ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আদালত ভবনে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি

সোলায়মান পিন্টু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
🕐 ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২২

আদালত ভবনে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ছোট্ট একটি ভাড়া করা ভবনে আদালতের বিচারকার্য পরিচালিত হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা চরম দূর্ভোগে পড়েছে। জায়গার অভাবে বিচারপ্রার্থীরা রোদ কিংবা বৃষ্টিতে আদালত ভবনের ভেতরে বসতে পারেনা। এমনকি ভবনের বাহিরে বসা কিংবা দাড়ানোর কোন ব্যবস্থা নেই। সিড়িঁর নিচে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় সেখানেও দাড়াতে পারেনা কেউ।

তাই নীচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত সিঁড়িতে গায়ে গায়ে ঘেঁষে দাড়িয়ে বিচার প্রার্থীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়, কখন কার মামলার ডাক পড়ে। যার ডাক পড়ে তাকে ভিড় ঠেলে এজলাসে প্রবেশ করতে হয়। এজলাস কক্ষের ভেতরে আসামীর ডকে দাড়ানোর স্পেসও অপ্রতুল। বারে কিংবা এজলাস কক্ষে আইনজীবীদের বসার জায়গাও সীমিত। ঠাসাঠাসি করে বসতে হয় আইনজীবীদের।

এজলাসের দরজার সামনে থেকে কিছুক্ষন পরপর আইনজীবি সহকারীদের সরিয়ে বিচার প্রার্থীদের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করতে হয়। এমনকি খোদ বিচারককে প্রবেশের জন্যও জায়গা করে দিতে বলতে হয় বারবার। কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের এমন চিত্র এখন প্রতিদিনের।

জানা যায়, ১৯৮৩ সালে কলাপাড়া পৌরশহরের অফিস মহল্লা এলাকায় একতলা একটি আদালত ভবন চালু করা হয়। শুরুতে ফৌজদারি বিচার কাজ পরিচালিত হয় এ চৌকি আদালতে। ১৯৮৬ সালে ভবনটির পূর্ব পাশে মুনসেফ আদালত (সহকারী জজ আদালত) চালু হয়। পরে মুনসেফ আদালত সরিয়ে নেয়া হয়। পুনরায় ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল দেওয়ানি বিচার কাজের জন্য সহকারী জজ আদালতের কার্যক্রম চালু করা হয়। নিম্নমানের উপকরন দিয়ে ভবন তৈরী করায় ২০১৬ সাল নাগাদ ওই আদালত ভবনের দেয়াল, ভিম ও পিলার ভেঙ্গে পড়ে। কার্ণিশসহ ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে। পুরো ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়।

এরপর বিচারকের খাস কামরার সিলিং ফ্যান লোহার হুক সহ ছিটকে পড়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আনিছুর রহমান গুরুতর জখম হন। সেই থেকে ভাড়াটে আদালত ভবনে চলে উভয় আদালতের বিচারিক কার্যক্রম। প্রথমে কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে ভাড়াটে আবাসিক ভবনে চলে ক’বছর। এরপর থেকে বর্তমান অবধি পৌরসভার পাশে পৌরসভার অব্যবহৃত স্বল্প পরিসরের পানি শাখা ভবনে চলে আসছে বিচার বিভাগের কার্যক্রম। যেখানে দূর দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থী মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও নারী বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বাড়ে রোদ-বৃষ্টিতে। এছাড়া বিচারপ্রার্থীদের জন্য আদালত চত্বরে কোন শৌচাগার না থাকায় দূর্বিষহ অবস্থায় পড়তে হয় তাদের। এতে মামলায় ডাক পড়ার সাথে সাথে এজলাস কক্ষে অনুপস্থিতির কারনে পূর্ব জামিন বাতিল হলে ফের জামিন নিতে হচ্ছে বিচার প্রার্থীদের।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ফৌজদারী ও দেওয়ানী আদালতের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বসার জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। মামলার গুরুত্বপূর্ন নথিপত্র রাখার তেমন ভালো জায়গা নেই। স্পেস সংকটে দু’একটির বেশী আলমিরাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ফ্লোর সহ যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে হচ্ছে নথিপত্র। এতে মাঝে মাঝে মামলার নথিপত্র খুঁজে পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে।

সূত্রটি আরও জানায়, পুলিশ শাখার হাজতখানার স্পেসও কম। পুলিশ ব্যারাক স্থাপনের জায়গা নেই। হাজতখানায় ৫/৭ জনের বেশী আসামী হলে মানবিক বিপর্যয়ের উপক্রম হয়। এছাড়া আসামী জেলে পাঠাতে দেরী হলে নিরাপত্তা জনিত কারনে রাতে আসামীদের থানায় নিয়ে রাখতে হয়। ইতোপূর্বে ভাড়াটে এ আদালত ভবনে চুরি সংঘটিত হয়েছে। অজ্ঞাত চোর সহকারী জজ আদালতের খাস কামরা এবং জুডিসিয়াল আদালতের পুলিশ শাখায় দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত করে। যদিও ঘটনার পর আদালতের পক্ষ থেকে থানায় অজ্ঞাত আসামীর নামে মামলা করা হয়। তবে উদ্ধার হয়নি চুরি হওয়া কিছুই। জড়িতদের আটক করাও সম্ভব হয়নি।

কলাপাড়া চৌকি আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ভাড়াটে ভবনে চলছে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম। বর্তমানে বড় পরিসরের কোন ভবন না পাওয়ায় স্বল্প পরিসরের এ ভবনে বাধ্য হয়ে আমাদের থাকতে হচ্ছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের একটু কষ্ট হলেও বাস ভাড়া দিয়ে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা জেলা জজ মহোদয়কে আমাদের এ সমস্যার কথা জেলা বারের মাধ্যমে একাধিকবার জানিয়েছি। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়কেও অবগত করেছি। কিন্তু কিছুতেই আমাদের এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাই সরকারের কাছে আমাদের আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী মানুষের পক্ষ থেকে জোর দাবী, নতুন আদালত ভবন নির্মান করে স্বল্প সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হোক। যাতে সরকারের প্রতি মাসে ভবন ভাড়া বাবদ অন্তত: অর্ধ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হয়।

 
Electronic Paper