ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিয়েপাগল সুমনের খপ্পরে ৭ তরুণী

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৮:৩০ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২২

বিয়েপাগল সুমনের খপ্পরে ৭ তরুণী

বিয়েপাগল শাহাদাৎ হোসেন সুমনের খপ্পরে সাত তরুণী সর্বস্বান্ত। কিন্তু থেমে নেই সুমন। আবার নতুন করে বিয়ে ফাঁদ পাতছেন একের পর এক। বিয়ে যেন তার নেশা। ৩৫ বছরের এই যুবক একে একে বিয়ে করেছেন সাতটি। বিয়ে করেই কৌশলে স্ত্রীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন টাকা-পয়সা ও অলঙ্কার। বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দেন। নানা প্রলোভন দিয়ে স্ত্রীদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক তুলেন মোটা অঙ্কের ঋণ।

প্রতারক সুমনের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন সাত তরুণী। তার কথার অমান্য করলেই নেমে আসতো অমানবিক নির্যাতন। লম্পট সুমনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মামলা করেছেন দুই স্ত্রী। দুই মামলায় দু’বার কারাভোগ করেছেন বিয়েপাগল সুমন বর্তমানে জামিনে থাকলেও থেমে নেই তার প্রতারণা।

জানা গেছে, লম্পট সুমনের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলের পরকোট ইউনিয়নের উত্তর রামদেবপুর গ্রামে। তার পিতার নাম ফারুক ভূইয়া। সুমন পারিবারিকভাবে চাটখিলের পশ্চিম শোসালিয়া ৩নং পরকোট গ্রামের মেয়ে ফাতেমা আক্তারকে প্রথম বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ফাতেমা আক্তারের পিতা সৌদি প্রবাসী ছিল। পরনারীতে আসক্ত সুমন ফাতেমার পিতার কষ্টার্জিত সব টাকা নানা অজুহাতে হাতিয়ে নিয়ে ফাতেমাকে তালাক দেন সুমন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে প্রবাসের কষ্টার্জিত সব টাকা সুমনকে দিয়েও মেয়েকে সুখী দেখে যেতে পারেননি।

এরপর রাজধানী ঢাকার তরুণী শাহিন বেগমকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে বিয়ে করেন সুমন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরেও তার দুটি সন্তান রয়েছে। নারী লোভী সুমন ফের বিয়ের জন্য নানা পাঁয়তারা শুরু করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিন বেগমের ওপর অকথ্য নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেয়ে রাজধানীর একটি আদালতে নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন শাহিন বেগম। ওই মামলায় ৩ মাস কারাভোগ করেন সুমন। জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের রাজধানীর কোনাপাড়ার তরুণী রুমিকে ফাঁদে ফেলে তৃতীয় বিয়ে করেন। এরপর রাজধানীতেই সংসার শুরু করেন তারা। তৃতীয় স্ত্রী রুমি স্বামীর আগের দুই বিয়ের কথা জেনে গেলে তাকে ছেড়ে চলে যান চাটখিলে। পাশের উপজেলা রামগঞ্জের সুমি আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। সুমিকেও অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে গোপনে চতুর্থ বিয়ে করেন।

কিন্তু বিয়ের পরপরই লম্পট স্বামীর আসল চরিত্র জানতে পারেন সুমি। সংসার টেকাতে স্বামীর কথামতো চাকরি জীবনের জমানো সব টাকা সুমনের হাতে তুলে দেন সহজ-সরল তরুণী সুমি। প্রতিনিয়ত সুমির কাছে টাকা চান সুমন। টাকা দিতে অস্বীকার করলেই তার ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে পাষ- সুমন। একপর্যায়ে সুমিকে জিম্মি করে কয়েকটি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের লোন তুলেন। এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, প্রতিনিয়তই টাকার জন্য সুমিকে চাপ দেয় সে। সুমির ওপর চলতে থাকে নির্যাতন। একদিন ড্রিল মেশিন দিয়ে সুমিকে হত্যার জন্য রুমে আবদ্ধ করে রাখে। সঙ্গে সঙ্গে ভাইকে ফোন করেন সুমি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে আবদ্ধ রুম থেকে সুমিকে উদ্ধার। এরপর সুমনকে ডিভোর্স দিয়ে তার বিরুদ্ধে চাটখিল থানায় নারী নির্যাতন ও প্রতারণার মামলা দায়ের করেন সুমি। ওই মামলায় কারাভোগ করেন সুমন। এখনও ব্যাংকের ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন সুমি।

