বিকল্পধারার গন্তব্য কী
সুলতান মাহমুদ
🕐 ১০:৫৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০১৮
সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) রাজনৈতিক দলের নাম বিকল্পধারা। তিনি হলেন এই দলের সভাপতি। মহাসচিব হলেন মেজর (অব.) মান্নান। তিনি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বেয়াই (মাহী বি. চৌধুরীর শ্বশুর)। আর মাহী বি. চৌধুরী হলেন বিকল্পধারার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। দলটির প্রধান তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদই পরিবারের লোকজনের দখলে। দলের দু-একজন নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে গত কয়েক দিন আগে রাজনৈতিক মাঠ ছিল বেশ সরগরম।
বিশেষ করে গত ১৩ অক্টোবর শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীর আচরণ নিয়ে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগে মাহী বি. চৌধুরী বলেছিলেন, বিএনপি এখানে জাতীয় ঐক্য করে, আর ২০ দলীয় জোটে জামায়াতের সঙ্গে পরকীয়া করে।
অন্যদিকে, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব আর নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার মূল বিয়ে হচ্ছে এখানে- যুক্তফ্রন্টে। আর তাদের পরকীয়া হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। তার এ ধরনের বক্তব্য ভালোভাবে নেননি আ স ম আব্দুর রব এবং মাহমুদুর রহমান মান্না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আলোচনা যখন তুঙ্গে ছিল তখনই মাহী বি. চৌধুরীর এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তোষ বাড়ে জোটের অন্য দলগুলোর নেতাদের মধ্যে। এরপরই গুঞ্জন শুরু হয় বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠন করা হচ্ছে। আর গত ১৩ অক্টোবর তাই হয়েছে, বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। ওই দিন ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য স্থির করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছিলেন জোট গড়ার বৈঠকগুলোয় ‘কিছু বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করে সমস্যা তৈরি করছিল’ বিকল্পধারা। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছিলাম যে কতগুলো বিষয়ে অযথা চাপ তৈরি করে একটা সমস্যা তৈরি করা হচ্ছিল। যাই হোক আমরা এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। আমরা আশা করি তারা ঐক্যে ফিরে আসবেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত সোমবার রাতে বিকল্পধারার সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিকল্পধারাকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু বিকল্পধারা এতে রাজি হয়নি। পরে দলটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বারিধারায় বি. চৌধুরীর বাসভবনে ডা. জাফরুল্লাহ বৈঠক হয়। বৈঠকে বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মাহী বি. চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ডা. জাফরুল্লাহকে বলেছি যে আমাদের মতামত স্পষ্ট, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে কোনো ঐক্যে যাব না। এ ছাড়া যদি ক্ষমতার ভারসাম্যই না আসে, নির্দিষ্টভাবে একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই যদি ঐক্য হয়, সেটা দেশকে স্বেচ্ছাচারমুক্ত করবে না। সুতরাং আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সরতে পারব না। তখন ডা. জাফরুল্লাহ বলেছেন, ওই দিন (১৩ অক্টোবর) আমাদের ভুল হয়েছে। বি. চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বাসায় থাকেননি, এটা ঠিক হয়নি। এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এর জবাবে তিনি (মাহী) বলেন, তখন আমরা বলেছি, এই ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কিছু নেই। তবে আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাফল্য কামনা করি। ড. কামাল হোসেনের সাফল্য কামনা করি। আপনারা নিজেদের মতো চলতে থাকুন। আমরা আমাদের মতো চলব।
বিকল্পধারা একঘরে হয়ে যাচ্ছে এমনও কথা উঠেছে বি. চৌধুরী ও ডা. জাফরুল্লাহর বৈঠকে এ কথা উল্লেখ করে মাহী বি. চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমরা একঘরে হয়েই থাকতে চাই। বৃহত্তর অট্টালিকার বাইরে আমরা ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর বানাব। সেই ঘরে সত্যের, মুক্তিযুদ্ধের ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতি থাকবে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও নড়ব না।’
বিকল্পধারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাহী বলেন, ‘আজকের দুঃশাসনের সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। বিকল্পধারা জন্মের পর থেকে কোনো জোটে যেতে পারেনি। সুতরাং এই ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা গুঞ্জন ছাড়া আর কিছু নয়।
ভেঙে যাচ্ছে বিকল্পধারা
বিকল্পধারা বাংলাদেশ ভেঙে যাচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের একটি অংশ। সদ্য বহিষ্কৃত দলটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদলের নেতৃত্বে ওই অংশটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিচ্ছে। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল বলেন, মাহী বি. চৌধুরীর একক সিদ্ধান্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেওয়া একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। বিকল্পধারার সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এ ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন। তবে বাবার নাম ব্যবহার করে মাহী বি. চৌধুরীর সিদ্ধান্তে দলের অধিকাংশ নেতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা একটি অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই সভা ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করব।
তিনি বলেন, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় কমিটি ৭১ সদস্যের হলেও এখন রয়েছে ২৫ থেকে ২৬ জন। এর মধ্যে কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম, সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবলু, যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জোবায়ের, প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী জুন্নু, কৃষক ধারার আহ্বায়ক চাষী এনামুল, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শিপরা রহিম, সদস্য নূর মুহাম্মদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মতিনসহ ১৭ জনই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।