খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা: যা বলছে কয়েকটি দল ও সংগঠন
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ, মে ১১, ২০২১
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন ৭৬ বছরের বয়স্কা নারী। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি।
এছাড়াও আরও বেশ কিছু জটিল রোগাক্রান্ত খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হলে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৩ মে-২০২১ ইং তারিখে তার শ্বাসকষ্ট হলে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন। ওইদিনই খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার পরিবারের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের সাথে দেখা করে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন জানায়। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের সাথে লক্ষ্য করলাম, গত রোববার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘বর্তমান বিধি মোতাবেক খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তাকে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং আমরা তার পরিবারের আবেদনটি মঞ্জুর করতে পারছি না।’
এ ঘটনায় থেকেই প্রমাণিত হয়, বর্তমান সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তারা তাকে বিদেশে উন্নত ও সুচিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ মানবতার কাছে আইন কোনো বিষয় নয়। আমরা সরকারের এহেন অগণতান্ত্রিক ও বেআইনী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এ অবস্থায় আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব- খালেদা জিয়া এমন কোনো মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নন। তার প্রতি মানবিক হোন। তিনি বয়স্কা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি তার ছোটো ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। তার বড় ছেলে দেশনায়ক তারেক রহমানও নির্বাসনে। তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া কতটা অসহায় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা বিশ্বাস করি সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিবে। তা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অমানবিক : লেবার পার্টি
অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা প্রশ্নে সরকারের নেতিবাচক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত অমানবিক ও ধৃষ্টতাপূর্ণ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও সুশাসন না থাকায় দেশ আজ মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। সরকার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে হয়রানী করতেই আদালতকে ব্যবহার করে বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে। বিনা চিকিৎসায় বছরের পর বছর কারান্তরীন থাকায় বেগম জিয়া এখন গুরুতর অসুস্থ। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়ার চিকিৎসক টিম বিদেশে নেয়ার সুপারিশ করলেও সরকার চিকিৎসা প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করেছে। জরুরী সরকারের আমলে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ৮ সপ্তাহের মুক্তিতে বিদেশ গিয়েছিলেন। তৎকালীন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলও প্যারোলো মুক্তিতে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। তাই বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রনালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত প্রতিহিংসামুলক ও উন্নত চিকিৎসা বঞ্চিত রেখে মৌলিক অধিকারহরনের শামিল। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ লেবার পার্টির দফতর সম্পাদক আমানুল্লাহ মহব্বত সাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় একথা বলেন।
লেবার পার্টির নেতৃদ্বয় বলেন, অনেক সাজাপ্রাপ্তরা বর্তমান বিনাভোটের সরকারের এমপি-মন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা নিতে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া শুধু তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নন, স্বাধীনতার ঘোষক ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারের সহধর্মিনী। তার সাথে সরকারের এহেন আচারন ফ্যাসিবাদী ও মানবতা বিরোধী অপরাধের শামিল। তাই দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী জনগণ ও বিশ্ব বিবেক মাবধিকার সংস্থাসমূহকে দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানাই।
বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত : জাতীয় পার্টি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জামাল হায়দার ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন। সোমবার এক বিবৃত তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন ৭৬ বছরের বয়স্কা নারী সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। এছাড়াও আরও বেশ কিছু জটিল রোগাক্রান্ত খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হলে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৩ তারিখে তার শ্বাসকষ্ট হলে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন।বর্তমান সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তারা তাকে বিদেশে উন্নত ও সুচিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ মানবতার কাছে আইন কোনো বিষয় নয়। আমরা সরকারের এহেন অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বিবৃতিতে বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকার মহামারী করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে পারত। তার স্বামী সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান ছিলেন।
আলোচনায় খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের একটি কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আর তাতেই আলোচনার সূত্রপাত। সেই রিপোর্টের কপিতে দেখা যায় বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ১৯৪৬ সালের ৮ মে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তারা (বিএনপি) দীর্ঘদিন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করেছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, এটা মিথ্যা, বানোয়াট। শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের খুশি করতে ও খুনিদের উৎসাহিত করতে ১৫ আগস্টে জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করেছেন। এখন সত্য প্রকাশিত হয়েছে। সত্য কখনো চাপা থাকে না। এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিষয়টি আমি দেখিনি। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।
এদিকে নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম লিখেছেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি। বিষয়টা আমার কাছে যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতেই প্রাসঙ্গিক। এখন আপনি বলছেন ৮ মে তে আপনি জন্মেছেন। তাহলে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়ে ১৫ আগস্ট যে জন্মদিন নিজে পালন করে এসেছেন, আপনার দলের নেতাকর্মীরা যে পালন করেছে আমাদের শোককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার জন্য ন্যূনতম ক্ষমা মানুষ হিসেবে আপনার এবং আপনার দলের নেতাদের চাওয়া উচিত।’
খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি বলেন, একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশনেত্রীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের ভুয়া কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। তার রিপোর্টের মূল কপির সঙ্গে মেডামের জন্ম তারিখ আর তৈরি করা জন্ম তারিখ দেখুন। তাহলে আপনারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন। শায়রুল বলেন, আমাদের অনুরোধ একজন জাতীয় নেত্রীকে নিয়ে বিশেষ করে যখন তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেই সময়ে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর মত প্রকাশ করা সত্যি দুঃখজনক। সবার কাছে অনুরোধ আরও বেশি দ্বায়িত্বশীল আচরণের জন্য।