ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডোপটেস্ট জটিলতা, বিপাকে কয়েক হাজার চালক

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
🕐 ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০২২

ডোপটেস্ট জটিলতা, বিপাকে কয়েক হাজার চালক

পেশাদার গাড়িচালকদের জন্য ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু জেলা পর্যায়ে এখনও চালু হয়নি এ সেবা। ফলে হবিগঞ্জে গত চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন কার্যক্রম। এতে বিপাকে পরেছেন জেলার কয়েক হাজার গাড়ি চালকসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে না পারায় রাস্তায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে চালকদের।

পরিবহণ শ্রমিক নেতারা বলছেন- হবিগঞ্জে ডোপ টেস্ট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বশীল মহলে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয় থেকে জানা যায়, পেশাদার গাড়িচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ৩০ জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হলেও হবিগঞ্জে এখনও চালু হয়নি ডোপটেস্ট সুবিধা। ফলে আটকে আছে চালকদের নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে পেশাদার গাড়ি চালকরা। নতুন লাইসেন্স ইস্যু করতে না পারায় রাস্তায় নামতে পারছেন না অনেক চালক। আর লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় রাস্তায় পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

এসব হয়রানি থেকে বাঁচতে ডোপ টেস্ট সনদের জন্য যেতে হচ্ছে সিলেট কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এতে সময় ও অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি বেড়েছে ভোগান্তিও।

বাস চালক রজব আলী বলেন, ‘হঠাৎ করে বিআরটিএ নিয়ম করছে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য ডোপটেস্ট লাগবে। এখন হবিগঞ্জে ডোপটেস্ট হয় না, তাহলে আমরা কি করব ? যে কারণে চার মাস ধরে লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে না। রাস্তায় নামলে পুলিশ ধরে হয়রানি করে।’

আব্দুল আহাদ নামে এক ব্যক্তি বলেন- ‘বিআরটিএ অফিসে আসছিলাম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে। এখন এসে শুনি তারা কোন আবেদন জমা নিবে না। আগে ডোপটেস্ট করতে হবে, পরে আবেদন নেবে।’

তিনি বলেন- ‘হবিগঞ্জে ডোপটেস্ট হয় না। ডোপটেস্ট করতে সিলেট অথবা মৌলভীবাজার যাইতে হয়। এরজন্য একদিকে যেমন আমাদের দুইতিন দিন সময় নষ্ট হবে, অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে, সেই সাথে ভোগান্তিতো আছেই।’

রাজু মিয়া নামে এক ট্রাক চালক বলেন- ‘সরকার আমাদের সাথে অবিচার করছে। আমরা যারা পেশাদার ড্রাইভার তাদের ডোপটেস্ট লাগবে, বাকিদের লাগবে না। এখন কথা হলো রাস্তায় কি শুধু আমরাই এক্সিডেন্ট করি? তারা করে না? তাহলে শুধু আমাদের বেলাই কেন ডোপটেস্ট লাগবে?’

পরিবহণ শ্রমিক নেতারা বলছেন- হবিগঞ্জ জেলাতে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করতে বিআরটিএ এবং জেলা সিভিল সার্জনের সাথে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ সেবা চালু না হলে আন্দোলনের ইঙ্গিতও দেন তারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব আলী বলেন- ‘আমরা মাদকসেবীর থকমা নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাতে চাই না। আমরা ডোপটেস্ট দিতে রাজি আছি। কিন্তু সেটা হবিগঞ্জে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। গরিব চালকরা ২/৩ দিন সময় নষ্ট করে ভাড়া লাগিয়ে সিলেট অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে ডোপটেস্ট করবে কেন?’

তিনি বলেন- আমি সিভির সার্জনের সাথে একাধিকবার কথা বলেছি। শেষ পর্যন্ত তিনি আশ্বস্ত করেছেন আগামী সপ্তাহে হবিগঞ্জে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা হবে। যদি আগামী সপ্তাহে না হয়- তাহলে আমরা কি করব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব!’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মু. হাবিবুর রহমান জানান, ‘ডোপ টেস্ট সনদ না মেলায় চার মাস ধরে পেশাদার গাড়িচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমরা এখন লাইসেন্স নবায়নের জন্য যে আবেদনগুলো আসছে সেগুলো নিচ্ছি। কিন্তু যারা নতুন লাইসেন্সের জন্য যে আবেদন আসছে সেগুলো নিচ্ছে না। ইতোমধ্যে নবায়নের জন্য কয়েকশ’ আবেদন অফিসে জমা পরেছে। ডোপটেস্টের কাগজ না পাওয়ায় সেগুলো আমরা দিতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘জেলায় ডোপটেস্ট ব্যবস্থাপনার জন্য চারমাস ধরে সিভিল সার্জন স্যারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেচি। এছাড়া একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা মিটিং ও মাসিক সমন্বয় সভাতেও আলাপ করেছি। কিন্তু এরপরও চার মাস হয়ে গেল এখনও ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা হয়নি।’

তবে লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ার কারণে যেন চালকরা কোন ঝামেলায় যাতে না পরেন এরজন্য চালকদের স্লিপ দেয়া হচ্ছে। আপাতত এই স্লিপ দেখালে কোন সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন- ‘গত অর্থ বছরের ক্রয় পরিকল্পনাতে অন্তর্ভূক্ত না থাকায় ডোপ টেস্ট কিট কেনার সুযোগ নেই। তবে এই সংকট সমাধানের জন্য আমি অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করছি। এখন অধিদপ্তর থেকে সিদ্ধান্ত দিলেই জেলায় ডোপটেস্ট সম্ভব।’

 
Electronic Paper