এদিকে একই কায়দার চাটখিলের সোমপাড়ার আকলিমা বেগমকে পঞ্চম বিয়ে করেন সুমন। এরপর আকলিমার কাছ থেকেও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে তাকেও তালাক দেয় চতুর সুমন। এলাকায় তার এই কুকর্ম জানাজানি হয়ে গেলে কৌশলে কুমিল্লা চলে যায় সে। এরপর কুমিল্লার বাগমারা এলাকার শারমিন আক্তারকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ষষ্ঠ বিয়ে করে। বিয়ের পর কৌশলে তার কাছ থেকেও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে নিজ এলাকায় ফিরে আসে সুমন।

এদিকে এই খবর পেয়ে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিন বেগম দুই সন্তান নিয়ে সুমনের বাড়িতে উঠেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর ওপর নির্যাতন শুরু করে। ওদিকে কয়েকদিন আগে বিয়েপাগল সুমন চাটখিল থানার নোয়াখলা ইউনিয়নের শারমিন নামের আরেক তরুণীকে সপ্তম বিয়ে করেন। সপ্তম স্ত্রী শারমিন দশঘরিয়া বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় রাখে সে।
এদিকে ২য় স্ত্রী শাহিন বেগমকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় পাষণ্ড সুমন। কিন্তু অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেই অসহায়ের মতো অবুঝ দুই সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়ি অবস্থান করছেন শাহিন।

চতুর্থ স্ত্রী সুমি জানান, ঢাকা থেকে বাসে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে সুমনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর মোবাইল ফোনে আমাদের নিয়মিত কথা হতো। একপর্যায়ে আমরা দুজন সাক্ষাৎ করি। সেখান থেকে সুমনের প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়। ২০১৪ সালে পরিবারকে না জানিয়ে সুমনকে বিয়ে করি। বিয়ের পরই সুমনের আসল চরিত্র জানতে পারি। প্রতিনিয়ত সে আমাকে টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিতো। টাকা না দিলেই আমাকে মারধর শুরু করতো। তার নির্যাতনে আমার মেরুদণ্ড হাড় ভেঙে গেছে। মারধরের কারণে কানের পর্দা ফেটে গেছে।

শরীরের বিভিন্ন স্থানে এখনো আঘাতের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। আমি একটি ভদ্র ফ্যামিলির মেয়ে। মানসম্মানের কথা চিন্তা করে ও সংসার বাঁচাতে তাকে টাকা দিয়েছি। একপর্যায়ে আমি চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছি। আমি ল’তে পড়াশোনা করতাম। স্বামীর কথায় পড়াশোনাটাও ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। আমাকে ঘরের একটি রুমে জিম্মি করে ব্যাংক থেকে লোন তোলার ফরমে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছে। মানসম্মানের কথা চিন্তা করে এসব বিষয় আমার পরিবারকে জানাইনি। কিন্তু ২০২০ সালের শুরুতে একদিন সে আমারে একটি ঘরে আটকে রাখে।

এরপর ড্রিল মেশিন নিয়ে আসে আমাকে হত্যা করার জন্য। প্রায়সময় মারধর করার সময় আমার ফোন সে নিয়ে নিতো। ওইদিন ভাগ্যক্রমে মোবাইলটি আমার সঙ্গে ছিল। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি আমার ভাইকে জানাই। আমার ভাই পুলিশকে ফোন দিলে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে ডিভোর্স দিয়ে চাটখিল থানায় নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করি। বিয়ের ছয় বছরে আমি তাকে ৭-৮ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু সে এখন অস্বীকার করছে। সুমন একজন প্রতারক। ছেলের কুকর্মের কারণে তার মা-বাবাও অতিষ্ঠ ছিল। আমাকে বিয়ের করার আগেই সে তিনটি বিয়ে করেছে। শুনেছি, আমি তালাক দেয়ার পরও নাকি সে আরও কয়েকটি বিয়ে করেছে। এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
করছি।

এ বিষয়ে চাটখিল থানার ৩নং পরকোট ইউপি চেয়ারম্যান বাহার আলম মুনশী জানান, তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অবশ্যই আমি সহায়তা করবো। ভুক্তভোগী নারীদের জন্য আইনি পদক্ষেপে সহায়তা করবেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে শাহাদাৎ হোসান সুমনের মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার কোন জবাব দেননি।

 
Electronic Paper