ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খালেদার অপেক্ষায় বিএনপি

সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর
🕐 ১:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০১৮

দরজায় কড়া নাড়ছে একাদশ সংসদ নির্বাচন। তফসিলের পর শুরু হবে মূল ভোটযুদ্ধ সম্ভাব্য প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ঘুম উধাও। এ নিয়ে আমাদের নিয়মিত আয়োজন

জেলায় ভোটের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনটি। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সভা-সমাবেশসহ দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। জাতীয় পার্টির তেমন কর্মকাণ্ড নেই। গোপনে বেশ শক্তিশালী জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম।

আসনটিতে বর্তমানে সংসদ সদস্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহিম। আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে তিনি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা আশফাক হোসেন ও আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান মাইকেলও রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়। এ আসনেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্ম। দীর্ঘদিনের রাজনীতির কারণে বিএনপির অবস্থানও এখানে শক্তিশালী। খালেদা জিয়া কিংবা তার পরিবারের কেউ নির্বাচন করলে ভোটের ফল দলটির পক্ষে চলে আসা অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

এ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী কয়েক নেতার নাম আলোচিত হচ্ছে। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার বোন প্রয়াত খুরশীদ জাহান হকের ছেলে শাহরিয়ার আখতার জাহান হক ডন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, দিনাজপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু ও দিনাজপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন দুলাল। তবে বিএনপির শরিক জামায়াত নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা মজিবর রহমানের নামও রয়েছে আলোচনায়। মনোনয়ন পাওয়ার আশায় রয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল।

দিনাজপুর-৩ আসন থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন ইকবালুর রহিম (আওয়ামী লীগ), তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সফিউল আলম প্রধান (বিএনপি)। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও (২০১৪) আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহিম এমপি হন।

স্থানীয় রাজনীতিক ও সচেতন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে আছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। তিনি দলীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহভাজনদের একজন বলে এলাকায় প্রচার আছে। তবে নানা কাজে ইকবালুর রহিমের সুনাম যেমন রয়েছে। দুর্নামও কম নয়। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রের জোড়া খুন, দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা আশফাক হোসেনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত, প্রকৃত ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের অবমূল্যায়নসহ কিছু বিষয় ইকবালুর রহিমের জন্য সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। এ ছাড়া দিনাজপুর মেডিকেল কলেজকে তার বাবার নামে নামকরণ করা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশও তার প্রতি ক্ষুব্ধ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরীর নামও আছে প্রভাবশালীদের তালিকায়। তাদের কেউ মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের পছন্দের লোক। আবার কেউ কেউ হুইপ ইকবালুর রহিমের পছন্দের। একে-অপরের সঙ্গে থাকা না থাকা নিয়ে সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে বিভাজনের রাজনীতি।

তবে ইকবালুর রহিম জানান, আমার নির্বাচনী এলাকা সদরে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ তৈরি করেছি, এলাকায় রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ভবনসহ অনেক উন্নয়ন করেছি। তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে কাজ করেছি। আগামীতে আরও কিছু অসমাপ্ত কাজ রয়েছে। তা শেষ করার জন্য জনগণ আমাকে সুযোগ দেবে।

দলীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, এসব দ্বন্দ্বের কারণে সদর আসনে মনোনয়ন পেতে ইকবালুর রহিমকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে আগে নাম আসে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা আশফাকের। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ লালন করে তরুণ এ নেতা জেলায় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পাওয়ার আশায় তিনি মাঠে কাজ করছেন। তিনি দাবি করেন, তৃণমূলের সঙ্গে সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার জনপ্রিয়তা শূন্যের ঘরে। দলকে টুকরো টুকরো করেছেন তিনি।

আশফাক বলেন, এবার ইকবালুর রহিমকে মনোনয়ন দেওয়া হলে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হবেন। তিনি বলেন, প্রার্থী পরিবর্তন না হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটবে দিনাজপুর সদরে। যার ফল পাবেন বিএনপির প্রার্থী।

এদিকে নির্বাচন ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা ভাবনা রয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দলের একটি পক্ষ খুরশীদ জাহান হকের ছেলে শাহরিয়ার আখতার জাহান হক ডনকে সামনে আনতে চান। ইতোমধ্যে ডন দলীয় বলয় তৈরি করে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কাজ করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফেনী, ঢাকা অথবা দিনাজপুর সদর আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ আসনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে মাহবুবুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির সম্ভাব্যদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু। তিনিও মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। দিনাজপুরের বর্তমান মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জাল হোসেন দুলালও আছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়। শাহরিয়ার আখতার জাহান ডন বলেন, বিএনপির প্রার্থী যেই হোক না কেন ধানের শীষে ভোট দেবে মানুষ। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সদর আসনসহ দিনাজপুরের আসনগুলো ধানের শীষকে উপহার দেওয়াই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।

 
Electronic Paper