ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ধোঁয়াশা কাটছে বরিশাল মহানগর বিএনপির

হেলাল উদ্দিন, বরিশাল
🕐 ১২:২৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০২১

ধোঁয়াশা কাটছে বরিশাল মহানগর বিএনপির

বরিশাল মহানগর বিএনপির আসন্ন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে সৃষ্ট জটিল ও দুর্বোধ্য সমীকরণ এখন অনেকটাই সরল অংকে রূপ নিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং সর্বশেষ দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক ও আলাপচারিতায় পদ প্রত্যাশী নেতাদের মাথা থেকে জটিলতার জট নেমে গেছে। কমিটিতে কারা স্থান বা পদ পদবী পেতে পারেন তাও অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেছে তাদের কাছে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানের সঙ্গে বরিশাল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। ওই বেঠকে কমিটি প্রসঙ্গে তারেক রহমানের বক্তব্য, নির্দেশনা ও আলোচনায় পরোক্ষভাবে কমিটি প্রসঙ্গিক সকল উত্তর পেয়ে গেছেন বরিশাল বিএনপির নেতারা। কারা পদ পাবেন, আর কারা পাবেন না- তারও ছিল আভাস। এরপর নিজেরাই হিসেব নিকেশ মিলিয়ে কমিটি ঘোষণার দিনক্ষণ গুনছেন পদ প্রত্যাশি নেতারা। তারপরও কমিটি ঘিরে আগ্রহ, কৌতূহল ও শঙ্কার শেষ নেই বরিশাল বিএনপির নেতাদের মাঝে।

গত মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সভা করে বরিশাল মহানগর বিএনপিসহ তিনটি সাংগঠনিক কমিটি গঠনে শীর্ষ পদের জন্য স্থানীয় ১৮ নেতার তথ্য সংগ্রহ করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দু’জন সহসাংগঠনিক সম্পাদকের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলের হাইকমান্ড। দেশের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় এ বিভাগে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেক পিছিয়ে কেন, তা জানতে জান তিনি। এমনকি কমিটি গঠনে তারা নিজেরাই পদ প্রত্যাশীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে কোন্দলকে উস্কে দেওয়ার জন্য দলের শীর্ষ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আলোচনা সভায় আভাস মিলেছে, দলে কোন্দল সৃষ্টিকারী, আন্দোলন সংগ্রামে পিছিয়ে থাকা, সুবিধাবাদীরা কমিটিতে পদ পদবীর বাইরে থাকবেন। অগ্রাধিকার পাবেন ত্যাগী, মামলা হামলার শিকার, পুরনো ছাত্র নেতারা। তবে বর্ষীয়ান ও বয়জ্যোষ্ঠ হলেও আন্দোলন সংগ্রামে অক্ষম এমন নেতারদের রাখা হচ্ছে না কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে। এছাড়া কমিটি গঠনে ‘এক নেতা এক পদ’ ভিত্তিতে তৈরি হতে যাচ্ছে।

পদ প্রত্যাশী অনেক নেতা বলেন, ‘এক নেতা, এক পদ’ এমন নীতির ফলে আহ্বায়ক পদে মজিবর রহমান সরোয়ারের আসার সম্ভাবনা কমেছে। সে ক্ষেত্রে আহ্বায়ক পদের জন্য তালিকায় আছেন আহসান হাবিব কামাল, মনিরুজ্জামান ফারুক, আলী হায়দার বাবুল ও বিলকিস জাহান শিরিন। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে এগিয়ে আছেন আহসান হাবিব কামাল ও মনিরুজ্জামান ফারুক। অন্য দিকে সদস্য সচিব পদে জিয়াউদ্দিন সিকদার, মীর জাহিদুল কবির জাহিদ, শাহ আমিনুল ইসলাম আমিনের নাম এতদিন বেশ জোরেসোরে আলোচিত হয়েছে। নানা অভিযোগে অভিযুক্ত, দীর্ঘ সময় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন থাকা জিয়া উদ্দিন সিকদারের সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীন।

কমিটির আহ্বায়ক প্রত্যাশী সাবেক সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘প্রথমত আমি বর্তমানে দলের কোন পদে নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দণ্ডিত হয়েছি। পৌর কাউন্সিলর থেকে শুরু করে পৌর মেয়র ও একাধিক বার সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। জেলা বিএনপির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার দ্বারা কখনো দলের নেতাকর্মীরা অবজ্ঞা বা বঞ্চনার শিকার হয়নি। কোন্দল শব্দটি আমার অভিধানে নেই। বাকিটা হাইকমান্ড বিবেচনা করবে।’

বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘দলের হাইকমান্ডে অনেক নেতা আছেন যারা দুটি পদ নিয়ে আছেন। তিনি বলেন পদটা বড় কথা নয়, বিষয় হলো কাকে দায়িত্ব দিলে দল ভাল ভাবে চলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা সত্যি যে সাম্প্রতিক সময়ে দলের ভিতরে সামান্য বিভাজন তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস- আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সব বিভেদ ভুলে সবাই আমার কাছে ছুটে আসবে। কারন যারা প্ররোচনায় আংশিক পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা তো আমারই নেতাকর্মী।’

একই প্রশ্নের জবাবে সদস্য সচিব পদ প্রত্যাশী নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কিংবা প্রশাসনের ভয়ে কখনো রাজপথ থেকে পালিয়ে যাইনি। অসংখ্যবার মামলা হামলার শিকার হয়েছি। তবুও দলের সকল কর্মসূচি দাপটের সঙ্গে পালন করেছি। যদি দল আমাকে দায়িত্ব দেয়, তাহলে প্রথমেই সাবেক ত্যাগী নেতাদের দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। কারণ তারাই দলের কষ্টি পাথর।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান একটানা ৪ বার সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এটাই প্রমাণ করে, দল ও দলের বাইরে আমার জনপ্রিয়তা।

তিনি বলেন, অনেক লোভনীয় অফার পেয়েছি। কিন্তু দলছুট হইনি। বর্তমানে ৮টি রাজনৈতিক মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরছি। এখন মূল্যায়ন করা দলের বিষয়।

আলাপকালে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমরা ‘এক নেতা এক পদ’ নীতিতেই কাজ করছি। তবে দলের স্বার্থে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে তা ঢালাও ভাবে না।’ তিনি বলেন, ‘অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিক স্বচ্ছ ও সাংগঠনিক সকল গুণের সংমিশ্রণে এবার কমিটি গঠন করা হবে। আমরা দলকে শক্তিশালী করতে কয়েক স্তরে এ বিষয়ে তদারকি করছি। আমি এতটুকু বলতে চাই- অযোগ্য ও সুবিধাবাদীদের চেহারা কমিটিতে থাকবে না।’

 
Electronic Paper