ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিএনপির স্বপ্ন ‘গৃহবন্দি’

ঢাকার মহাসমাবেশ নিয়ে শঙ্কা

মাহমুদুল হাসান
🕐 ৮:১২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১

 বিএনপির স্বপ্ন ‘গৃহবন্দি’

নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল বিএনপি। একটি রোডম্যাপও হয়েছিল। দল গোছানো, ঘরোয়া আলোচনা, দলীয় পরিকল্পনা সবই চলছিল। এর অংশ হিসেবে রাজপথের কর্মসূচিতে দীর্ঘদিনের বিরতি ভেঙে সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক কর্মসূচিতে অস্তিত্ব জানান দেন বেগম জিয়ার অনুসারীরা। সর্বশেষ প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে বরিশালের সমাবেশ থেকে ‘গণআন্দোলনের’ ঘোষণা দিয়ে সেই পথেই হাঁটছিলেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কিন্তু সেই আশায় এখন ‘গুড়েবালি’। উন্মুক্ত স্থানে বিএনপির যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিএনপিকে ঘরোয়া কর্মসূচি পালনে উৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে বিএনপির বৃহত্তর আন্দোলনের স্বপ্ন ‘গৃহবন্দি’ই থাকছে।

দলীয় সূত্র জানায়, আইজিপির সঙ্গে বৈঠক করায় বিএনপির জন্য এখন হিতেবিপরীত হয়ে গেল। আগে সারা দেশে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও উন্মুক্ত স্থানে বিএনপি সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পেত। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না। ফলে চলতি বছরে যে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে সক্রিয় কর্মসূচি পালনের কৌশল নিয়েছিল বিএনপি, তা সরকারের ‘রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে’ যেন পথ হারাচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর। এটা আমরা উদযাপন করতে চাই। সরকার যদি এটা মাথায় রাখে তাহলে তাদের জন্যই লাভ। মানুষের কথা বন্ধ করে দিলে সেটা কারও জন্যই ভালো হবে না। তিনি বলেন, আমরা উন্মুক্ত পরিবেশেই সভা-সমাবেশ করতে চাই এবং সরকারের সম্মতিক্রমে। এ জন্যই আমরা বারবার সরকারের দারস্থ হচ্ছি। প্রশাসন তো মানুষের বাইরে নয়। মানুষের মনের ভাষা তাদের বুঝতে হবে। স্বাধীনতার অনুষ্ঠান সার্বজনীন। এটা যাতে আমরা সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারি সেই সুযোগ করে দিতে হবে। স্ব^াস্থ্যবিধি মেনেই সমাবেশ বা অনুষ্ঠান করতে চাই।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ১৯ দিনের কর্মসূচির অনুমতি ও নিরাপত্তা চাইতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দফতরে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। পুলিশ প্রধানের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, আইজিপি আশ্বস্ত করার পাশাপাশি কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। তিনি ‘কাইন্ড এনাফ’। তিনি বলেছেন, তাদের দিক থেকে কোনো অসুবিধা নেই। সারা দেশে জানিয়ে দেবেন, যাতে প্রোগ্রামগুলো ঠিকমতো করতে পারি।

ওই দিনই পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি মো. সোহেল রানা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার বিকালে আইজিপির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিএনপি গঠিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির ব্যানা?রে মার্চ মাসে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য কর্মসূচি পালনের অনুমতি এবং অনুষ্ঠান সংক্রান্ত নিরাপত্তা প্রদান বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে আইজিপি প্রতিটি কর্মসূচি এবং অনুষ্ঠানস্থলের জন্য পৃথকভাবে ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার পরামর্শ দেন। অনু?মো?দিত হ?লে ক?রোনা প?রি?স্থি?তি বিবেচনায় ‘ইনডোরে’ অনুষ্ঠান আয়োজন এবং চলমান করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অনুরোধ জানান আই?জি?পি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ১৯ দিনের কর্মসূচির মধ্যে আগামী ৩০ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুবর্ণজয়ন্তী মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দলের একাধিক নেতা জানান, আইজিপির সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের পর উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশে করা নিয়ে পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছেন।

এদিকে আগামীকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনায় মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। কিন্তু সমাবেশের একদিন আগে গতকালও খুলনায় উন্মুক্ত স্থানে সমাবেশের অনুমতি পায়নি দলটি। খুলনায় উন্মুক্ত স্থানে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার কেএমপি কমিশনার বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইনডোরে সমাবেশ করতে চাইলে তার অনুমোদন দেওয়া হবে। বিএনপি শহীদ হাদিস পার্কে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু ওই পার্কটি সিটি করপোরেশনের, যা আমাদের পক্ষে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেন মহাসমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ এ পর্যন্ত ২৪ কর্মীকে আটক করেছে। পুলিশ দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। খুলনার মহাসমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের প্রধান অতিথি থাকার কথা।

নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে ছয় সিটি করপোরেশনে সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। এ ধারাবাহিকতায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান অতিথি করে সমাবেশের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে সমাবেশের কথা থাকলেও সেদিন ঢাকায় বিএনপির বিক্ষোভ-সমাবেশ থাকায় সেটি স্থগিত করা হয়। এছাড়া রাজশাহীতে ১ মার্চ, ঢাকা দক্ষিণে ৪ মার্চ ও উত্তরে ১৩ মার্চ সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপি।

 
Electronic Paper