ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এবার পানি বাড়ছে উত্তর-মধ্যাঞ্চলে

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ, মে ২৩, ২০২২

এবার পানি বাড়ছে উত্তর-মধ্যাঞ্চলে

সিলেট-সুনামগঞ্জে পানি কমতে থাকলেও এবার বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলে। এরই মধ্যে যমুনার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি বাড়ছে ফরিদপুরের নদ-নদীর। লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের অনেক এলাকার ধান পানির নিচে চলে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে নেত্রকোনাও।

 

ফরিদপুরে নদ-নদীর পানি বাড়ছে : পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে ফরিদপুরের নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মায় এই সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে পানি বেড়েছে। তবে এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। সাত দিনে দুই মিটার পানি বেড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই ফরিদপুরের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।’

স্থানীয়রা বলছেন, যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। আর এতে পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁর নিম্নাঞ্চলের (চরাঞ্চল) ফসলের খেত তলাতে শুরু করেছে। এ ছাড়া ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীতে। জেলার চরাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধানের খেতে পানি প্রবেশ করছে। ফলে কৃষক অপরিপক্ব ফসল বাধ্য হয়ে তুলে ফেলছেন।

লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের পাকা ধান পানির নিচে অনবরত বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলের পাকা বোরো ধান পানির নিচে। এ সব ধান কাটার জন্য দ্বিগুণ মজুরি দিয়েও শ্রমিক না পাওয়ায় হতাশ কৃষক।

অনেকে নিজেরাই কষ্ট করে এ সব ধান কাটছেন। তবে অধিকাংশ এলাকায় পাকা ধান খেতেই পড়ে আছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে প্রায় দুই লাখ ত্রিশ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই নিম্নাঞ্চলে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সেখানকার পাকা ধান তলিয়ে গেছে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামের কৃষক নাদেরুল ইসলাম সরকার বলেন, এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। প্রায় ৮ বিঘা জমি নিম্নাঞ্চল হওয়ায় সেগুলো এখন পানির নিচে। প্রায় সাত বিঘা জমির ধান কাটতে পারলেও পানির নিচে আট বিঘা জমির ধান এখনো কাটতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু পানির নিচে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে তারা নিচ্ছেন আড়াই হাজার টাকা। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
লালমনিরহাট কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, প্রায় ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার

কারণে জমির ধান কাটতে কৃষক সমস্যায় পড়েছেন। নিম্নাঞ্চলে পানিতে নিমজ্জিত ধান কাটতে কৃষক চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। বৃষ্টি না থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বোরো ধান কাটা শেষ হবে বলেও জানান তিনি। নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে : উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের চার নদীর পানি ৬ পয়েন্টে ২২ মে বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। শনিবার বিপৎসীমার বাইরে ছিল সাত পয়েন্টের পানি। রবিবার বিপৎসীমার নিচে নেমেছে সুনামগঞ্জ পয়েন্টের পানি।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি স্থানের পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানা গেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয়, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা প্রদেশের কয়েকটি স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পর্যন্ত কিছু স্থানে সময় বিশেষে ওই পানি আরও দ্রæত বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কয়েকটি স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে। অপরদিকে নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি স্থানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।

কেন্দ্র জানায়, কুশিয়ারা নদীর দুই পয়েন্টে পানি কিছুটা কমেছে। এই নদীর অমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫৬ থেকে কমে রবিবার ১৩২ এবং শেওলা পয়েন্টে পানি ৫৫ থেকে কমে ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এদিকে সুরমার তিন পয়েন্টের মধ্যে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। বাকি দুটির মধ্যে কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ৮৫ থেকে আজ ৮৪ এবং সিলেট পয়েন্টে ২৫ থেকে কমে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

এছাড়া, নতুন করে প্লাবিত হওয়া পুরনো সুরমা দিরাই পয়েন্টে ৮ থেকে আজ ৭ এবং সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি ৪ থেকে বেড়ে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। বৃষ্টিপাতের বিষয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৫২ মিলিমিটার। এছাড়া সিলেটের লাটু ও শেরপুরে ৩৫ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ভারতের আসামের শিলচরে ৭১ এবং সিকিমের গ্যাংটকে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

যমুনার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই : অতিবর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলছে। এতে করে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে যমুনা পাড়ের মানুষ। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের মানুষ।

গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনো ১ দশমিক ১১ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, পানি বৃদ্ধির কারণে ও তীব্র স্রোতের কারণে নদী-তীরবর্তী অঞ্চল কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও চৌহালীতে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে জেলার চৌহালী, শাহজাদপুর, কাজীপুর ও এনায়েতপুরে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। এতে করে বন্যার আশঙ্কা করছেন শহরবাসী। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। কাটাঙ্গা চরের মাসুদ রানা, মুকুল হোসেনসহ অনেকে বলেন, শুরু হয়েছে যমুনায় পানি বৃদ্ধি। এখন বিপাকে পড়বে চরের মানুষ। রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। বন্যা হলেই শুরু হয় জলদস্যুদের। রাত জেগে পাহারা দিতে হয় চরবাসীর। শুধু তাই নয় গবাদিপশু নিয়ে পড়তে বিপাকে।

যমুনার চর বেষ্টিত সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া মুন্সি বলেন, যমুনার চরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। বছরের প্রায় সময় পানি সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। এ বছর যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে অল্পদিনেই চরাঞ্চল ডুবে যাবে। চরাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুরও বিপাকে পড়তে হয়।

তিনি আরও বলেন, বন্যার সময় চরাঞ্চলের মানুষের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। রাতে ঘুম হারাম হয়ে যায়। ডাকাতের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধসহ সব এলাকাতেই যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত বিপৎসীমা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদি এভাবেই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। কিছু স্থানে নদীভাঙন রয়েছে। তবে ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভাঙন রোধে ৩০ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও ৯৬ হাজার জিও ব্যাগের জন্য দরপত্র আহŸান করা হয়েছে।

 
Electronic Paper