বিএনপিতে নেতৃত্বের নতুন সমীকরণ
মাহমুদুল হাসান
🕐 ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২১
বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নেতা-কর্মীদের ‘গ্রুপিং রাজনীতির’ ফলে প্রতিনিতিই দলে ‘ঐক্য’ হারাচ্ছে এক সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা দলটি। এমন বাস্তবতায় নতুন সমীকরণে পা ফেলছে দলটির হাইকমান্ড।
বিএনপি সূত্র জানায়, দলের এক দায়িত্বশীল নেতাসহ উচ্চ পর্যায়ের চার নেতার নেতৃত্বে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা হচ্ছে। রাজনৈতিক ও নানা কর্মসূচি গ্রহণ ইস্যুতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন চলে গেছেন ব্যাকফুটে। সাংগঠনিক বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিএনপিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন তিনি। দলীয় কর্মসূচি গ্রহণ, বাস্তবায়ন সবই চলে এখন ওই চার নেতার নির্দেশনায়। এ ছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া, প্রার্থী বাছাই হয় তাদেরই নির্দেশেই।
সূত্র আরও জানায়, খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের হাল ধরেন। এই সুযোগে বিএনপিতে গ্রুপিং রাজনীতি শুরু হয়। এতে ত্যাগী নেতাদের দলে পদায়ণ হচ্ছে না। যে কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোনো জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। বিগত জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপির ব্যাপক ভরাডুবি হয়। উপ-নির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। তবে পরিবারের নানা তৎপরতায় করোনাকালে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় প্রায় নিভৃতেই আছেন। দলের নেতাকর্মীদের থেকেও বিচ্ছিন্ন তিনি।
২০১৯ সালে ২২ এপ্রিল এক সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দল যৌথ নেতৃত্বে চলছে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই সভায় তিনি বলেছিলেন, অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে আমরা দলে যৌথ নেতৃত্ব গড়ে তুলেছি। সেই নেতৃত্বের মধ্য ?দিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। জনগণকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে।
বিএনপির মধ্যম সারির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলে নেতৃত্বের সংকটের কারণেই দাবি আদায়ে বিএনপি রাজপথে কোনো কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছেন না। সরকারের দমন পীড়নে নেতাকর্মীদের কেউ কেউ মনোবল হারিয়ে পর্দার অন্তরালে চলে গেছেন। এ ছাড়া সময়ে সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেউ প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে দল ছাড়ছেন। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকই আবার দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছেন। ফলে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা গ্রুপিং রাজনীতি শিকার হচ্ছে। এতে দলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতি করতে হলে বিরোধী দলের জোরালো ভূমিকা থাকতে হয়। তার কোনো বালাই নেই। সারা পৃথিবীতেই বিরোধী দল মিছিল-মিটিং করে। বাংলাদেশে বিরোধী দলের কোনো ভূমিকাই নেই। বিরোধী দলের ভূমিকা না থাকলে সরকার সঠিক পথে থাকে না। এর জন্য বিএনপিকেই দায়ী। বিএনপিতে নেতৃত্বে সংকট রয়েছে। ফলে তারা রাস্তায় নামতে পারছেন না। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের আধা ঘণ্টার এক মানববন্ধন করে দাবি আদায়ে করা যাবে না। কার্যকর আন্দোলন করতে হলে সব কিছু ভুলে রাজপথে নেমে আসতে হবে। সারা পৃথিবীতে দাবি আদায়ে বিরোধী দল তাই করে থাকে।
এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, সারা পৃথিবীতেই বিরোধী দল (বিএনপি) মিছিল-মিটিং করে। আমাদের দেশের বিরোধী দলের কোনো ভূমিকাই নেই। তিনি বলেন, বিএনপিতে তারেক রহমানই বড় বাধা। বিএনপির ইন্ডিপেন্ডেন্ট বা স্বাধীনভাবে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। তারেক রহমানের ইশারা ছাড়া। তাদের হাত-পা বাধা। আমি বলছিলাম, তারেককে দুই বছরের জন্য অব্যাহতি নেওয়া উচিত। বিএনপির স্থায়ী কমিটি আলোচনা করে দল চালাক। তাহলে জাগরণ তৈরি হবে।
জানাতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান দৈনিক খোলা কাজগকে বলেন, দল পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু পরিকল্পনা থাকে তা সব সময় যে দৃশ্যমান, তা কিন্তু নয়। একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই আমাদের দল পরিচালিত হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয়। এখানে দায়িত্বশীল যারা থাকেন তাদের নির্দেশনা মোতাবেকই দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।