ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বেহাল তিতুমীর কলেজের শৌচাগার

চরম দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

সাহেদুজ্জামান সাকিব
🕐 ২:৩০ পূর্বাহ্ণ, মে ৩০, ২০২২

চরম দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

যাত্রাবাড়ী থেকে সকাল ৯টায় কলেজে এসেছেন আকতার, থাকবেন দুপুর ২টা পর্যন্ত। এর মধ্যে ক্লাস, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা খুনসুটি চললেও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজনের কথা মনে হলেই যেন তার মাথায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ! 

কারণ টয়লেটগুলোর বেহাল দশায় স্বস্তিতে টয়লেট করার কোনো সুযোগই নেই। এমনই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর রোজকার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজের ওয়াশরুমগুলো। এ যেন আতঙ্কের আরেক নাম। এতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত সরকারি তিতুমীর কলেজ ঢাকার স্বনামধন্য দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশরুম ব্যবহারে হাজারো শিক্ষার্থী। 

প্রায়ই ব্যবহারের অনুপযোগী এই ওয়াশরুমগুলোর দীর্ঘদিন ধরে নেই কোনো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ। যার ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন কলেজে আসা হাজারো শিক্ষার্থী। সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়মিত পরিষ্কার না করায় অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা হয়ে আছে প্রতিটা ডিপার্টমেন্ট ও ভবনের ওয়াশরুমগুলো। ব্যবহার করার অনুপযোগী প্রায় সবক'টি ওয়াশরুমই। অকেজো পানির কল, পানির সংকট নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও। আবার কিছু কিছু ওয়াশরুমে ভেঙে গিয়েছে পানির কলগুলো। 

লাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও কোনো ওয়াশরুমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বৈদ্যুতিক বাতি। দেখা যায় বেশিরভাগ লাইনেরই সুইচ নষ্ট কিংবা ভাঙা। বেশিরভাগ ওয়াশরুমেই নেই দরজা, আর থাকলেও সেটা ভাঙ্গা কিংবা অকেজো। কলম দিয়ে চালাতে হয় দরজার ছিটকিনি। এমনি জরাজীর্ণ অবস্থায় ব্যবহার করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারের অভাবে এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী প্রমা শর্মা বলেন, কলেজের ওয়াশরুমগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, বেশিরভাগ সময়ই পানির সংকট কিংবা পানি থাকেই না বলা যায়। বেশিরভাগ ওয়াশরুমের লাইট নেই যার ফলে অন্ধকারেই আমাদের যেতে হয়। বেসিনগুলোতে হাত ধোয়ার জন্য সাবান পর্যন্ত নেই কোনো ওয়াশরুমে। এছাড়াও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের পর তা ফেলার জন্য যে ডাস্টবিনের প্রয়োজন হয় সেটিও নেই কোনো ওয়াশরুমে। এছাড়াও ওয়াশরুমের পরিবেশ অনেক নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তারপরও বাধ্য হয়ে আমাদের এই ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হচ্ছে।

অর্থনীতি বিভাগের মেহেরুন্নেসা মেহের জানান, ক্লাসের বাইরে বাকি সময় আমরা কমনরুমে থাকি কিন্তু কমনরুমের ওয়াশরুমের অবস্থা এত খারাপ যে তা ব্যবহারের অনুপযোগী। দরজা লক করা যায় না। ওযু করা তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় কাজই সাড়া যায় না। এছাড়া নিচতলার ওয়াশরুমেও এত দুর্গন্ধ যে যাওয়াই যায় না। এমনকি মাঝে মাঝে ওয়াশরুমের মধ্যে কেঁচো ও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ও দেখা যায়। এছাড়াও ওয়াশরুমের অবস্থা এত নোংরা ও অপরিচ্ছন যে মাঝে মাঝে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়।

ইংরেজি বিভাগের জুনায়েদ হাসান এ বিষয়ে বলেন, বেশিরভাগ ওয়াশরুমের

পানির ট্যাপ নেই, থাকলেও ভাঙ্গা এবং জরাজীর্ণ। দরজা-জানালাও ভাঙা বেশিরভাগ ওয়াশরুমের। কমোডের ফ্ল্যাশগুলো অকেজো ভাঙ্গাচোরা। যা প্রায়ই ব্যবহারের অনুপযোগী। এ বিষয়ে জানতে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বারবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলেও কোনো জবাব দেননি তিনি।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের গাফিলতির কারণে এসব সংস্কার হচ্ছে না। বলে জানিয়েছেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা ওয়াশরুম সংস্কারের ব্যাপারে শিক্ষা প্রোকৌশল অধিদফতরে আবেদন করেছি, কিন্তু আবেদনের কোনো সাড়া পাচ্ছি না। 

তবে কলেজ প্রশাসন থেকে কিছু কিছু ওয়াশরুমে সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা প্রোকৌশলের সাড়া পেলে আমরা শিগগিরই এসব সংস্কার করব বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি

 
Electronic Paper