ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ফ্লাইওভার

উৎসবের আমেজে ফরিদপুর

সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর
🕐 ৮:৫৮ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২২

উৎসবের আমেজে ফরিদপুর

স্বপ্নের পদ্মা সেতু স্বপ্নের মতোই বদলে দিয়েছে ফরিদপুরের গ্রামীণ জনপদ। ঢাকার সাথে সেতুর সাথে গড়ে তোলা এক্সপ্রেসওয়ের একপ্রান্ত এসে মিশেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সাথে। পদ্মা সেতু থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটারের মতো এই নয়নাভিরাম চারলেনের সুপ্রশস্ত সড়ক এসে সংযুক্ত হয়েছে এখানে। সেতু প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই ভাঙ্গার গোল চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে একটি চমৎকার ফ্লাইওভার।

এই ফ্লাইওভার শুধু সড়ক চলাচলকে সহজ করছে তাই নয়; বরং এটি যেনো এই এলাকার মানুষের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবেও গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন বিকেলে মানুষ সেখানে ভিড় করেন একটু মনোমুগ্ধকর সময় কাটানোর আশায়। একসময়ের নৌপথ নির্ভর প্রাচীন ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা আজ ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বের কাতারের প্রতিযোগীতায় জৌলুস ছড়াচ্ছে। ভাঙ্গা গোল চত্বরের এই অত্যাধুনিক ফ্লাইওভার নান্দনিক দ্যুতি ছড়াচ্ছে। দেখে মনেই হবেনা এটি সেই গ্রামীন জনপদ যেখানে যাত্রাপথে লেগে থাকতো শুধুই ভোগান্তি আর বিড়ম্বনা। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট আর সরু পথে সড়ক যাত্রার সেই দুর্ভোগের অবসান হয়েছে বিস্ময়করভাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম অগ্রাধিকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন ২০২০ সালের ১২ মার্চ। ২০১৬ সালের মে মাসে এরকাজ শুরু হয়। দেশের প্রথম এই এশিয়ান এক্সপ্রেসওয়ের অংশ হিসেবে ভাঙ্গার গোল চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে এই নান্দনিক ফ্লাইওভারটি। এর মাধ্যমে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সদর হয়ে উঠবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার। পদ্মা সেতু চালু হলে ভাঙ্গা থেকে মাত্র ১ ঘণ্টারও কম সময়ে রাজধানীতে পৌঁছানো যাবে। যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঘটে যাবে যুগান্তকারী বিপ্লব।

ভাঙ্গার গোল চত্বর থেকে চার লেইনের সুপরিসর চারটি সড়ক চলে গেছে চার দিকে। মাঝে দুটি ওভার ব্রীজ এবং নিচে বিস্তৃত বাইপাস ফ্লাইওভারটিকে নান্দনিক করে তুলেছে। ভাঙ্গা গোল চত্বরের এই ফ্লাইওভারের পশ্চিমে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনা-বেনাপোল সড়ক, দক্ষিণে মাদারীপুর, বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর পায়রা সেতু হয়ে সাগর কন্যা কুয়াকাটা, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, মাগুরা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

উত্তর দিকের সড়কটি ফরিদপুর জেলা সদর হয়ে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরের দিকে গেছে। এ সড়ক ধরেই দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পার হয়ে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যেতে সময় লাগবে ৪০-৪৫ মিনিট। আগে লাগত পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা।

পদ্মা সেতু চালু হলে এই মোড় ব্যবহার করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ সড়ক যোগাযোগ পথে সরাসরি যুক্ত হবে রাজধানীর সঙ্গে। এতে সংযোগ সৃষ্টি হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র মোংলা, পায়রা ও বেনাপোল বন্দরের। এই পথে সড়কের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে রেল যোগাযোগ। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়ের পাশ দিয়েই চলছে এই রেল সড়ক নির্মাণের আরেক মহাযজ্ঞ।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ পথে ঢাকার সাথে মাওয়া ফেরি ঘাট হয়ে খুলনা জেলার সাথে সংযোগস্থাপনকারী এশিয়ান হাইওয়ে নির্মিত হওয়ার পর দুই হাজার সালের প্রথম দিকের সময় হতেই ভাঙ্গা উপজেলার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। বহুল প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে এখন সারাদেশের নজর জুড়ে এশিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে। জনমনে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য। পদ্মা সেতু চালু হলে শুধুমাত্র এ ফরিদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে শুধু তাই নয়; একইসাথে এই সেতু চালু হলে ফরিদপুরের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হবে।

পদ্মা সেতু দিয়ে ফরিদপুরে পাইপলাইনে গ্যাস সঞ্চালনের পথ সুগম হবে। ফরিদপুরে গড়ে উঠবে সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগে নানা প্রতিষ্ঠান এবং ভারি শিল্প কলকারখানা। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং এখানকার মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। যা দেশের জাতীয় আয় তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। সবমিলিয়ে ফরিদপুরের দীর্ঘদিনের চিত্রই বদলে যাবে এই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বদৌলতে।

ভাঙ্গা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি শহিদুল হক নিরু মুন্সি বলেন, একসময় নৌপথই ছিলো আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ভরসা। আজ সড়কপথেও সারাদেশের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সময়ের ব্যাপার মাত্র। পদ্মা সেতু চালু হলে এখানে নতুন নতুন শিল্পকারখানা তৈরি হবে। ফ্লাইওভারটি দেমের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এরইমধ্যে বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা ভাঙ্গার এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে কলকারখানা গড়ার জন্য জমি কিনতে শুরু করেছেন।

ফরিদপুরের বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাচীন জেলা ফরিদপুরের উন্নয়নের দ্বার খুলে যাবে পদ্মা সেতু হলে। এক পদ্মা সেতুতেই বদলে যাবে ফরিদপুরের চিত্র। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এতে এই অঞ্চলের বেকারত্বের হার কমবে। কৃষিপ্রধান ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে। তাদেরকে আর পণ্য পরিবহনে আর আগের মতো ফেরি পার হতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে ভোগান্তি পোহাতে হবেনা।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ফরিদপুর আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা বিপুল ঘোষ বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের ব্যাপক পরিবর্তন হবে। ইতিমধ্যেই বড় বড় ব্যবসায়ীরা শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য জমি কিনতে শুরু করেছেন এখানে। আমি মনে করি পদ্মা সেতুর সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে ফরিদপুর জেলা। এর কারনে বদলে যাবে ফরিদপুরের চিত্র। আমরা এর জন্য দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানায়। তার বলিষ্ট ভূমিকায় আজ আমাদের স্বপ্ন সত্যি এবং বাস্তব হতে চলছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ভাঙ্গার গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে। এই অঞ্চলকে ঘিরে একটি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার প্রস্তার পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ভাঙ্গায় পদ্মা সেতু জাদুঘর গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া ভাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক মান মন্দির ও তাতপল্লীসহ নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 
Electronic Paper