন (ভোলা)
🕐 ৯:১৮ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২২

চরফ্যাশনে কামার পল্লীতে নেই কর্মব্যস্ততা

চরফ্যাশনে কর্মব্যস্তহীন অলস সময় পার করছে কামাররা, টুং টাং শব্দ নেই কামারপল্লীতে। ঈদুল আযহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তবে ঈদকে ঘিরে গজারিয়ায় কামারপল্লীতে নেই কোন কর্ম ব্যস্ততা, নেই টুং টাং শব্দের মুখরিত পরিবেশ। স্বাভাবিক কারণেই নেই কোন ঈদের আমেজ।

তাই কর্মহীন অলস সময় অতিবাহিত করছেন চরফ্যাশনের কামাররা। স্থানীয় কামারের দোকানে ঈদে পশু জবাই ও মাংস কর্তনের জন্য আগে থেকেই দা, বটি, ছুরি ও কাটারি প্রস্তুত করে সাজিয়ে বসে থাকলেও এই মুহুর্তে নেই তেমন কোন ক্রেতা। প্রতি বছর কোরবানী ঈদকে ঘিরে টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকতো চরফ্যাশনের কামারপল্লীর দোকান গুলো।

এ বছর পুরোটাই যেন ভিন্ন চিত্র। তেমন চাহিদা না থাকায় নিরবতা বিরাজ করছে কামারের দোকানগুলোতে। ঈদকে সামনে রেখে আয়ের বড় লক্ষ্য থাকলেও নদীতে মাছ না থাকায় ভেস্তে গেছে বলছেন চরফ্যাশনের কামাররা।

সরেজমিনে কামারপল্লী ঘুরে দেখা যায়, আগের মতন ব্যস্ততা নেই কামারদের মাঝে। চরফ্যাশনের কয়েকটি কামারের দোকান খোলা থাকলেও নেই তেমন কাজ। তবে স্বাভাবিক পরিবেশে একমাস আগে থেকেই কামারপল্লীতে হাতিয়ার বানানোর কাজ শুরু হতো। কামারপল্লীর পাশ দিয়ে গেলে শোনা যেত টুং টাং আর বাতাসে গরম হাওয়া। কিন্তু এবারের চিত্র পুরোই ভিন্ন। এর প্রধান কারণ এই অঞ্চলের প্রধান আয়ের এর উৎস রবি শস্য বিলীন ও মেঘনা-তেতুলিয়ায় নদীর ইলিশ মাছ না থাকা।

শশীভূষণ বাজারের কামার ব্যবসায়ী বিপুল কর্মকার জানান বারি বর্ষা ও পাহাড়ি ঢলে উপকূলীয় এলাকার রবিশস্য বিলীন হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের কাছে টাকা না থাকায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে আমাদের। আরো বলেন ভরা মৌসুমেও নদীতে মিলছেনা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ, তাই তেমন কোন চাহিদা নেই দা, ছুরি, কাটারির। আয় না থাকায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে কামাররা। এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলার চেয়ারম্যান বাজারের কামার সেলিম কর্মকার এর সাথে।

তিনি বলেন, সুদীর্ঘ ৪২ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে আয়ের চেয়ে খরচ অনেক বেশি। দা, ছুরি, বটি ও চাপাতির প্রতি একেবারেই চাহিদা নেই। তাই ব্যবসাও নেই। কর্মহীন হওয়ায় আয় রোজগার নেই। পরিবার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একই অবস্থা উপজেলার প্রায় সকল কামার পল্লীতে।

তারা বলছেন, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আশা ছিল আবারও কামার ব্যবসা জমে উঠবে এ বছর। কিন্তু লক্ষ্য থাকলেও আয় করা অনেক মুশকিল। এমন অবস্থা চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে কামারদের। তারা আরও বলেন, কামারিরা প্রায় ১ মাস পূর্বে থেকে কোরবানীর পশু কাটতে শত শত ছোট-বড় ছুরি, কাটারি গরু জবাই ও মাংস কর্তনের লক্ষ্যে মজুদ করে রাখে।

এ সমস্ত ছুরি, কাটারি ছোট-বড় ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দর। বড় ছুরি ৭০০ টাকা, ছোট ছুরি ২০০ টাকা ও চাপাতি ৬০০ টাকা, ছিলা ছুরি ১৫০ টাকা, শান দেয়ার জন্য মজুরী প্রকারভেদে ৮০-১২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তৈরি করা এসব সরঞ্জাম ক্রয় করতে জেলার পাইকাররা আসতো। এ বছর এখনো দেখা নেই পাইকারের এতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কামারের দোকানে আসা সজীব নামে এক ক্রেতা জানান, কুরবানীর আগে কামারের দোকানে ভিড় থাকে। এবছর ভিড় না থাকায় লোহা কিনে নিয়ে চাহিদানুযায়ী চাপাতি ও দা বানিয়ে নিলেন।

এদিকে নতুন সরঞ্জাম কেনা ও মেরামত বাবদ একটু মূল্য বেশি ধরায় কামার দোকানদারের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা জানান, বর্তমানে কয়লা ও রডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে মূল্য একটু বৃদ্ধি করতে হয়েছে। তবে ঈদ ছাড়া অন্যসময় কম রাখা হয় বলে স্বীকার করেন কামার শিল্পীরা।

কামার শিল্পীরা মনে করেন সরকারী কোনো আর্থিক সহযোগিতা না পেলে হয়তো এই শিল্প একদিন হারিয়ে যাবে।

 
Electronic Paper