ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সরকারি রাস্তা ভেঙ্গে ইটের দেওয়াল নির্মাণ

মো. কবির হোসেন, রাজবাড়ী
🕐 ৪:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০২২

সরকারি রাস্তা ভেঙ্গে ইটের দেওয়াল নির্মাণ

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সরকারি প্রকল্পের ইটের সলিং তুলে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়াল নির্মাণ করে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় প্রায় গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে ২৫টি পরিবার। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। এদিকে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট প্রতিকার চেয়ে সমাধান না পেয়ে ইউএনও’র দারস্ত হয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

 

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের বড়লক্ষীপুর প্রধান সড়ক থেকে স্থানীয় বাসিন্দা রাজ্জাকের বাড়ি পর্যন্ত ইটের সলিং রাস্তার ইট উঠিয়ে দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এ জায়গায় রাস্তার পাশে একটি সরকারি বৈদ্যুতিক পিলারও রয়েছে। আর সরকারি হালটের উপর পৌরসভার অধীনে নির্মিত কালভার্ট বালু ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমরা চার পুরুষের জমিতে বসবাস করছি। এ রাস্তায় প্রায় ২০ বছর ধরে চলাচল করে আসছি। গত দুই বছর হলো এখানে ইটের রাস্তা করা হয়েছে। এ রাস্তা ভেঙ্গে রিপন শিপন দুই ভাই এখানে ইটের দেয়াল নির্মাণ করে পথ বন্ধ করে রেখেছে। তারা পুলিশের চাকরি করে তাদের অনেক ক্ষমতা। আমরা তাদের সাথে পারিনা। আমার স্ত্রী অসুস্থ, হাসপাতালে আসা যাওয়ার রাস্তাটা আমাদের বন্ধ। কিভাবে আমারা চলাচল করবো। আমাদের দাবি এখানে আমাদের চলাচলের রাস্তা যেন ফিরে পাই।’

বাসিন্দা আতর আলী শিকদার বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার সম্পত্তির মধ্যে আমরা বসবাস করছি। আমার বয়স এখইন ৬০বছর। এখানে কাঁচা রাস্তায় চলাচল করতাম। প্রায় দুই বছর ধরে অনেক কষ্ট করার পর ইটের রাস্তা হয়েছে। এখন তারা তাদের জমিতে ইটে বাউন্ডারি নির্মান করেছে। সরকারি রাস্তা ভেঙ্গে ফেলেছে। আমরা এখন কোন যায়গা দিয়ে যাবো। প্রায় শতাধিক মানুষ এ পথ দিয়ে যাতায়াত করে।আমরা আমাদের রাস্তা চাই।’

সহকারি শিক্ষিকা ফিরোজা পারভিন জানান, আমি একজন শিক্ষিকা। আমাদের যাবার রাস্তা এটি। মুলঘর স্কুলে আমি শিক্ষকতা করি। আমাদের যাবার রাস্তা বন্ধ। মাসখানেক ধরে এ পাশ ওপাশ দিয়ে যাতায়াত করছি। বৃষ্টি হলে আমাদের যাতায়াত কষ্ট হয়। এ রাস্তা ছিলো। এটা এখন ইটের বাউন্ডারি করে আমাদের রাস্তাটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সরকারের কাছে এর প্রতিকার চাই। আমাদের রাস্তা ফিরে পেতে চাই।

ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শিক্ষার্থী বিথি জানায়, স্কুলে যেতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। রাস্তা না থাকায় জঙ্গলের পথ দিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়। আমাদের রাস্তাটা আটকে দিয়েছে। আমাদের চলাচলের খুব কষ্ট হচ্ছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী রোমান বলেন, আমি হোটেলে কাজ করে খাই। আমার পায়ের সমস্যা। রসাস্তা বন্ধ থাকায় জঙ্গলের পথ দিয়ে আসা যাওয়া খুব কষ্ট হয়। সে দিন চাল কিনে আসার সময় আমার চালগুলো রাস্তায় পরে গেছে। অন্ধকার পথ। আমাদের আগের পথটা খুব সহজ পথ ছিলো। সুবিধা ছিলো। কিন্তু এখন বন্ধ। আমাদের পথ টা আমরা ফিরে পেতে চাই।

সরেজমিনে দেখা যায় ইটের বাউন্ডারি নির্মান কাজ চলছে। কাজের প্রায় শেষ দিক। শ্রমিকেরা কাজ করছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জহুরা আকতার লতা। তিনি নিজেকে পুলিশ সদস্য শিপনের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বলেন, আমাদের জমিতে আমরা দেওয়াল নির্মাণ করেছি। রাতের আধারে আমাদের ব্যক্তিগত জমিতে ইটের রাস্তা করেছে। আমাদের কাছে কোন অনুমতি নেয় নি। আমাদের জমিতে আমরা দেওয়াল নির্মাণ করছি। অন্য কারো জমিতে আমরা দেওয়াল করিনাই বলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। আমাদের জমিতে দেওয়াল নির্মাণ করছি অথচ আজকে এ সাংবাদিক, কাল আরেক সাংবাদিক কাল ওমক নেতা। যে যা পারে করুক, আমি আমাদের ব্যক্তিগত জমিতেই দেওয়াল নির্মাণ করছি।

রাজবাড়ী সদর এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, এডিপি/২০১৯-২০ এর অর্থায়নে ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যায়ে এ কাজের বাস্তবায়ন করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হুমায়রা এন্টার প্রাইজ।

কাজের বাস্তবায়নকারী রাজবাড়ী সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান পিয়াল বলেন, রাতের আধারে কোন সরকারি কাজ করা যায়না। আমাদের কাজ সঠিকভাবে টেন্ডারের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মার্জিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রথমে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। যেহেতু সমাধান হয়নি তাই দ্রুত দুই পক্ষকে নিয়ে আমি বসে এটার সমাধানের চেষ্টা করবো।’

 

 
Electronic Paper