ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঝাঁজ বেড়েছে সরিষা তেলের

আতিকুর রহমান কাযিন, ঢাকা
🕐 ১:২২ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২২

ঝাঁজ বেড়েছে সরিষা তেলের

দেশজুড়ে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকটের পর অভিযানে নামে প্রশাসন। প্রশাসনের একের পর এক অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জব্দ করা হয় লাখ লাখ লিটার সয়াবিন তেল। এবার সয়াবিনের পর বাজারে হুট করেই বাড়তে শুরু করেছে সরিষার তেলের দাম। সয়াবিনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর চাহিদা বেড়ে যায় সরিষার তেলের। একটি চক্র সরিষার তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে নীরবেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সুযোগ বুঝে সাধারণ ভোক্তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বাড়তি মুনাফা। ভোজ্যতেলের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ হয় সরিষার তেল, বলছে সংশ্লিষ্টরা। আর সয়াবিনের বাজার পুরোটাই যেন আমদানিনির্ভর।

আমেনা খাতুন। পেশায় একজন গার্মেন্টকর্মী। বাজারে এসেছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপশি ভোজ্যতেল নিতে। একদিকে ভোজ্যতেলের দাম বেশি অন্যদিকে বাজারে অনেক জায়গায় সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, বলছেন এই গার্মেন্টকর্মী। তিনি বললেন, বাজারের কোনো দোকান বাকি রাখিনি। কোথাও সয়াবিন তেল নেই। কয়েকটি দোকানে পাঁচ লিটারের তেল পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু দাম অনেক। এত টাকা দিয়ে তেল কেনা সম্ভব নয়। এ জন্য বাধ্য হয়ে ১৮০ টাকা দিয়ে রাঁধুনি কোম্পানির ৫০০ গ্রাম সরিষার তেল কিনলাম।

এটা দিয়ে কয়েকদিন চালাতে হবে। মহাখালী বাজার থেকে তেল কিনতে আসা কামরুল হাসান নামের এক ক্রেতা খোলা কাগজকে বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম চড়া। তাই বাধ্য হয়ে ১৪০ টাকার পাম তেল কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকা দিয়ে। আমাদের আর বাঁচার জো নেই। একেকটা জিনিসের দাম বাড়ে, আর আমাদের কাছে তা পাহাড়ের মতো মনে হয়। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, সরিষার তেলের দামও বেড়েছে। খোলা সরিষার তেল ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বোতলজাত সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত।

শুক্রবার মহাখালী কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা বাজারে সরিষার প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ২৮০ টাকা থেকে ২৯০ টাকা। আর ফরচুন কোম্পানির প্রতি লিটার সরিষার তেল বিক্রি করা হতো ২৬০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি লিটার ৩৪০ টাকায়, রাঁধুনি প্রতি লিটার তেল ৩৯০ টাকা, তীর সরিষার তেল বিক্রি করা হতো ২৯০ টাকায়, এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৩৬০ টাকায়। যা পূর্বের চেয়ে ৭০ টাকা বেশি। আর সুরেশ সরিষার তেল ৪০০ টাকার দাগ পেরিয়েছে। সুরেশ সরিষার তেল সবচেয়ে বেশি দাম বলছেন দোকানিরা।

একটি সূত্র বলছে, রোজার শুরু থেকেই সয়াবিন তেলের সংকট বাজারে। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে উধাও হয়ে যায় ৫ ও ২ লিটারের বোতল। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলে। অবশেষে ঈদের তৃতীয় দিন বাড়িয়ে দেয়া হয় সয়াবিন তেলের দর। তবুও সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে অনেকে ঝুঁকছেন সরিষার তেল ব্যবহারে। সরিষার তেলের বাজারও বেশ চড়া। এক মাসের ব্যবধানে খোলা তেলের দাম লিটারে ৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। ব্র্যান্ড ভেদে বোতলজাত সরিষার তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা।

দোকানিরা বলছেন, সয়াবিন তেলের প্রভাব কিছুটা সরিষার তেলের ওপর পড়েছে। কেননা বাজারে সয়াবিন তেল নেই। ঈদের আগে থেকেই সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট রয়েছে। এ জন্য বিকল্প হিসেবে অনেকে সরিষার তেল কিনছে। সরিষার তেলের দাম এখন বাড়ানো হয়নি। মাসখানেক আগেই বেড়েছিল। এক লিটার রাঁধুনি সরিষার তেলের দাম ৩৯০ টাকা। অন্যদিকে খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা পর্যন্ত।

তেলের দামে অতিষ্ঠ জীবন, বলছেন ক্রেতারা : ইমরান হোসেন নামের এক দোকানি বলেন, তেলের দাম নিয়ে আমরাও অনেকটা বিব্রত। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সরকার আমাদের তিলে তিলে মারছে। সাধারণ ক্রেতারাও অনেকটা বিপাকে। গত এক মাস ধরে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। কোম্পানি থেকে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাম অয়েলও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ১৯৫ টাকা লিটার পাম তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সয়াবিনের প্রভাব কিছুটা হলেও সরিষার তেলে পড়েছে। দাম বেশি হলেও অনেকে সরিষার তেল কিনছে।

সরিষার তেলের বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ : সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকে রাজধানীতেও সরিষার তেলের চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে আগের তুলনায় সরিষার তেলের বিক্রিও বাড়ছে বহুগুণে। এদিকে সাভারে শিল্পাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরা বাজার হলো নামা বাজার। এই বাজার থেকে চাল, ডাল ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। নামা বাজারে তেল বিক্রির গলিতে গিয়ে দেখা যায়, সয়াবিনের পাশাপাশি অনেক দোকানি সরিষা তেল বিক্রি করছেন। এখানে দুই ধরনের সরিষার তেল পাওয়া যাচ্ছে। একটি মেশিনে ভাঙানো তেল। লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। অপরদিকে ঘানিতে ভাঙানো সরিষা তেল। সেই তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে।

আশুলিয়া থেকে আসা আখতার হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, সয়াবিন তেল আর সরিষা তেলের দাম এখন প্রায় কাছাকাছি। সয়াবিন তেলের তুলনায় সরিষার তেল স্বাস্থ্যসম্মত। ফলে আগের চেয়ে সরিষার তেল পরিমাণে বেশি কিনছি। ভাবছি এখন থেকে সয়াবিন তেল খাওয়া বাদ দিয়ে দিব।

নামা বাজারের পাইকারি তেল বিক্রেতা মেসার্স আসাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুম বলেন, দেশে সরিষার উৎপাদন বাড়লে এই তেলের দাম আরো কমে আসবে। এতে সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে। এখন যেহেতু সরিষার তেলে ক্রেতার চাহিদা বেশি। ফলে বেশি করে উৎপাদন করতে পারলে দেশের জন্য ভালো হবে।

 
Electronic Paper