স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচন, স্বস্তিতে দৌলতদিয়া নৌরুট
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
🕐 ৭:০৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২২
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্ভোদনের মধ্য দিয়ে একুশ জেলার দ্বারখ্যাত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় স্থায়ী ভাবে যানজটের সমাধান হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বদলে যাবে দৌলতদিয়া ঘাটের চিত্র। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অর্থনৈতিক-সামাজিক মুক্তির দ্বার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। ভোগান্তির অন্য নাম ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এখন সেই নৌরুট হবে স্বস্তির আবাসন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ২৪ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ হাজার বিভিন্ন যানবাহন পারাপার হয়। ঈদসহ অন্যান্য সময় যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে দিনের পর দিন সড়কে অপেক্ষা করে ফেরির নাগাল পেতে হয়।
তবে পদ্মা সেতু চালু হলে দৌলতদিয়া ঘাটের চিরচেনা রূপ পাল্টে যাবে। এ ছাড়াও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ কমাসহ ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ক্ষতি হ্রাস পাবে। দৌলতদিয়ায় যেখানে দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পারের জন্য যানবাহনকে অপেক্ষা করতে হতো সে অপেক্ষা আর করতে হবে না।
ঈদে সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের সময়গুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যেত কয়েকগুণ। যার কারণে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রী ও চালকরা। দিনের পর দিন নদী পারের অপেক্ষায় পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অপেক্ষা করতে হয় খোলা আকাশের নিচে। মানবেতার জীবনযাপন করে চালক ও চালকের সহকারীরা। এ ছাড়া নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে অপেক্ষায় থাকতে হয় ফেরির। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিবহনের মধ্যে থেকে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে নারী, শিশু ও বয়স্কদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।
এদিকে দেশের সর্ববৃহত যৌনপল্লী দৌলতদিয়া ঘাটে অবস্থিত। এখানে কয়েক হাজার যৌনকর্মীর বসবাস। যানজটে আটকে থাকা যানবাহন সংশ্লিষ্টরাই মূলত এই যৌনপল্লীর খদ্দের। আর পদ্মাসেতু চালু হলে যেহেতু দৌলতদিয়া ঘাটে যানজটের তেমন কোন সুযোগ নেই, তাই যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের জীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
একাধিক যৌনকর্মী জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে যদি গাড়ি দাঁড়াতে না হয়, তবে তাদের এখানে কোন খদ্দের থাকবে না। এতে তাদের না খেয়ে মড়তে হবে। বিভিন্ন সময় তাদের পুনর্বাসনের কথা বলা হলেও কার্যত কিছুই হয়নি।
কিং ফিশার পরিবহনের দৌলতদিয়ার ঘাটের সুপারভাইজর জামাল বলেন, এখন থেকেই দৌলতদিয়া ঘাট যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে এবং ঘাট এলাকায় যানবাহনের চাপ অনেক কমে যাওয়ায় মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাবার পথে। এই নৌরুটে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো অনেকটা কমে গেছে বলে জানান তিনি। দৌলতদিয়া ঘাটের হোটেল মালিক আবজাল হোসেন জানান, আমার হোটেলে বন্ধ করে দিয়েছি।
কারণ হোটেলে খাবার খাওয়ার লোকজন কমে গেছে। প্রতিদিন ক্যাশ ঘাটতি হয়ে যাওয়ায় আর হোটেল চালু রাখতে পারলাম না তাই বন্ধ করে দিলাম। পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের ঘাটে আরও অনেক হোটেলও বন্ধ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ঘাটের অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। একাধিক পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা বলেন, এ নৌরুটে সবসময় যানজট ও দীর্ঘ গাড়ির সারি লেগেই থাকত। এখন আশা করছি সেই ভোগান্তি আর থাকবে না, আমরা দ্রুত নদী পার হতে পারব। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের এ ভোগান্তির লাঘব হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে সাত হাজার যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ কমবে।
তবে ছোট গাড়ি ও পরিবহনের সংখ্যা কমলেও ট্রাকের সংখ্যা আগের মতোই থাকবে। কারণ সেতুতে ওজন নির্ধারণ থাকবে। ওভারলেড নিয়ে ট্রাক পারাপার হতে পারবে না। প্রথম দিকে এ নৌ-রুটে ৩০-৪০ শতাংশ যানবাহন কমতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।
খালেদ নেওয়াজ আরও জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুট ছিল। পদ্মা সেতুর ফলে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটটি আর থাকছে না। ফলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটেও আর ফেরি সংকট হবে না।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটের ফেরিগুলো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে যুক্ত হবে। এতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে বড় ধরনের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ পারাপার হতে পারবেন।