ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কৃষক দলে ২২ বছর পর নতুন কমিটি

বাদ পড়াদের ক্ষোভ, জিইয়ে থাকল দ্বন্দ্ব, নব কমিটিতে তিন নতুন মুখ, তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি

মাহমুদুল হাসান
🕐 ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১

কৃষক দলে ২২ বছর পর নতুন কমিটি

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কমিটি (আংশিক) ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২২ বছর পর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি নতুন নেতৃত্ব পেল। সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে নতুন মুখ স্থান পেয়েছে তিনজন। বাকিরা সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে বড় একটি অংশের নেতাদের দাবি, ‘সরকারের ছকে’ নতুন কমিটি হয়েছে। সংগঠনের অতীত ঐতিহ্য ছিল এখানে দলের ‘হাই ভোল্টেজ’ নেতারা কৃষক দলে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেক্ষেত্রে হঠাৎ করেই শীর্ষপদে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব বিএনপিতে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। এ নিয়ে বাদ পড়া নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংগঠনে সারা দেশের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ হতাশ হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব জিইয়েই থাকল। এদিকে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।

গতকাল সোমবার কৃষক দলের সাত সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কমিটিতে বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিনকে সভাপতি করা হয় এবং বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীকে সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব ও নতুন মুখ মোশারফ হোসেন এমপি। মো. শফিকুল ইসলামকে দফতর সম্পাদক করা হয়েছে।

সর্বশেষ কৃষক দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ১৬ মে। এরপর গত প্রায় ২২ বছরেও বিএনপির অন্যতম বৃহৎ এ অঙ্গসংগঠনটির সম্মেলন হয়নি। ১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। সে সময় বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। এরপর বিএনপির সাবেক মহাসচিব (পরে বহিষ্কৃত) আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে সভাপতি করে ১৯৯২ সালে কৃষক দলের কমিটি গঠন করা হয়। তখন শামসুজ্জামান দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৯৯৮ সালের ১৬ মে সবশেষ কৃষক দলের জাতীয় কাউন্সিলে মাহবুবুল আলম তারাকে সভাপতি ও শামসুজ্জামান দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর ১০ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মাহবুবুল আলম তারা। এরপর সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান মোল্লা ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে তিনি মারা গেলে সংগঠনের দ্বিতীয় সহ-সভাপতি ও সেই সময়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।

মির্জা ফখরুলও টানা প্রায় ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ফখরুল দলের মহাসচিব হলে তিনি কৃষক দলের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর থেকে কৃষক দলের সভাপতির পদ শূন্য রয়েছে। তবে দুই যুগেরও বেশি সময় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা শামসুজ্জামান দুদু দীর্ঘদিন সংগঠনটির আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। নতুন আংশিক কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হওয়া কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ছিলেন সদস্য সচিবের দায়িত্বে।

সংগঠনের নেতারা জানান, সম্মেলনের প্রায় সাত মাস পর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলো। গত ১২ মার্চ শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে কৃষক দলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্যের সমাপ্তিতে সংগঠনের বিধান অনুযায়ী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পূর্বাহ্নে কৃষক দলের ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে প্রথম অধিবেশন শেষ হয়। এদিন বিকাল ৩টায় গুলশানে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বের কাউন্সিল অধিবেশন হয়। গুলশান কার্যালয়ে কৃষক দলের অনুসারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। ফলে কমিটি আটকে যায়। নেতাকর্মীদের প্রতীক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে। নতুন কমিটি ঘোষণার ফলে কেউ কেউ স্বস্তির কথা জানালেও অনেকেই নিজেদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

সংগঠনের বিলুপ্ত কমিটির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ‘এ কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সংগঠনের ঐতিহ্য নষ্ট করা হয়েছে। সরকারের এজেন্ট কমিটিতে স্থান পেয়েছে। যার ফলে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে কতটা ভূমিকার রাখতে পারেন তার মাধ্যমেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে কৃষক দলের হাইভোল্টেজ নেতারা শীর্ষ পদে থাকতেন এবারই তার বক্তব্য ঘটল।’
বিলুপ্ত কমিটির সদস্য মোজ্জামেল হক মিন্টু ও এম জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘নতুন কমিটিকে আমরা অভিনন্দন জানাই। আশা করি নতুন নেতৃত্ব সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সংগঠনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

জানতে চাইলে কৃষক দলের নতুন কমিটির সভাপতি জাফির তুহিন দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অবৈধ সরকারকে সরাতে হলে একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রস্তুত আছি।

তিনি বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে আমরা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করব। সংগঠনকে শক্তিশালী করাই আপাতত কাজ।

নতুন কমিটি সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তুলাই হচ্ছে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা আমাদের লক্ষ্য। যে কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের (কৃষক দলে) মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকতে পাবে। দলের নির্বাহী কমিটি এবং স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করে আলাপ-আলোচনা করেই নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন।’

 
Electronic Paper