ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রশ্নবাণে ঐক্যফ্রন্ট

রহমান মুফিজ
🕐 ১০:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০১৮

সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুললেও আন্দোলন-কর্মসূচি, নেতৃত্ব ও সরকার পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে রয়েছে সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ জোট আদৌ অংশগ্রহণ করবে কিনা, তাদের নির্বাচনী ইশতেহার কি হবে এমন প্রশ্নও সামনে চলে আসছে। তবে জোটের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ড. কামাল হোসেন স্পষ্ট বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্যই এ জোট। কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করেই তারা নির্বাচনে যেতে চান।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ২৫ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকেও এমন অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে জোট নেতাদের। বৈঠক সূত্র জানায়, সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন কূটনীতিকদের সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু ঐক্যফন্টের ব্যাপারে আগ্রহী রাজনৈতিক সচেতন মহলের কাছে এখনো অনেক প্রশ্নের জবাব মেলেনি বলে দাবি অনেকের। গণমাধ্যমে বৈঠকের সূত্র ধরে যেসব বক্তব্য ও প্রশ্ন উঠে এসেছে তাতে ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ যাত্রা কোনো নীতি-রীতি-পদ্ধতিতে হবে তা স্পষ্ট নয়।

জাতীয় নির্বাচনের সময় যেহেতু আর বেশি নয়, হাতে বাকি মাত্র আড়াই মাস, এ সময়ে কার নেতৃত্বে বা নির্দেশনায় এ জোট পরিচালিত হবে তা স্পষ্ট করা দরকার বলে মনে করেন রাজনীতি সচেতন মানুষরা। গণফোরামের মতো ছোট দলে বড় নেতা ড. কামাল হোসেনের মতো প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক আপাতত সামনে থাকলেও বিএনপির মতো বৃহৎ দল এ জোটের শরিক হওয়ায় এ প্রশ্ন আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। সরকারি দলসহ অনেকে এরই মধ্যে বলেছেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ একাধিক মামলায় লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পরিচালিত হবে। আর বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা জানিয়েছেন, ড. কামাল হোসেন চাইছেন যৌথ নেতৃত্ব। একক নেতৃত্বে এ জোট চলবে না। তিনি কূটনীতিকদের প্রশ্নের জবাবেও নাকি একই উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপির মতো দল যুক্ত থাকায় আদৌ যৌথ নেতৃত্বে এ জোট চালানো সম্ভব কিনা এ প্রশ্নই ফিরে ফিরে আসছে।

ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে কে হবেন সরকারপ্রধান এমন প্রশ্নও জেগেছে অনেকের মনে। জোট গঠনের পূর্ব থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে এ প্রশ্ন ঘুরে ফিরে এসেছে। ড. কামাল এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে কূটনীতিকদের বলেছেন, সংবিধানেই এর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির যে দাবি জানিয়েছে, সে দাবি পূরণ না হলে তারা নির্বাচনে যাবেন কি না এমন প্রশ্নও উঠে আসে কূটনীতিকদের মধ্য থেকে। কিন্তু জবাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে নির্বাচনে যাবেন কি যাবেন না তা স্পষ্ট করেননি ড. কামাল। এ থেকে অনেকটা ধারণা করা যাচ্ছে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে খালেদা জিয়াকে মুক্তি শর্ত বা দাবি মুখ্য হয়ে উঠবে না। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার মতো কোনো অবস্থা এবং নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে উল্লেখ করেছেন গণফোরাম সভাপতি। এ থেকে অনুমান করা হচ্ছে বিএনপি খালেদার মুক্তি ও তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে যে অনঢ় অবস্থা দেখাচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টের ওপর ভর করে সেখান থেকে কিছুটা সরে আসার কৌশল নিয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে সরকার বা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে নির্বাচনী পরিবেশ প্রশ্নে সংলাপ-সমঝোতার জায়গা তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক তারই অংশ।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি কূটনীতিকদের দিয়ে ‘দুতিয়ালি’ করানোর চেষ্টা করছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। এজন্য কূটনীতিকরাও বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে। এতে কূটনীতিকরা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা যে কোনো উপায়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচনী পরিবেশের প্রশ্নে সংলাপ-সমঝোতায় যেতে চাইছেন। এখন আগ বাড়িয়ে কূটনীতিকরা সরকার বা ক্ষমতাসীনদের কাছে সংলাপের প্রস্তাব নিয়ে গেলেই হয়।

যদিও সরকারি দল অনেক আগেই বলে দিয়েছে তারা বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপে বসবে না। তবে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে তাদের নীতিগত কোনো বাধা থাকার কথা নয়। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে যে কোনো সময় সংলাপ হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ক্ষমতাসীনরা একতরফাভাবে সংবিধানের দোহাই দিয়ে সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অনড় রয়েছে, অপরদিকে দেশের অধিকাংশ বিরোধী দল সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছে। এ অবস্থায় উভয়পক্ষের মধ্যে একটা যৌক্তিক সমঝোতার প্রয়োজন দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

ক্ষমতাসীনরা তাদের অবস্থানে অনঢ় থাকলে ফের একতরফা নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হবে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোও উপায়ান্ত না দেখে আন্দোলন কর্মসূচির দিকে অগ্রসর হবে। এতে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এ মুহূর্তে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, সুধী সমাজ, দায়িত্বশীল নাগরিকদের উদ্যোগী হয়েই ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা পক্ষকে এক টেবিলে বসার চেষ্টা চালাতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি কূটনীতিকরাই প্রধান অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারেন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংলাপ-সমঝোতার ভেতর দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে আন্দোলন-কর্মসূচি ছাড়া যে ঐক্যফ্রন্টের হাতে কোনো বিকল্প নেই তা স্পষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত কি না ঐক্যফ্রন্ট। যদি আন্দোলনে তাদের যেতেই হয়-তবে দেশব্যাপী সাংগঠনিক বাস্তবতা তৈরি, ঐক্যের পরিসর বৃদ্ধি, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন, আন্দোলনের রূপরেখা তৈরিসহ অসংখ্য কাজ বাকি রয়ে গেছে তাদের। এ অল্প সময়ে তারা সে কাজ সম্পন্ন করতে পারবে তো?

 
Electronic Paper