অনুপ্রবেশকারী-হাইব্রিড নেতাদের দৌড়ঝাঁপ
যশোর প্রতিনিধি
🕐 ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২১
সারা দেশের মতো যশোরেও পড়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ঢেউ। দলে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড নেতারাও নৌকা পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। জেলাপর্যায় থেকেও অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড নেতাদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এতে তৃণমূল ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।
বিগত নির্বাচনে জামানত হারানো প্রার্থীরাও নৌকা পেতে মাঠে। নির্বাচন সামনে রেখে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নৌকা পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। চলছে জোর তদবির। ধরনা দিচ্ছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী আবার ঢাকায় গিয়ে রাজনৈতিক গুরুদের সঙ্গে দেখা করছেন। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে ফেসবুকে পোস্টও দিচ্ছেন। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা সভাপতি-সম্পাদকদের দৃষ্টি আকর্ষণে নিজ এলাকায় ব্যানার, পোস্টারে ঢেকে ফেলছেন।
যশোর সদর উপজেলা কচুয়া ইউনিয়নে নৌকা পেতে মরিয়া সাহের খান নামে এক চলচ্চিত্র অভিনেতা। সাহের খানের বাবা এলাকার চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। তাকে দলীয় সমর্থন দিয়ে মনোনয়নের জন্য নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
চাঁচড়া ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান বহুবিতর্কিত আব্দুল আজিজ বিশ^াসের ছেলে শামীম রেজার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বিগত নির্বাচনে আব্দুল আজিজ বিশ্বাস নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। আব্দুল আজিজ বিশ্বাস এক সময় জাতীয় পার্টি, পরে জাকের পার্টি এবং বিএনপির সময় বিএনপি করেছেন। তার বিরুদ্ধে ১/১১-এর সময় পুলেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগে মামলা রয়েছে। এ ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে জামানত হারানো আনোয়ারুল করিম আনু এবারও নৌকা পেতে দলীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এবারও তার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ ওয়ানম্যান শো নেতা ২০১৬ নির্বাচনে ৩২ হাজার ভোটারের মধ্যে ২ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছিলেন। চাঁচড়া
ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান সাবেক জেলা যুবদলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির নেতা আব্দুর রাজ্জাক ফুল। যার হাতে এখনো এলাকার আওয়ামী লীগের পোড়খাওয়া কর্মীদের রক্ত লেগে রয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক ফুল বিএনপির প্রয়াত শীর্ষ নেতা তরিকুল ইসলামের হাত ধরে বিএনপির ক্ষমতা থাকাকালীন একবার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তিনি এখন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা। প্রয়াত সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটোর সঙ্গে তিনিও আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
নৌকা চান আব্দুর রাজ্জাক ফুলের ভাইরা এক সময়ের ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির পিকুল। ফিরোজের ভাই মুকুল ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। মুকুল বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয়। তার নামে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। পিকুলের বোন জামাই শাহাবুদ্দিন ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি। এছাড়া তার আরও এক বোন জামাই আনোয়ার হোসেন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক কাউন্সিলর হাজী মুকুলের ক্যাডার। তার নামে নাশকতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান বিএনপির এক সময়ের দুর্ধর্ষ ক্যাডার আনিচুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটনের স্ত্রী ফাতেমা আনোয়ার। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি তার বউকে মাঠে নামিয়েছেন। ফিঙে লিটন এখন বিদেশে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইফতেখার হোসেন আগ্নির ব্যবসায়িক পার্টনার। তার বোন জামাইসহ ক্যাডার বাহিনী এখনো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফতেপুর ইউনিয়নে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন আওয়ামী লীগের সোহরাব হোসেন। তিনিও এবার দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া। শুধু কচুয়া, ফতেপুর, চাঁচড়া নয়, এ রকম প্রতিটি ইউনিয়নের বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেতে মাঠে নেমেছেন।
নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নতুন করে দলে বাড়ছে বিভক্তি ও কোন্দল। নিজেদের দল ভারী করতে অনুপ্রবেশকারীদের মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নামের তালিকা। এ অনুপ্রবেশের সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ী, বিএনপি-জামায়াত ও বিভিন্ন দল থেকে আসা সুবিধাভোগীরা। আওয়ামী লীগের নেতারা নিজের গ্রুপ-বলয় শক্তিশালী করতে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া বাড়ছে হাইব্রিডের সংখ্যাও।
জেলার শীর্ষ নেতারা দলে দীর্ঘদিনের ত্যাগীদের চেয়ে নিজের গ্রুপের লোক ও অর্থ-সম্পদ প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে দলের ত্যাগী নেতারা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। এতে তৃণমূলে সহিংসতার শঙ্কাও তীব্র হচ্ছে। তবে বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, তৃণমূলকে উপেক্ষা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করলে তা হবে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত।