হাইওয়ে পুলিশ ওয়েটস্কেলের স্লিপ পাওয়ার পর শুরু হয় ভেলকিবাজি। তাদের উৎকোচ না দিলে মিলে না স্লিপ। তবে অধিকাংশ সময় অতিরিক্ত মালামাল বহনকারী গাড়ির স্লিপ নিয়ে এ কাজ শুরু হয়। তাছাড়া মাছের গাড়ি, কাঁচামালের গাড়ি, ফলের গাড়ি এগুলোর কাছ থেকে বখশিশ হিসেবে ১০০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।
এর ফলে ওজন স্কেলকে ঘিরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে হাইওয়ে পুলিশ। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার বড় গাড়ি পার হয়। আর এখানে গাড়ি উঠলে বিআইডব্লিউটিএর ৭৫ টাকার টিকিট হয় ১০০ টাকা দিয়ে। সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ স্থানে যদি পণ্যবোঝাই ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য থাকে সেক্ষেত্রে সরকারি ফি টন প্রতি ১২০ টাকা হলেও চালকদের বুঝানো হয় সরকারি ফি ১৫৭ টাকা, তারা সেখানে ১৬০ টাকা করে রাখে। এরপর সেই স্লিপ চালকদের হাতে না দিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ সদস্যদের হাতে তখন তারা বলে প্রতি কেজিতে এক টাকা করে অর্থাৎ টনে এক হাজার টাকা জরিমানা ধরে গাড়ি প্রতি ৫০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত টাকা দিলেই মেলে ফেরির স্লিপ।
আবার পণ্য যদি বেশি না থাকে, সেক্ষেত্রে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চা-পান খাওয়ার বখশিশ হিসেবে ২৫-১০০ বখশিশ দিতে হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন প্রায় ৬০০-৭০০ বড় ট্রাক পার হলে গড়ে ১০০ টাকা করে নিলেও প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা নেয়, মাসে প্রায় ২১ লাখ টাকা পান-বিড়ি খেতেই নেয়। তাছাড়া পণ্য বেশি হলে তো দুই হাজার টাকা দিতে হয়। তাছাড়া স্থানীয় যে সমস্ত গাড়ি গোয়ালন্দ বাজারে আসে সেগুলো তারা ২০০ টাকা করে নেয় মাপ দেওয়া ছাড়া এগুলো ফিক্সড করে দেওয়া।
সেই টাকা গোয়ালন্দ মোড় হাইওয়ে পুলিশ, দায়িত্বরত আনসার, ওয়েটস্কেলের কর্মচারী ও অন্যদের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা হয়। মাঝে মধ্যেই দেখা যায়-দু-একটা গাড়ি পাশে সাইট করে রাখা হয় তারা মহাজনের কাছ থেকে টাকা এনে টাকা পরিশোধ করে তারপর সেখান থেকে যেতে হয়। যদি অতিরিক্ত পণ্যের জন্য স্লিপ দিয়ে জরিমানা করা হতো সেটা সরকারি কোষাগারে জমা হতো। স্লিপ ছাড়া টাকা নেওয়ার কারণে সরকার বিশাল পরিমাণ জরিমানার অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর পকেট ফুলে-ফেঁপে বড় হচ্ছে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
মোস্তফা নামে এক চালক বলেন, আমরা পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। বিআইডব্লিউটিএ এর ৭৫ টাকার জায়গায় ১০০ টাকা তো নেয়, অতিরিক্ত পণ্যের জন্য বাড়তি টাকা দেওয়ার পর সেই স্লিপ আমাদের না দিয়ে পুলিশকে দেওয়া হয়, তখন তাদের বাড়তি টাকা না দিলেই কেস দেওয়ার ভয় দেখায়। ভয়ে আমরা যে যেভাবে পারি টাকা দিয়ে আসি। এক হাজার টাকার জন ১০ হাজার টাকার মামলা খাবে। আবার অতিরিক্ত মালের স্লিপ থাকলে ফেরির কাউন্টারে আমাদের টিকিট দেওয়া হয় না সেখানে দালালদের বাড়তি দুই-তিন হাজার টাকা দিতে হয়।
আরেক চালক আনিস বলেন, গাড়ি চালানোই অপরাধ, সারা রাত জেগে এভাবেই নাজেহাল হতে হয়। ঘাটে তাদের দালাল রাখা আছে তার পরিচয়ে সে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে আসতে পেরেছে।
সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অস্বীকার করেন এবং বলেন এসিল্যান্ড স্যার ও ইউএনও স্যার আমাদের দেখেন। মাঝে মাঝে এসে জরিমানা আদায় করেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা সোহেলুর রহমান বলেন, আমরা চা পা পান খাওয়ার জন্য ১০-২০ টাকা রাখি। ২৫ টাকা করে গাড়ি প্রতি রাখলে শুধু তারাই রাখেন প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ওয়েটস্কেলের স্লিপ কেন হাইওয়ে পুলিশের হাতে দেওয়া হয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তারা এখানে থাকেন তাদের দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে হাইওয়ে পুলিশের দরকার নেই, তারা দীর্ঘ সময় সেখানে ছিল না। আবার কেন সেখানে এসেছে আমি জানি না। আর দুজন কর্মকর্তা প্রতিদিন ২৫-৩০ হাজার টাকা নেয় শুধু চা পান খাওয়ার জন্য।
গোয়ালন্দ সহকারী কমিশনার ভূমি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মাঝে মাঝে ওখানে যাই তবে ওটা দেখার দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের ওপর। তবে তারা যদি এমন করে, আর তার প্রমাণ থাকে তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।